আমি যখন শুরু করেছিলাম, তখন পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল...

তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ। ‘সোফিস চয়েজ’, ‘দ্য আয়রন লেডি’, ‘দ্য ডেভিল ওয়ারস প্রাদা’সহ প্রায় ১০০ সিনেমায় নিজের অভিনয়প্রতিভা দেখিয়েছেন। অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন তিনবার অস্কার, ৩৩ বার গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন পেয়ে ৯টি পুরস্কার তিনি ঘরেও তুলেছেন। চলতি বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে মেরিল স্ট্রিপ পেয়েছেন সম্মানজনক স্বর্ণপাম। আসরের উদ্বোধনী দিন ১৪ মে তাঁর হাতে ওঠে এই পুরস্কার। পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি যে সাক্ষাৎকার দেন, সেটি প্রকাশ করেছে কানের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট। সাক্ষাৎকারটি বাংলায় ভাষান্তর করেছেন সুমন মাহমুদ

প্রথম আলো:

স্বর্ণপাম পাওয়ার অনুভূতি কেমন?

মেরিল স্ট্রিপ : আমি আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। কান্না ঠেকিয়ে রাখাটা আমার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল। এখানে, এই কানে যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, সত্যিই আমাকে অভিভূত করেছে। আমি আমার বাসায়ও এত সম্মান পাই না।

চলতি বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে মেরিল স্ট্রিপ পেয়েছেন সম্মানজনক স্বর্ণপাম। রয়টার্স

প্রথম আলো :

ফরাসি সিনেমা নিয়ে কিছু বলুন...

মেরিল স্ট্রিপ : আমি কিছুটা লজ্জিত, যথেষ্ট সিনেমা দেখতে পারি না। আমি দিনে খুব বেশি সময় পাই না। কারণ, আমি অনেকটা পারিবারিক জীবন পার করি। অনেকটা বয়স পার করে এসেছি। এতটা পথ পাড়ি দিতে গিয়ে আমি অনেকের সঙ্গেই কাজ করেছি। যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের সিনেমা যদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে না দেখি, সেটা আমাকে অনেকটা পিছিয়ে দেবে। এখনো আমি ‘কল মাই এজেন্ট’ টিভি সিরিজের কল্যাণে ক্যামিলে কোতিঁকে ভালোবাসি। এখনো আমি কোয়েন্টিন ডুপিওর সিনেমা দেখে ঘুমাতে যাই।

প্রথম আলো:

‘সোফিস চয়েজ’-এর চূড়ান্ত দৃশ্য নিয়ে কিছু বলুন...

কান উৎসবে মেরিল স্ট্রিপ। রয়টার্স

মেরিল স্ট্রিপ : সবার মধ্যে একটি কথা প্রচলিত হয়ে গেছে যে এই সিনেমার চূড়ান্ত দৃশ্য একবারই শুট করেছি আমরা। কিন্তু না, এটা দুবার ধারণ করা হয়েছে। কারণ, প্রথম টেকে বাচ্চা মেয়েটি বুঝতেই পারছিল না কী ঘটতে চলেছে। দ্বিতীয় টেকে, যখন সে বুঝতে পারল যে কতগুলো মানুষ তাকে নিয়ে যাবে, তখন মেয়েটি যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটাই সিনেমাটিকে গতিশীল করেছে। আমি দৃশ্যটি শুধু একবার পড়েছিলাম। দৃশ্যটি আমাকে খুবই মর্মাহত করেছিল। এমন দৃশ্যে অভিনয় করতে গেলে কোনো প্রস্তুতিই আসলে কাজে লাগে না। এটা উন্মুক্ত সমুদ্রে পড়ার মতো অবস্থা। শূন্যে ছুড়ে দেওয়াটাই শুধু আপনার পছন্দ হতে পারে, কোনো টেকনিক এখানে কাজ করবে না।

কান উৎসবে মেরিল স্ট্রিপ। রয়টার্স
প্রথম আলো:

বর্তমান সময়ে সিনেমায় নারী চরিত্র প্রসঙ্গে কিছু বলুন...

মেরিল স্ট্রিপ : বর্তমানে বিশ্বের বড় বড় তারকা হলো নারী। আমি যখন শুরু করেছিলাম, তখন পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। সেই সময়ে ফিরে দেখলে বুঝতে পারবেন, তখন সবকিছুই আবর্তিত হতো পুরুষ তারকাকে কেন্দ্র করে। নারী চরিত্র গৌণ ছিল। যাঁরা সিনেমা নির্মাণ করতেন, তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী সিনেমা প্রদর্শিত হতো। এমনকি বড় প্রযোজকদেরও তেমনটাই স্বপ্ন থাকত। নারীদের জন্য পুরুষদের সঙ্গে অভিনয় করার কল্পনাটাই কঠিন ছিল। যদিও একজন অভিনেতার পক্ষে নারী চরিত্রে অভিনয় করা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। ‘দ্য ডেভিল ওয়ারস প্রাদা’ ছিল সেই সিনেমা, যেখানে একজন পুরুষ আমাকে নারীপ্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে বলেছিলেন। আমি জানি, এটা শোনার পর আপনাদের কী অনুভূতি হচ্ছে!

প্রথম আলো :

একজন ভালো পরিচালকের কী কী ভালো গুণ থাকা উচিত?

মেরিল স্ট্রিপ : তাঁকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁকে জানতে হবে, তিনি আসলে কী বলতে চান। নিজের টিমে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে হবে। তিনি অবশ্যই ভিন্ন কিছু পেতে চান, এমনকি কমেডির ক্ষেত্রেও। যখন আমি এটা খুঁজে পাই না, বাড়ি চলে যায়।

কান উৎসবে মেরিল স্ট্রিপ। রয়টার্স
প্রথম আলো:

‘দ্য ব্রিজেস অব ম্যাডিসন কাউন্টি’ সিনেমায় শুটিংয়ের স্মৃতি...

মেরিল স্ট্রিপ : ক্লিন্ট ইস্টউড সিনেমাটি মাত্র পাঁচ সপ্তাহে বানিয়েছিলেন। তিনি খুব দ্রুত কাজ করেন। তিনি প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় উঠতেন, যাতে বিকেলে গলফ কোর্সে থাকতে পারেন। এমনকি সিনেমায় যেটা দেখেছেন, সেটা ছিল রিহার্সাল। তিনি এভাবেই কাজ করতেন। তাঁর দল ছিল ক্ষিপ্রগতির। কিন্তু তিনি কখনোই উচ্চ স্বরে কথা বলেননি। এটাই তাঁর টিমের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো লাগার মতো দিক।

প্রথম আলো :

তরুণ অভিনয়শিল্পীদের প্রতি আপনার পরামর্শ...

মেরিল স্ট্রিপ : হাল ছেড়ো না, হাল ছেড়ো না, হাল ছেড়ো না!