বাংলাদেশ থেকে চিন্তাশক্তি আমদানি করবে যুক্তরাষ্ট্র?

শিরোনামে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এমনি এমনি দিইনি। কাউকে আকৃষ্ট করার ইচ্ছা আমার নেই। ইহা এ অধমের জিজ্ঞাসা, সলজ্জ প্রশ্ন। উত্তর হ্যাঁ–বাচক হলে, আমিও ইতিবাচক হতে চাই। চিন্তা রপ্তানিকারক হওয়ার আগ্রহ আমার আছে। আগ্রহী হওয়ার মূল কারণ এতে অর্থ বিনিয়োগ করার ক্ষেত্র খুবই কম, অর্থ হাপিস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও তাই নেই বললেই চলে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কি আমাকে মেনে নেবে?

যেকোনো ফরম্যাটে রপ্তানিকারক হওয়ার এই সুবর্ণ ভাবনা আমার মাথায় এল সাম্প্রতিক এক বক্তব্য শুনে। এ দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অতিসম্প্রতি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যা আজ চিন্তা করে, আমেরিকা করে তিন মাস পর।’ এ দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর ভিডিওচিত্রটিও ইউটিউবে আছে। অনেকের মতো আমিও তা দেখেছি। আর তাতেই আমার মাথায় দুর্দান্ত এক ‘চিন্তা’ খেলে গেল। যুক্তরাষ্ট্র যদি এখন হীনম্মন্যতায় ভুগে বাংলাদেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিন্তাশক্তি ধার করতে শুরু করে, তবে কেমন হবে?

পাঠক, মনে রাখবেন, যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু আজ এটা ভাবছে না। সূত্র অনুযায়ী, আসলে তারা ভাবতেই পারছে না। তারা ভাবতে পারবে আরও তিন মাস পর। সে কারণেই আমি এখন ভাবতে পারছি। কিন্তু এই তিন মাস প্রস্তুতির জন্য ভালো সময়। এর মধ্যে যদি কোচিং-টোচিং করে নিজেদের একেবারে ‘রেডি’ করে ফেলা যায়, তবে আর ঠেকায় কে? চিন্তার বিপ্লব ঘটে যাবে মার্কিন মুলুকে। আর তা আনব আমরাই।

দেখুন, বাংলাদেশ যে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রবর্তী, তা কিন্তু অনেক দিন ধরেই আলোচনায় আছে। অন্তত স্থানীয়ভাবে এ নিয়ে চর্চার শেষ নেই। এর আগে গত নভেম্বরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জানিয়েছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের কাছে শেখার আছে।’ তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ৪ থেকে ৫ দিনে ভোট গুনতে পারে না। আমরা ৪ থেকে ৫ মিনিটে গুনে ফেলি। যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের কাছে শেখার আছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ভালো দিকগুলো থেকে আমাদেরও শেখার আছে।’

একবার ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, প্লিজ। সহযোগিতার কথা বলে আরেকজনের ভোট দিয়ে দেওয়ার উদাহরণ কোথায় দেখা গেছে? কোথায় ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের মতো মৌলিক ভাবনার বিকাশ দেখা গেছে? কোথায় ভোট গুনতে ৪ থেকে ৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে না?

সেবার আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ‘শিক্ষক’ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলাম। এবার ঠিক একইভাবে ‘চিন্তা’ করার দিক থেকে এক মাস নয়, দুই মাস নয়, পাক্কা তিনটি মাস এগিয়ে থাকার সুখবর পেয়ে গেলাম। সুতরাং এখনই সময় আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার। যদি আমরা তিন মাস আগে থেকেই চিন্তা রপ্তানি করার পরিকল্পনা নিতে পারি, তবে তিন মাস পর যখন মার্কিন মুলুক এ নিয়ে ভাবতে শুরু করবে এবং তারও কিছুদিন পর টেন্ডার আহ্বান করবে, তখন আমরা ছাড়া আর কেউ তাতে অংশই নেওয়ার কথা ভাবতে পারবে না। আর নিজস্ব অভিজ্ঞতাজাত জ্ঞান বলে, টেন্ডারে একমাত্র প্রতিযোগী হওয়ার কৌশল আমাদের দাঁড়ি-কমাসহ মুখস্থ। আশা করি, তাতে কেউ আমাদের টেক্কা দিতে পারবে না।

এরপর আমাদের নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। এ জায়গায়ও আশার আলো ছাড়া, হারিকেন বা হ্যাজাক বাতির আলো দেখার সম্ভাবনা খুব কম। কেন, বলছি। একবার ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, প্লিজ। সহযোগিতার কথা বলে আরেকজনের ভোট দিয়ে দেওয়ার উদাহরণ কোথায় দেখা গেছে? কোথায় ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের মতো মৌলিক ভাবনার বিকাশ দেখা গেছে? কোথায় ভোট গুনতে ৪ থেকে ৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে না? কোথায় সংযোগ সড়ক না বানিয়ে আগে সেতু বানানো হয় এবং তা প্রদর্শনীতে সাজিয়ে রাখা শিল্পকর্মের মতো সবার দেখার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়?

কোথায়? কোথায়? কোথায়?

প্রশ্নের প্রতিধ্বনির মতো, উত্তরেরও প্রতিধ্বনি হবে। প্রশ্ন যেমন সহজ, উত্তরও তেমনি জানা। সুতরাং চিন্তার ক্ষেত্রে আমাদের হারানোর সুযোগ খুব একটা নেই।

দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নানা কথায় আমাদের সম্ভাবনা জানিয়ে পথ দেখিয়ে দেওয়ার কাজটি করেছেন। সেই পথে আমাদের দৌড়াতে হবে। খালি পায়ে দৌড়াবেন, নাকি কেডস পরে—তা যার যার ব্যক্তিগত পছন্দ।

তবে হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা দরকার। চিন্তা রপ্তানির ক্ষেত্রে যদি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যায়, তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বমঞ্চে অচিরেই আমরা চিন্তা রপ্তানির মনোপলি বাজার সৃষ্টি করতে সক্ষম হব।

এখন প্রয়োজন, শুধু স্বপ্ন দেখা ও তা বাস্তবে রূপ দেওয়া। স্বপ্নে দোষের কিছু নেই। সুতরাং, ঘুম বাদ দিন, স্বপ্নে বিভোর হয়ে যান। একদিন সফলতার বাঁশবাগানের চাবিকাঠি আপনার হাতেই উঠবে।