বৃষ্টির গানে গানে হেমন্ত দিন
‘ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস, আজকে হলো সাথি/ সাত মহলা স্বপ্নপুরীর নিভলো হাজার বাতি’। বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডারে আজ আষাঢ়ের দ্বিতীয় দিন। আষাঢ়ের আগমন যেন ভালোভাবে বোঝাতেই জোর একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। অনেকের প্লেলিস্টে বাজছে বৃষ্টির গান। এই আষাঢ়ের আজকের দিনে বৃষ্টির গান যেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। কারণ, আজ ১৬ জুন, বাংলা গানের অন্যতম সেরা গায়ক, সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন। রোমান্টিক গানের জন্য বিশেষ খ্যাতি হেমন্তর। আর বার্ষায় রোমান্টিকতা যে আরও জমে, সেটা তো বলাই বাহুল্য। ১৯৫০, ১৯৬০, ১৯৭০ আর ১৯৮০ দশকের সিনেমা হোক বা আধুনিক—গানে বর্ষার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ক্ষেত্রে হেমন্তের নাম আসবে প্রথম দিকেই। কিংবদন্তি এই গায়ক-সুরকারের বৃষ্টির ১৫টি গান নিয়ে এই আয়োজন
ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস
‘শাপমোচন’ সিনেমার গান। গানের দৃশ্যে দেখা যায় উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, পাহাড়ি স্যান্যাল, ছবি বিশ্বাসকে। সঙ্গে দরাজ গলায় হেমন্তর এই। বিমল ঘোষের লেখায় অসামান্য সুর করেছিলেন হেমন্ত নিজেই। কেবল এ গানটিই নয়, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৫৫ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটির সব কটি গানেই সুর করেছিলেন হেমন্ত।
আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম
সলিল চৌধুরী-হেমন্ত মুখোপাধ্যায় জুটির একটি অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। ‘ছায়ানিকা মনে রাখা গান’ অ্যালবামের গানটি লেখা ও সুর সলিলের। হেমন্তের কণ্ঠে গাওয়া এই গান পরে নতুন সংগীতায়োজনের শ্রীকান্ত আচার্য থেকে কত শিল্পী যে গেয়েছেন ইয়ত্তা নেই।
এই মেঘলা দিনে একলা
এই গান শোনেননি এমন বৃষ্টিপ্রেমী সংগীতভক্ত মেলা ভার। অনায়াসে সবচেয়ে বেশি রিমেক হওয়া গানের তালিকায় ঢুকে যাবে গানটি। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা গানটির সুরকার ও গায়ক ছিলেন হেমন্ত। ‘শেষ পর্যন্ত’ সিনেমায় ব্যবহৃত হয় গানটি ।
এমন একটা ঝড় উঠুক
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই প্রয়াত হয়েছেন বাংলা গানের অন্যতম সুরকার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁর সুরে হেমন্তের কণ্ঠে গাওয়া ‘এমন একটা ঝড় উঠুক’ এখনো বাঙালির মনে পড়ে বারবার। ‘অল টাইম গ্রেটস অভিজিৎ ব্যানার্জি ভলিউম ২’-এর গানটি সুরকার সঙ্গে অভিজিৎ নিজেই লিখেছিলেন।
ওঠো মেঘ তুমি উড়ে যাও
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এই বৃষ্টির গানটি তুলনামূলক কম পরিচিত। পুলক ব্যানার্জির লেখা, হেমন্ত গানটি গেয়েছিলেন নিজের সুরেই। ‘কত রাগিণীর ভুল ভাঙাতে’ অ্যালবামের গানটি অবশ্য হেমন্ত-ভক্তদের ভীষণ প্রিয়।
উদাসী হাওয়া দাও বলে দাও
‘আরও এক যুগ’ সিনেমার গান। তবে সিনেমাটি কোনো এক কারণে মুক্তি পায়নি। পরে আলাদাভাবে গানটি প্রকাশ করা হয়। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা, প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের সুরে গানটি গেয়েছিলেন হেমন্ত।
সে দিন নিশীথে
রোমান্টিক সংগীতপ্রেমীদের মনে এখনো দাগ কেটে রেখেছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ে এই গান। যা স্থান পেয়েছে ‘আমি যে তোমরাই—রোমান্টিক হিটস (হেমন্ত মুখার্জি)’ অ্যালবামে। সুরকার কমল দাশ গুপ্ত, গীতিকার সুবোধ পুরকায়স্থ।
একই ঝড়ের দোলায় দোলে
১৯৬০ দশকের অন্যতম গীতিকার মিল্টু ঘোষের লেখায় গানটিতে সুর করেছিলেন অমল মুখার্জি।
ওই মেঘ গুড় গুড় ডাক শোনা যায়
পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর মুখোপাধ্যায় ও হেমন্ত জুটির আরও একটি জনপ্রিয় গান। যা পরে স্থান পেয়েছে ‘আর এক যুগ’ অ্যালবামে।
আমার আকাশ মেঘলা
১৯৫৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘শেষ পরিচয়’ সিনেমার গান। বিমল চন্দ্র ঘোষের লেখা সিনেমার গানগুলোর সংগীত পরিচালনা করেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
তুমি এলে অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এল
বৃষ্টি নিয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের আরও একটি জনপ্রিয় গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সেরা হিট গানের অ্যালবামে স্থান পাওয়া গানটির গীতিকার মুকুল দত্ত, সুরকার নচিকেতা ঘোষ।
যখন মনের মেঘ বৃষ্টি ঝরায়
মিল্টু ঘোষের কথায় বেশ কয়েকটি গান করেছেন হেমন্ত। এটি তার একটি। নিজের গাওয়া এই গানটিও সুর করেন হেমন্ত নিজেই।
টাপুর টুপুর বৃষ্টি ঝরে
পর্দায় সুমিত ভঞ্জ ও সন্ধ্যা রায়ের রসায়ন, সঙ্গে হেমন্তের কণ্ঠে এই গান। ব্যস, জমে যেতে আর কী লাগে।
চঞ্চল মন আনমনা হয় যেই তার ছোঁয়া লাগে
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে জনপ্রিয় গানটি ব্যবহার করা হয় ‘অদ্বিতীয়’ সিনেমায়। গানটির সুরও করেন হেমন্ত।
হোক না আকাশ মেঘলা
‘হোক না আকাশ মেলা, আসুক না ঝড় বাদলা/ তবুও তুই সমুখপানে, চল রে না হই একলা’ গানটি ব্যবহার করা হয় ‘সূর্য তোরণ’ সিনেমায়। ১৯৫৮ সালের ছবিটির সব কটি গানই সুর করেন হেমন্ত। কথা লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।