প্লেব্যাক করেছিলেন রাজ্জাক, বাদ যাননি এই নায়কেরাও
সিনেমায় আগে নায়কেরাই গাইতেন। এই উপমহাদেশের সিনেমার প্রাথমিক যুগে সেটাই হতো। আজকের মতো কেবল পর্দায় ঠোঁট মেলাতেন না। নায়ক হওয়ার প্রধান শর্তই ছিল গায়ক হওয়া। বাংলাদেশের সিনেমা যখন যাত্রা শুরু করে, তত দিনে প্লেব্যাক এসে গিয়েছিল। গান গাওয়ার ঝক্কি থেকে নায়কদের মুক্তিও মিলেছিল। এ জন্যই আমরা পেয়েছিলাম মাহমুদুন্নবী, বশির আহমেদ, আবদুল জব্বার, খুরশিদ আলমের মতো কালজয়ী শিল্পীদের। আর পর্দায় দেখেছি রাজ্জাককে, তাঁদের গানে ঠোঁট মিলিয়ে খ্যাতি কুড়াতে।
প্লেব্যাক না থাকলে কিন্তু এই শিল্পীদের দেখা পাওয়া যেত না। বরং রাজ্জাককেই গাইতে হতো গান। তবে রাজ্জাককে কিন্তু একেবারে ছেড়ে দেননি নির্মাতারা! অনুরোধের ঢেকি গিলে তাঁকেও গাইতে হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অগ্নিশিখা’ ছবিতে ‘দুনিয়ার চক্কর কার আছে কোথা ঘর’ গানটি নায়ক রাজ্জাকের গাওয়া। সত্য সাহার সুরে গানের কথা লিখেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন আজিজুর রহমান। নায়কেরা প্লেব্যাক করলে সেটা হতো গরম খবর। প্রিয় নায়কের কণ্ঠে গান শুনতে কার না ভালো লাগে।
নায়ক জাফর ইকবালের কিন্তু গায়ক হওয়ার কথা ছিল। গায়ক তিনি ছিলেনও। তবে সেই পরিচয় চাপা পড়ে যায় তাঁর নায়কখ্যাতির নিচে। ঘরে ছিলেন আনোয়ার পারভেজের মতো সুরকার ভাই আর শাহনাজ রহমতুল্লাহর মতো গায়িকা বোন। গান শিখতে তাঁকে সুদূর চীনে যেতে হয়নি। জাফর ইকবাল সিনেমায় গান গেয়েছেন হাতে গোনা কয়েকটি। কিন্তু সেসবের প্রায় সব কটি জনপ্রিয় হয়েছিল।
‘ফকির মজনু শাহ’ ছবিতে রুনা লায়লার সঙ্গে ‘প্রেমের আগুনে জ্বলে গেলাম সজনী গো’ গানটি সেগুলোর একটি। ‘বদনাম’ ছবিতে গাওয়া গানটিও জাফর ইকবালকে তুমল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তাঁর গাওয়া ‘হয় যদি বদনাম হোক আরো’ গানটিতে পর্দায় ঠোঁট মেলান নায়করাজ রাজ্জাক। প্লেব্যাক ছাড়াও ‘সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী’র মতো শ্রোতাপ্রিয় গান গেয়েছেন জাফর ইকবাল।
নায়ক আলমগীরের নাম নেওয়া যাক। পেশাদার গায়ক নন তিনি, শৌখিন গায়ক হয়েও প্রসংশা কুড়িয়েছেন বহুবার। ‘আগুনের আলো’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন তিনি। ‘কার পাপে’ ছবিতেও তাঁর কণ্ঠে গান শুনেছেন শ্রোতারা। নিজের প্রযোজনা করা ‘ঝুমকা’ ও ‘নির্দোষ’ ছবিতেও আলমগীর গান গেয়ে দর্শকদের চমক দিয়েছেন। তাঁকে টিভির পর্দা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শ্রোতাদের আকর্ষণ করতে দেখা গেছে। কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীরের বাবা ও রুনা লায়লার স্বামী হিসেবে গান গাওয়াটা যেন তাঁর পারিবারিক অধিকার।
আলমগীরের সমসাময়িক সোহেল রানা নিজে না গাইলেও ঠোঁটে তুলে নিয়েছিলেন ভাইয়ের গান। নায়ক রুবেল অভিনয়ে আসার আগে ছিলেন বড় ভাইয়ের সহকারী পরিচালক। ‘জীবন নৌকা’ ছবিটির সহকারী পরিচালক হওয়ার পাশাপাশি প্লেব্যাকও করেছিলেন শখের বশে। আলম খানের সুরে ‘মেঘ যদি সরে যায়’ শিরোনামের একটি গানে কণ্ঠ দেন রুবেল। যদিও গানটি তেমন শ্রোতাপ্রিয় হয়নি। তবু রুবেল আবারও চেষ্টা করেন। নায়ক হওয়ার অনেক বছর পর ‘তাণ্ডব’ ছবিটি ছাড়াও নিজের প্রযোজনার বেশ কিছু ছবির জন্য গান করেছেন তিনি।
প্রয়াত নায়ক সালমান শাহও প্লেব্যাক করেছেন। ‘প্রেমযুদ্ধ’ ছবিতে কনকচাঁপার সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে ‘তুমি আমার জীবনের এক স্বপ্ন যেন’ গানটিতে কণ্ঠ দেন সালমান। ছবির পরিচালক জীবন রহমানের জন্য মোট তিনটি গান কণ্ঠে তুলে নেন সালমান শাহ। তাঁর মৃত্যুর পর একটি গান ব্যবহৃত হয় ‘আলী কেন গোলাম’ নামের একটি ছবিতে। এটিও কনকচাঁপার সঙ্গে ডুয়েট। আরেকটি গান কোনো ছবিতে ব্যবহার করা যায়নি। এটি এখন ইউটিউবে পাওয়া যায়। গানটি হচ্ছে ‘রজনীগন্ধা তুমি যে আমার’।
পূর্বসূরিদের দেখে গান গাওয়ার সাধ হয়েছিল শাকিব খানেরও। মালেক আফসারী পরিচালিত ‘মনের জ্বালা’ ছবিতে ‘আমি চোখ মেলে তাকালে সূর্য লুকায়’ গানটি গেয়েছেন শাকিব। গানের কথা লিখেছেন কবির বকুল, সুর করেছেন আলী আকরাম শুভ। আরিফিন শুভ ‘না’ বলতে পারেননি ‘অগ্নি’ ছবির নির্মাতা ইফতেখার চৌধুরীকে। ছবির ‘ডুবে যাই তোমার ভাবনায়’ গানে শিল্পী কণার সঙ্গে কণ্ঠ দেন শুভ। পর্দায় শুভ ও মাহিকে ঠোঁট মেলাতে দেখা যায় সেই গানে। ছবিটি পছন্দ করেছেন দর্শকেরা, গানটিও।