অভিনেতা মনোজ প্রামাণিক অনেক দিন নেই নাটকে। সামনে তিনি থাকবেন নানা দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রে। নাটক থেকে কি একরকম মুখ ফিরিয়েই নিয়েছেন তিনি? অভিনয়, একেকটি চরিত্র হয়ে ওঠার পেছনের এবং ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গে নিয়ে কথা বললেন তিনি।
‘প্রীতিলতা’ সিনেমায় রামকৃষ্ণের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। রামকৃষ্ণ চরিত্রটাকে কীভাবে ধারণ করছেন?
এটা তো পিরিয়ডিক ফিল্ম। সময়টাকে বোঝার চেষ্টা করছি। ওই সময়ের ইতিহাস, রামকৃষ্ণের জীবনবৃত্তান্ত বোঝাপড়া চলছে। তাঁর রাজনৈতিক বোধ, জীবনদর্শন বোঝার চেষ্টা করছি। প্রীতিলতা ঝুঁকি নিয়ে রামকৃষ্ণের সঙ্গে জেলে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই দর্শন, সেই আলাপ প্রীতিলতাকে কীভাবে প্রভাবিত করল, সেটা অনুধাবনের চেষ্টা করছি। বাকিটা কল্পনা করে নিচ্ছি।
‘বাঘ বন্দী সিংহ বন্দী’ সিরিজে নুরূল আলম আতিকের ‘নিষিদ্ধ বাসর’ স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিতে কাজ করলেন। এই ছবিটায় কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
নির্মাতা নুরূল আলম আতিকের প্রধান মুনশিয়ানা তিনি যে কাজগুলো করেন সেই গল্পে। নিষিদ্ধ বাসর-এর গল্পটাও একেবারে অন্য রকম। এভাবে খুব কমই ভাবা হয়। শিগগিরই এই ছবিসহ পাঁচটা স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি মুক্তি পাবে। তখন সবাই দেখতে পাবে, জানতে পারবে।
‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘মিশন এক্সট্রিম’ আর ‘মানুষের বাগান’ ছবিগুলোর কী অবস্থা?
করোনার কারণে তো আটকে গেল। অপারেশন সুন্দরবন ছবির সামান্য কাজ বাকি আছে। হল খুললে, পরিস্থিতি আরেকটু স্বাভাবিক হলে ধীরে ধীরে ছবিগুলো মুক্তি দেওয়া হবে। আরও কয়েকটা ছবির কথাবার্তা চলছে।
আপনি এই মুহূর্তে কতটা নাটকের, কতটা সিনেমার? মানে, নিজেকে ছোট পর্দার জন্য আর বড় পর্দার জন্য কীভাবে প্রস্তুত করছেন?
এই ছোট পর্দা, বড় পর্দা—আপনারা যে বলেন, এগুলো একদম ভুয়া, ফালতু কথা। এগুলোর আসলে কোনো অস্তিত্ব নেই। অভিনয়টাই আসল। আর এখন তো বড় পর্দার জন্য প্রস্তুতির মানে দাঁড়িয়েছে ডায়েট করা আর বডি বানানো। যে অভিনয়টা জানে, সে জানে কোনটা মঞ্চ, ছোট পর্দা আর কোনটা বড় পর্দার অভিনয়। যেমন ধরুন ফজলুর রহমান বাবু। তিনি যেকোনো মাধ্যমে সব সময় তাঁর ‘অভিনয়’ নিয়ে প্রস্তুত। পর্দা হিসেবে আমি নিজেকে বিবেচনাই করছি না। আমি চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি নিই। আর এই করোনাকালে তো ছোট পর্দা, বড় পর্দা, মাইক্রো পর্দার ধারণা আরও লীন হয়ে গেছে। আপনি জানতে চাইতে পারেন, আমি নাটক করা কমিয়ে দিয়েছি কেন বা দীর্ঘদিন ধরে নাটক করি না কেন? করি না, কারণ নাটকের বাজেট, পেশাদারত্ব, শৈল্পিক জায়গাটা ধ্বংস হয়ে গেছে।
আপনার প্রিয় অভিনয়শিল্পী কারা?
প্রিয় অভিনয়শিল্পী, প্রিয় খাবার—এসব প্রিয় জিনিস আমার খুব কম। মানে, অনেকের অভিনয় ভালো লাগে। কিন্তু আলাদা করে একজন-দুজনের নাম নেওয়াটা ঠিক হবে না।
বাড়িতে কে কে আছে? সেখানে কেমন সময় কাটল?
খুব খুব ভালো। প্রকৃতির কাছাকাছি, বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নিয়েছি। মায়ের রান্না খেয়েছি। আমার মা-বাবা আর এক দিদি আছেন। এইটা করোনাকালের একটা আশীর্বাদ। আর আমার দুটো ভাই রাজশাহী আর ঢাকায় থাকে।
আপনার একটা বিড়াল আছে। ওর নাম কী? আপনি কি ‘ক্যাট পারসন?’
আমি ক্যাট, ডগ, কাউ—কোনো পারসন না। এক সহকর্মী রাস্তা থেকে বিড়ালটা কুড়িয়ে পেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল। তখন আমি নিই। তারপর থেকে আমার কাছেই আছে। আমি তো ওকে নানা নামে ডাকি। তবে ওর গায়ে ডোরাকাটা দাগ আছে। তাই বাবা ওর নাম দিয়েছেন বাঘা। আমার বাড়িতে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, বিড়াল, কুকুর—সবই ছিল। আমি ওদের সঙ্গেই বেড়ে উঠেছি।
করোনাকাল আপনাকে কী শেখাল?
শেখাল আরও ধৈর্যশীল হতে, আরেকটু অরগানিক হতে। প্রকৃতির প্রতি আরেকটু যত্নশীল হতে। আরও ধীর হতে।
শিক্ষক মনোজ প্রামাণিক কেমন আছে?
ভালোই আছে। সে তার ছাত্রছাত্রীদের মিস করছে। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে সে আবার ক্লাসে যাবে।