তাফিদার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিলেন ব্রিটিশ আদালত
যুক্তরাজ্যের হাসপাতালের বিছানায় ‘গভীর ঘুমে’ আচ্ছন্ন পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু তাফিদা রাকিব। ‘কোমা’য় চলে যাওয়া তাফিদার বিষয়ে আশা ছেড়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা মত দিয়েছিলেন, তাফিদার জীবনাবসান ঘটানোই শ্রেয়। তবে যুক্তরাজ্যের আদালত রায় দিয়েছেন, তাফিদাকে ইতালি নিয়ে আরও চিকিৎসা করাতে পারবেন শিশুটির মা-বাবা।
বিচারক ম্যাকডোনাল্ড আজ বৃহস্পতিবার এই রায় দেন। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সময় তিনি নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ, মানুষের বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
বাংলাদেশি দম্পতি মোহাম্মদ রাকিব ও সেলিনা রাকিবের পাঁচ বছর বয়সী সন্তান তাফিদা। মস্তিষ্কের জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে। তাফিদার জেগে ওঠার সম্ভাবনা নেই—এমন যুক্তিতে পূর্ব লন্ডনের রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নিয়ে জীবনের অবসান ঘটাতে চায়। কিন্তু তাফিদার মা-বাবা নিজস্ব খরচে মেয়েকে ইতালির জেনোয়ার গ্যাসলিনি চিলড্রেন হসপিটালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। এ নিয়েই যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে শুরু হয় আইনি লড়াই। টানা পাঁচ দিনের শুনানি শেষ আজ বৃহস্পতিবার রায় দেন আদালত।
রায় শেষে আদালতের বাইরে দেওয়া বিবৃতিতে তাফিদার মা সেলিনা রাবিক বলেন, এই রায় তাঁদের পরিবারের জন্য বড় স্বস্তির। এখন দ্রুত তাঁরা মেয়েকে ইতালি নেওয়ার ব্যবস্থা করতে চান। তিনি বলেন, মেয়ের জীবন বাঁচাতে আরও চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তাঁদের আদালতে লড়াই করতে হবে—এমনটি কখনো কল্পনাও করেননি।
তাফিদার পরিবারের পক্ষের আইনজীবী ম্যাথিও কালভারহাউস বলেন, এ ধরনের মামলায় বিজয়ের কিছু নেই। কিন্তু আদালতের রায়ের পর পরিবার তাদের সন্তানের জন্য বিকল্প চিকিৎসার সুযোগ পেল।
তবে রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ক্যারি গোলপ বলেন, বাঁচার আশা না থাকা অন্য শিশুদের ওপরও এই রায়ের প্রভাব পড়বে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা ভাবছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে তাফিদার মা সেলিনা রাকিব বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাল শুক্রবার ‘কোর্ট অব আপিল’-এ তারা আপিল করবে। যে কারণে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় আবারও তাঁদের আদালতে হাজির হতে হবে।