ঘটনা গুরুতর। গ্রামের এক ব্রাহ্মণের মেয়ে মাধবী, সে স্থানীয় কলেজের শিক্ষক লতিফ মাস্টারের ছেলে সূর্যের প্রেমে পড়েছে। সূর্যকে ভালোবাসবে আর উত্তাপ টের পাবে না, তা তো হয় না! এক সন্ধ্যায় মেয়ের ওপর ভীষণ খেপে গেল ব্রাহ্মণ মশাই। একে তো ছেলে বখাটে, তার ওপর ধর্মটাও ভিন্ন। এ সম্পর্ক কি মানা যায়? মেয়ের দুঃসময়ে এগিয়ে আসে মা, ‘আমি তোরে একটা বুদ্ধি দিই।’
কী বুদ্ধি? মাধবীর সঙ্গে কান পাতি আমরাও, মানে এই তো প্রেম ছবিটি দেখতে ব্লকবাস্টার সিনেমাসে হাজির হওয়া গুটি কয়েক দর্শক।
মা বলে, ‘তুই যেমনে পারিস সূর্যরে ভুইলা যা!’ এই ‘চমকপ্রদ বুদ্ধি’ মেয়ে যে একেবারেই আমলে নেয়নি, সেটা বোঝা গেল পরদিন। মাধবী আর সূর্য—যথারীতি পুকুরঘাটে দেখা গেল দুজনকে।
ছবির পটভূমি ১৯৭১ সাল। লতিফ মাস্টারের কথায় অনুপ্রেরণা পেয়ে গ্রামের যুবকেরা যখন দলে দলে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিচ্ছে, মাস্টারপুত্র সূর্য তখন মাধবী-প্রেমে মশগুল। গ্রামের এই ডানপিটে-প্রেমিক কেমন করে মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা হয়ে উঠল, জানতে হলে ছবিটা দেখতে হবে।
খটকা থেকে গেল অনেকগুলো জায়গায়। মা-বাবা পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে খুন হয়েছে শুনেই সূর্য হন হন করে মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পের দিকে হাঁটা ধরল। একবার জানতেও চাইল না, তাঁর মা-বাবার লাশ কোথায়, কবর হলো কি না। ছবির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কলেজের দপ্তরি আলীকে (শহীদুজ্জামান সেলিম) মনে হচ্ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, হঠাৎ সে হাওয়া হয়ে গেল কী করে? আলী কোথায় গেল, তার পরিণতি কী হলো—এই প্রশ্নের উত্তর ছবিতে নেই। সূর্যকে হারিয়ে, পাকিস্তানি মেজরের খপ্পরে পড়ে মাধবী পাগলপ্রায়। দৃশ্যবদলের সঙ্গে সঙ্গে তার শাড়ি বদল হয় কী করে?
পরিচালক সোহেল আরমান দীর্ঘদিন সময় নিয়ে ছবিটা তৈরি করেছেন। অনেক সীমাবদ্ধতা যে ছিল, সেটা দর্শকের খালি চোখেই ধরা পড়ার কথা। ছবির আগেই গানগুলো মুক্তি পেয়েছে, জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দৃশ্যায়ন তবু মুগ্ধ করল কই? ‘তোমায় আমি জোছনা দেব’ গানে শাকিব খান আর বিন্দু যখন মাঝরাতে নৌকায় বসে আছে, ক্লোজ শট দেখতে দেখতে ক্লান্ত হতে হলো। সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি আর লাল শাড়ি পরনে সদ্য বিবাহিত দম্পতি, জোছনা রাত, ফুলে ফুলে সাজানো নৌকা—দূর থেকে দেখতে কী দারুণই না লাগত!
যুদ্ধের দৃশ্যগুলো বড্ড মেকি। ছবির একদম শেষ অংশে মাধবীকে নিয়ে সূর্য আর মেজরের মধ্যে হাতাহাতি লড়াই হলো। ঢিসুম-ঢুসুম...‘খোকা ওঠ’...চিরাচরিত বাংলা সিনেমা কায়দায় এসব কি মানাল? মনে হলো একরকম জবরদস্তি করে এই অংশটা ছবিতে বসানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটা চলচ্চিত্র ‘সিনেমাটিক’ করার চেষ্টা না করলেও বোধ হয় চলত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সত্যটাই রোমাঞ্চে পরিপূর্ণ, তাতে বাড়তি কল্পনার আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।