জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর যুদ্ধে হারছে মানুষ?

আশাবাদীরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনা মানুষের নাগালের মধ্যেই আছে। তবে তার মানে এই নয় যে রাতারাতি তা করা সম্ভব হবে। এই কার্বন নিঃসরণ কমানোর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত শিল্পায়নের বিষয়টি। ছবি: রয়টার্স
আশাবাদীরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনা মানুষের নাগালের মধ্যেই আছে। তবে তার মানে এই নয় যে রাতারাতি তা করা সম্ভব হবে। এই কার্বন নিঃসরণ কমানোর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত শিল্পায়নের বিষয়টি। ছবি: রয়টার্স

জাপানের অন্যতম ব্যস্ত শহর টোকিও। চলতি বছরের আগ পর্যন্ত এ শহরের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ এবারের গ্রীষ্মে লু হাওয়া বয়েছে টোকিওতে। প্রথমবারের মতো টোকিওর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে! শীতপ্রধান দেশগুলোতে এমন ঘাম ঝরানো গরম দেখা গেছে পুরো গ্রীষ্মেই। ধীরে ধীরে পৃথিবীজুড়ে আবহাওয়া চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। তবে কি মানুষের যথেচ্ছাচারের জবাব দিতে শুরু করেছে প্রকৃতি? বিশেষজ্ঞদের উত্তর, হ্যাঁ।

২০১৮ সালে বিশ্বজুড়েই গরমের তীব্রতা বহুগুণে বেড়েছে। সিয়াটল থেকে সাইবেরিয়া, সর্বত্রই এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রচণ্ড তাপে মোট ১৮টি দাবানল হয়েছে। এর মধ্যে একটিকে রাজ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী দাবানল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সম্প্রতি এথেন্সে উপকূলীয় এলাকায় দাবানলে ৯১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। জাপানে দাবদাহে এখনো পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে মোট ১২৫ জনের।

তবে পৃথিবীজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি একেবারে হুট করে হয়নি। অনেক দিন ধরেই পরিবেশবিজ্ঞানীরা এমন আশঙ্কার কথা শুনিয়ে আসছিলেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের চেয়ে বর্তমানে বিশ্বের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর ফলাফল এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। নিখুঁতভাবে বললে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এত দিন আলোচনার টেবিলে ছিল, এবার মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব রাখছে।

তিন বছর আগে বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে ফ্রান্সের প্যারিসে চুক্তি করেন। চুক্তিতে শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের তুলনায় বর্তমানের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। একই সঙ্গে শিল্পবিপ্লবের কারণে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে তিন বছর পর মূল্যায়ন করলে দেখা যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রাগুলো শুধু চুক্তির কাগজেই থেকে গেছে, বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণের পরিমাণ গত কয়েক বছরের তুলনায় বেড়ে গেছে। চার বছর পর ২০১৭ সালে ফের কয়লার চাহিদা বেড়ে যায়। আর কয়লা পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করলে কার্বন নিঃসরণ কমবে কীভাবে?

ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ভর্তুকির পরিমাণ কমে গেছে। বিশেষ করে সৌর ও বায়ুশক্তি উৎপাদনে বিনিয়োগ থমকে গেছে। পরিবেশবান্ধব পরমাণু শক্তি উৎপাদন ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে তা ক্রমে অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বলা হচ্ছে, কার্বন নিঃসরণ কমানোয় এমন পদক্ষেপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর যুদ্ধে বিজিত পক্ষে ঠাঁই পাচ্ছে মানুষ।

২০০৬ থেকে ২০১৬—এই ১০ বছরে এশিয়ায় কয়লার বার্ষিক ব্যবহার ৩ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী কয়লার চাহিদা ফের বেড়ে যায়। ছবিতে চীনের একটি কয়লাখনির দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ছবি: এএফপি
২০০৬ থেকে ২০১৬—এই ১০ বছরে এশিয়ায় কয়লার বার্ষিক ব্যবহার ৩ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী কয়লার চাহিদা ফের বেড়ে যায়। ছবিতে চীনের একটি কয়লাখনির দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ছবি: এএফপি


বর্তমান পরিস্থিতি কেমন?
জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোয় মানুষ কোনো উন্নতিই করেনি, তা বলা যাবে না। সৌর প্যানেল, বায়ুকল এবং কম কার্বন নিঃসরণ করা অন্যান্য প্রযুক্তি এখন সাশ্রয়ী ও আরও উন্নত হয়েছে। এ কারণে তুলনামূলকভাবে এসব প্রযুক্তির ব্যবহারও বেড়েছে। গত বছর সারা বিশ্বে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি বিক্রির সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। কিছু কিছু রৌদ্রোজ্জ্বল ও ঝোড়ো আবহাওয়াপ্রবণ অঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদনের খরচ কয়লার চেয়েও কমে গেছে!

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্ববাসীর মধ্যে উৎকণ্ঠাও বেড়েছে বেশ। ইকোনমিস্ট বলছে, গত বছর ৩৮টি দেশে একটি জরিপ চালানো হয়। এতে অংশগ্রহণকারীদের ৬১ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনকে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখছে। এর চেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে শুধু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পৃথিবীর জন্য বিপর্যয় হিসেবে দেখা দেবে। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর লড়াইয়ে প্যারিস চুক্তিকে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বলে বিবেচনা করা হচ্ছিল। আর এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্যারিস চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার হঠকারী সিদ্ধান্ত। তবে পুরো যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একমত নয়। দেশটির অনেক নাগরিকই জানিয়েছেন, ট্রাম্প না থাকলেও প্যারিস চুক্তির পাশে আছেন তাঁরা।

শুধু আমেরিকা নয়, চীন-জাপান-ভারতের মতো জনবহুল দেশগুলোতেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। এসব দেশের নাগরিকেরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে দেশগুলোর সরকারও এখন নড়েচড়ে বসেছে। বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা চলছে।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের তুলনায় দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তবে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বরফ সম্পূর্ণ গলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ওই এলাকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে অনেক দেশ তলিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। ছবি: রয়টার্স
বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের তুলনায় দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তবে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বরফ সম্পূর্ণ গলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ওই এলাকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে অনেক দেশ তলিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। ছবি: রয়টার্স


জলবায়ু পরিবর্তনে কী হারাবে মানুষ?
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর বুক থেকে কিছু পরিচিত জিনিস হারিয়ে যেতে পারে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তবে চকলেট থেকে অ্যান্টার্কটিকা—সবই বিপন্ন হবে।

স্টকহোম রিসাইলেন্স সেন্টারের পরিবেশবিজ্ঞানী সারাহ করনেল বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্র বৃদ্ধিতে চকলেটের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। যদিও চকলেট উৎপাদনের জন্য গ্রীষ্মকাল উপযুক্ত সময়, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন বলতে শুধু তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে বোঝায় না। এর সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীজুড়ে আবহাওয়ার ধরন অনিশ্চিত ও বিপরীতধর্মী হয়ে উঠবে। ফলে মাটিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

অন্যদিকে বিশ্বের উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বরফ সম্পূর্ণ গলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে যে শুধু ওই এলাকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে, তা নয়। বরং পুরো পৃথিবীর আবহাওয়াগত সাম্যাবস্থা নষ্ট হবে। এর সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে অনেক দেশের তলিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মালদ্বীপের মতো অনেক দেশ সমুদ্রগর্ভে চলে যাবে বলে এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সে ক্ষেত্রে এসব অঞ্চলের অধিবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যা অর্থনৈতিক-সামাজিকসহ নানামাত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো বন ধ্বংস। গাছপালার পরিমাণ কমে যাওয়ায় পৃথিবীর পানিচক্রে বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। পরিবেশবিজ্ঞানী সারাহ করনেল বলছেন, এতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাব্য সময় এবং পরিমাণ অনিশ্চিত হচ্ছে। গাছপালা কমে যাওয়ায় পৃথিবীর সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বন্য প্রাণীর হাজারো প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে চকলেটের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। রাংতা খুলে এমন বাহারি চকলেট মুখে পোরার সুযোগ তখন আর মিলবে না। ছবি: এএফপি
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে চকলেটের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। রাংতা খুলে এমন বাহারি চকলেট মুখে পোরার সুযোগ তখন আর মিলবে না। ছবি: এএফপি


কার্বন নিঃসরণ কমছে না কেন?
আশাবাদীরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনা মানুষের নাগালের মধ্যেই আছে। তবে তার মানে এই নয় যে রাতারাতি তা করা সম্ভব হবে। এই কার্বন নিঃসরণ কমানোর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত শিল্পায়নের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে হয় শিল্পায়নের হার কমাতে হবে, নতুবা শিল্পের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য বিকল্পগুলো বেছে নিতে হবে। কিন্তু বিকল্প প্রক্রিয়া বেশ ব্যয়বহুল।

ইকোনমিস্ট এক বিশ্লেষণে বলেছে, কার্বন নিঃসরণের হার না কমার বেশ কিছু কারণ আছে। প্রথমত, জ্বালানি বা শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা। বিশেষ করে উন্নয়নশীল এশিয়া মহাদেশে এই চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ২০০৬-২০১৬, এই ১০ বছরে এশিয়ায় জ্বালানির ব্যবহার ৪০ শতাংশ বেড়েছে। চাহিদা যখন বেশি থাকে, তখন তা পূরণের তাৎক্ষণিক চেষ্টা করা খুবই স্বাভাবিক। ঠিক এ কারণেই এশিয়ায় কয়লার বার্ষিক ব্যবহার ৩ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং তেলের ব্যবহার বেড়েছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে সহজে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। খরচও তুলনামূলক কম। সুতরাং চাহিদা যে খাতে বেশি থাকবে, সেই খাতে বিনিয়োগও বাড়তেই থাকবে।

দ্বিতীয়ত, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক বড় বড় কোম্পানি জড়িত আছে। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও প্রভাব রাখে। ফলে এরা কখনোই নিজেদের বারোটা বাজিয়ে পরিবেশ রক্ষার মতো মহৎ কাজ করতে আগ্রহী থাকে না। কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে এই অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তৃতীয়ত, শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি বাদ দিয়ে ‘গ্রিন টেকনোলজি’ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যা রয়েই গেছে। স্টিল, সিমেন্ট, কৃষিকাজ, পরিবহন এবং অন্যান্য নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্বন নিঃসরণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। জীবাশ্ম জ্বালানি বা পেট্রল, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা প্রভৃতি দিয়ে শক্তি উৎপাদনের যে প্রযুক্তি বর্তমানে আছে, সেগুলোর বিকল্প প্রযুক্তি এখনো উৎকর্ষের শীর্ষে পৌঁছায়নি। এ নিয়ে কাজ চলছে। তবে তাতেও পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব রয়ে গেছে।

২০১৮ সালে বিশ্বজুড়েই গরমের তীব্রতা বহু গুণে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রচণ্ড তাপে মোট ১৮টি দাবানল হয়েছে। এর মধ্যে একটিকে রাজ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী দাবানল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
২০১৮ সালে বিশ্বজুড়েই গরমের তীব্রতা বহু গুণে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রচণ্ড তাপে মোট ১৮টি দাবানল হয়েছে। এর মধ্যে একটিকে রাজ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী দাবানল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স


রক্ষার উপায় কী?
প্রায় ৩০ বছর আগে থেকে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর জন্য সতর্কতা জানিয়ে আসছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। এত বছর পর এবারই তোড়জোড় বেশি দেখা যাচ্ছে। কারণ, গরমের আঁচ গায়ে লাগছে যে!

গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক সাইমন লুইস বলেন, বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা প্রয়োজন। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর বিষয়টি ক্ষমতা, অর্থ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। সেই কারণে এ নিয়ে রাজনীতির সর্বস্তরে আলোচনা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। তখন একে কাগুজে চুক্তি থেকে বাস্তবায়নের পথে নেওয়া যাবে।

ইকোনমিস্ট বলছে, ৭০টি দেশ বা এলাকা বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের এক-পঞ্চমাংশের জন্য দায়ী। পশ্চিমা দেশগুলো শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ছড়িয়েই আজ ধনী হয়েছে। সুতরাং প্যারিস চুক্তির প্রতি তাদের একটু বেশিই দায়বদ্ধ থাকা উচিত।

প্রযুক্তিবিদেরা বর্তমানে শিল্পকারখানার নানা খাতে কার্বনমুক্ত প্রযুক্তি প্রয়োগের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এটি অসম্ভব কোনো কাজও নয়। তবে হ্যাঁ, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করলে সাময়িক কিছু আর্থিক ক্ষতি হবেই। কিন্তু এর বদলে যা পাওয়া যাবে, তার দাম আর্থিক মূল্যে মাপা যাবে না। এ ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদেরই এককাট্টা হতে হবে। এই একটি ইস্যুতেই পুরো বিশ্বের রাজনীতি এক মঞ্চে সহাবস্থান করতে পারে। সেটি সম্ভব না হলে পৃথিবীতে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।