'আমার দেহের প্রতিটি কোষ জাতির জন্য নিবেদিত'
ভূমিধস বিজয়ের পর উচ্ছ্বসিত নরেন্দ্র মোদি তাঁর দলের জয়ের জন্য ভারতের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বলেছেন, এটা ‘গণতন্ত্রের’ বিজয়। বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলকে সত্য প্রমাণ করে গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল থাকা নিশ্চিত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
লোকসভা নির্বাচনের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৫০টি আসনে এগিয়ে। এর আগে ২০১৪ সাল দলটি ২৮২টি আসনে জয় পেয়েছিল। এনডিএ জোট পেয়েছিল ৩৩৬টি আসন। তিন দশকে ভারতের জাতীয় নির্বাচনে গতবার প্রথম কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় ২৭২টি আসন।
এনডিটিভি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, জয়ের পর প্রতিক্রিয়ায় নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এ জয় ‘গণতন্ত্রের’। এ সময় তিনি জনগণের উদ্দেশে তিনটি প্রতিশ্রুতি দেন, ‘অসুস্থ উদ্দেশে কখনো কিছু করব না’, ‘ব্যক্তিগত ভাগ্য উন্নয়নে কখনো কিছু করব না’ এবং ‘দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আমার প্রতিটি রন্ধ্র, দেহের প্রতিটি কোষ বিরামহীন কাজ করে যাবে’।
এবারের নির্বাচনে বিজেপির জয় ২০১৪ সালের ফলকেও ছাড়িয়ে গেছে। গণনা শুরু করার মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে জোটের আসন ৩০০ ছাড়িয়ে যায়। এখনো গণনা চলছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট প্রায় সাড়ে তিন শ আসনে এগিয়ে রয়েছে।
দলের বিজয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা নতুন উপাখ্যান রচনা করেছে। প্রতিটি দলের অন্তত দর্শন করা উচিত।
জাতিপ্রথাভিত্তিক রাজনীতির চর্চায় দেশটি বড় আকারে জড়িয়ে পড়েছে। মোদি বলেন, এখানে শুধু দুটি গোত্র অবশিষ্ট রয়েছে। এক, যারা দরিদ্র; দুই, যারা দারিদ্র্য নির্মূল করে।
উত্তর প্রদেশে দশকের পর দশক ধরে জাতিপ্রথা রাজনীতির মূল বিষয় হয়ে রয়েছে। সেখানের ভোটাররা বিজেপিকে দ্বিতীয়বারের মতো বড় ধরনের জয় এনে দিতে যাচ্ছে। ওই রাজ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি এবং এর জোট আপনা দল ৮০টি আসনের মধ্যে ৭৩টিতে জয় পেয়েছিল। এবার মায়াবতী এবং অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির বড় জোটের কাছে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে বিজেপি। এরপরও বিজেপি সেখানে ৬১ আসনে এগিয়ে রয়েছে। মায়াবতী–যাদবের জোট পিছিয়ে থাকা প্রান্তিক গোত্র ও মুসলিমদের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে ২০টি বা এর কম আসনে জয় পেতে যাচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিল্লিতে দলের সদর দপ্তরে শত শত কর্মী–সমর্থকের উদ্দেশে মোদি বলেন, ‘আমরা জনগণের সিদ্ধান্ত জানতে তাদের কাছে গিয়েছিলাম। আজ কোটি মানুষ এই “ফকির কি ঝোলি” (গরিবের থলে) ভরে দিয়েছে। এটা গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ঘটনা।’
গরিবের থলের বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন কংগ্রেসকে খোঁচা দিতে। দলের নতুন সদস্য শত্রুঘ্ন সিনহা প্রধানমন্ত্রীকে ব্যঙ্গ করে সম্প্রতি বলেছিলেন, ‘এখন প্রধানমন্ত্রী মোদির সময় হয়েছে তাঁর থলে তুলে নেওয়া এবং চলে যাওয়া।’ অভিনেতা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া শত্রুঘ্ন সিনহা মোদির একটি পুরোনো বক্তব্যকে তুলে এনে এ মন্তব্য করেছিলেন।
২০১৬ সালে রাতারাতি বড় নোট (পাঁচ শ ও এক হাজার রুপির) নিষিদ্ধ করে দেয় মোদি সরকার। ঘটনাটি নিয়ে বিরোধী দলগুলোর কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ওই সময় এক সমাবেশে মোদি বলেছিলেন, ‘আমার বিরোধীরা আমার কী করতে পারে? আমি ফকির। আমি আমার ঝোলা তুলে নেব এবং চলে যাব।’