কানের কাছে মশার প্যানপ্যানানি যে কতটা বিরক্তিকর, তা আর বিতং করে বলার কিছু নেই। কিন্তু রক্তখেকো এই পতঙ্গ কেন মানুষের কানের কাছে এসে এমন বিরক্তিকর শব্দ করে?
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল রিহলে বলেন, ‘মশার যে শব্দ আমরা শুনি, তা মূলত ওদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ। এই শব্দ একেবারেই মৃদু। তাই মশা যখন কেবল আমাদের কানের কাছে আসে, তখনই তা শোনা যায়।’
সাধারণত স্ত্রী মশার ডানার শব্দই আমরা শুনতে পাই। কারণ, পুরুষ ও স্ত্রী মশার জীবনধারণে বড় ধরনের পার্থক্য আছে। পুরুষ মশা সাধারণত ফুলের মধু পান করে, মানুষের রক্তের প্রতি কোনো ঝোঁক নেই। কিন্তু মিলনের পর ডিম্বাণু উৎপাদনের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত শক্তির জন্য স্ত্রী মশাকে রক্ত পান করতে হয়। প্রাকৃতিকভাবেই স্ত্রী মশারা মানুষকে সহজে চিহ্নিত করতে পারে।
অধ্যাপক রিহলে বলেন, ‘দূর থেকেই স্ত্রী মশা মানুষের নিঃসৃত কার্বন ডাই–অক্সাইড শনাক্ত করতে পারে। এই কার্বন ডাই–অক্সাইড দিয়েই স্ত্রী মশারা তাদের লক্ষ্য ঠিক করে।’
সোজা কথায় বললে, মশারা আমাদের মাথার পাশে বেশি ঘুরঘুর করে; কারণ, আমরা শরীরের এই অংশ দিয়েই কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমন করি।
মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর শরীরের রক্ত তাদের জন্য উপযোগী কি না, সেটি স্ত্রী মশারা তাদের পায়ে থাকা টেস্ট সেন্সর দিয়ে যাচাই করে। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ও’ গ্রুপের রক্ত মশাদের বেশি পছন্দ। তবে অধ্যাপক রিহলে তেমনটা পুরোপুরি মানতে রাজি নন।
তাঁর মতে, এখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জেনেটিকস এবং ডায়েটের মতো বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো কোনো মানুষের শরীরের গন্ধের ওপরও নির্ভর করে কোন মশা তাদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হবে, আর কোন মশা কম আকৃষ্ট হবে। যেসব পুরুষের ত্বকে কম বৈচিত্র্যময় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকে, স্ত্রী মশারা তাদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়।
আবার যাদের ত্বকের রং গাঢ়, তাদের প্রতিও স্ত্রী মশারা বেশি আকৃষ্ট হয়। স্ত্রী মশা প্রতি সেকেন্ড পাঁচ শ বারের মতো ডানা ঝাপটায় এবং এই শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি ৪৫০-৫০০ হার্টজ। পুরুষ মশার শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি কিন্তু স্ত্রী মশার চেয়েও বেশি। মশার এই প্যানপ্যান শব্দ আমাদের কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর মনে হলেও পুরুষ মশার কাছে সুমধুর! মিলনের জন্য যখন পুরুষ মশা স্ত্রী মশার খোঁজে থাকে, তখন তারা এই শব্দ শুনেই সঙ্গী বাছাই করে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স