হং নদীর নারী মাঝিরা বইঠা বায় পা দিয়ে

টং হ্যাংয়ের মতো হং নদীর মাঝিরা নৌকা চালান পা দিয়ে
লেখক

আমি তখন পুরোদস্তুর শিক্ষক। শিক্ষকতার সুবাদেই ভিয়েতনামে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তা হিসেবে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম ২০১৭ সালে। সম্মেলনের দুই দিনের সঙ্গে আরও আট দিন যোগ করে নিয়েছিলাম ঘোরার জন্য। অনেকটা রথ দেখতে গিয়ে কলা বেচার মতো ব্যাপার!

সেই ১০ দিনে ভিয়েতনামের চারটি শহর ভ্রমণ করেছি। ভিয়েতনামের প্রথম রাজধানী ও প্রাচীন শহর হোয়া লু ঘুরে দেখার পর রওনা করেছিলাম নিং বিং প্রদেশেরই রেড রিভারে নৌকায় ঘোরার উদ্দেশ্যে। রেড রিভারকে ভিয়েতনামের মানুষ বলে হং নদী। এই নদীতে ঘোরার জন্য চার থেকে পাঁচটি ঘাট আছে। দুটি ঘাট বেশ জনপ্রিয়—একটির নাম টেম কক, অন্যটি ট্রে এন।

হাং নদীর দুপাশে চুনাপাথরের পাহাড়, মাঝেমধ্যে ধানখেত
লেখক

আমি নৌকায় উঠেছিলাম টেম কক ঘাট থেকে। ঘাটে তখন অনেক পর্যটক দেখতে পেলাম। কেউ টিকিটের সারিতে দাঁড়িয়ে, কেউ নৌকায় ওঠার জন্য লাইফ জ্যাকেট পরে নিচ্ছে, কেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত। সব মিলিয়ে ঘাটে একটা উৎসবের আমেজ। তবে সবই হচ্ছে শৃঙ্খলার মধ্যে। ঘাটে নৌকা বাঁধা রয়েছে, আমি লাইফ জ্যাকেট পরতে পরতে লক্ষ করলাম সেখানে মাঝিদের প্রায় সবাই নারী।

দেখা পেলাম এক কিশোরী মাঝির
লেখক

এবার নৌকায় চড়ার পালা। একটি নৌকাতে দুই থেকে তিনজন যাত্রীর বেশি নেওয়ার অনুমতি নেই। আমার নৌকায় আমি, আমার গাইড আর নৌকার নারী চালক রওনা হলাম। এবার দ্বিগুণ অবাক হওয়ার পালা। কারণ, মাঝি বইঠা বাইছে পা দিয়ে। নৌকার এক প্রান্তে কায়দা করে মাঝির আসন পাতা। আসনে বসেই দুই পায়ে বেশ নির্ভার বইঠা বেয়ে চলেন। কিন্তু হাত ছেড়ে পা কেন? সেখানকার কেউ অবশ্য সদুত্তর দিতে পারল না। যদিও কেউ কেউ বলল, পর্যটক আকর্ষণের জন্যই এমনটা করে।

নদীর দুই ধারে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ছোট ছোট আবাসন
লেখক

দুই পায়ের কারিকুরিতে নৌকা এগিয়ে চলছে। আমরা দেখছি নদীর দুপাশে চুনাপাথরের পাহাড়, মাঝেমধ্যে ধানখেত। কিছু জায়গায় চুনাপাথরের পাহাড় এমনভাবে এসে পানিতে মিশেছে যে সেখানে একটি সরু গেটের মতো সৃষ্টি হয়েছে। তার মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছে কোনো হরর মুভির দৃশ্য। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখতে পেলাম নদীর দুই পাশে পর্যটকদের জন্য আবাসন, ছোট ছোট রিসোর্ট। কিন্তু সেগুলো তৈরি করা হয়েছে প্রকৃতিকে নষ্ট না করে। সেই হোটেল রুমের বারান্দায় দাঁড়ানো পর্যটকেরা হাত উঁচিয়ে অভিবাদন জানাল আমাদের। আমার গাইড বলল, এসব আবাসনে কোনো কোনো পর্যটক মাসব্যাপীও থাকে। উপভোগ করে প্রতিদিনের রেড রিভার।

চুনাপাথরের পাহাড় মিশেছে নদীতে
লেখক

নৌকাভ্রমণ দুই ঘণ্টার মতো হলো। মনে হচ্ছিল খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল। ফেরার সময় মনে মনে ভাবছিলাম, আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পে নদীকে আমরা আসলে কবে থেকে কাজে লাগাতে পারব!