প্রখ্যাত ইরানি নির্মাতা ও তাঁর স্ত্রীকে খুন, ছুরি পড়ে ছিল লাশের পাশেই
ইরানের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা দারিউস মেহেরজুই ও তাঁর স্ত্রী ভাহিদিয়া মোহাম্মাদির মরদেহ উদ্ধার করছে পুলিশ। বাসার পাশেই তাঁদের লাশ পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এটি গুপ্তহত্যা। তবে কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, এটা এখনো জানা যায়নি। বিখ্যাত এই চলচ্চিত্র নির্মাতার মৃত্যুতে শোকের ছাড়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্র অঙ্গনে। ইরানের সরকারি গণমাধ্যম আইআরএনএর বরাতে নির্মাতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে এপি।
ইরানের বিচারিক কর্মকর্তা হোসাইন ফাজেলি ইরানি গণমাধ্যমে মৃত্যুর এই তথ্য জানান। ফাজেলি উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে বলেন, ‘দারিউস মেহেরজুই ও তাঁর স্ত্রী ভাহিদিয়া মোহাম্মাদির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের ঘাড়ের পাশে মারাত্মক জখম হয়েছে। মরদেহের পাশেই একটি চাকু পাওয়া যায়।’
ফাজেলি আরও বলেন, ‘ডিরেক্টরের মেয়ে মনা মেহেরজুই তেহরান শহরে থাকেন। তাঁর বাবা থাকেন তেহরান শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। গতকাল শনিবার রাতে তিনি তেহরান থেকে বাবাকে দেখতে গিয়েছিলেন। পরে তিনি বাবা-মায়ের লাশ খুঁজে পান।’
এ ঘটনায় কারা জড়িত, সেটা বের করতে তদন্ত চলছে। কিন্তু কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত, সেটা জানা যায়নি। কী উদ্দেশ্যে খুন করা হয়েছে, তা–ও স্পষ্ট নয়। এদিকে চলতি সপ্তাহেই দারিউস মেহেরজুইয়ের স্ত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করে পোস্ট করেছিলেন, কেউ তাঁকে চাকু দিয়ে কেউ মারার হুমকি দিচ্ছে।
দারিউস মেহেরজুইয়ের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি ৬০–এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিনেমা বিষয়ে পড়াশোনা করেন। পরে দেশে এসে সিনেমার নির্মাণ শুরু করেন। তাঁকে ইরানের নবতরঙ্গ সিনেমার অন্যতম পুরোধা বলা হয়। ৬০–এর দশক থেকে তিনি নিয়মিত সিনেমা নির্মাণ করেন। দারিউস মেহেরজুই ‘দ্য কাউ’ সিনেমা দিয়ে ইরানের নবতরঙ্গ সিনেমাকে নতুন করে বিশ্বসিনেমা অঙ্গনে পরিচয় করিয়েছেন।
দারিউস মেহেরজুইয়ের ‘দ্য কাউ’ রাষ্ট্রীয় অনুদানে নির্মিত প্রথম ইরানি সিনেমা। আপাতদৃষ্টে সিনেমার বিষয়বস্তু গাভির প্রতি একজন মানুষের ভালোবাসা ও সেই ভালোবাসাকে আগলে মনে করা হয়। কিন্তু সিনেমাটি দিয়ে পরিচালক রাষ্ট্রের শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এমন অভিযোগ এনে সিনেমা ইরানে নিষিদ্ধ হয়।
সেই সময় থেকে স্বাধীন ধারার নির্মাতা নতুন করে সিনেমা নিয়ে ভাবতে থাকেন। তরুণ নির্মাতাদের কাছে সিনেমা বিনোদনের মাধ্যমের পাশাপাশি জীবনঘনিষ্ঠ ও প্রতিবাদের ভাষা হয়ে দাঁড়ায়। ‘দ্য কাউ’ এক বছর নিষিদ্ধ থাকার পর ১৯৭০ সালে আবার মুক্তি পায়। পরে সিনেমাটি গোপনে ভেনিস উৎসবে জমা দিলে জুটে যায় ফিপরেস্কি পুরস্কার।
পরে তিনি একের পর এক সিনেমা বানান এবং তরুণ নির্মাতাদেরও তুলে আনেন। দারিউস মেহেরজুই ‘সারা’, ‘দ্য লেডি’, ‘দ্য পোস্টম্যান’, ‘দ্য পেয়ার ট্রি’সহ একাধিক গল্পে গভীরভাবে রাষ্ট্রকে নাড়া দিয়েছেন। এর মধ্যে ‘দ্য লেডি’, ‘দ্য পোস্টম্যান’ বার্লিন উৎসবে পুরস্কৃত হয়। ‘টু স্টে অ্যালাইভ’ কানের আঁ সার্তে রিগা বিভাগে প্রতিযোগিতা করে। তাঁর স্ত্রীও চিত্রনাট্য ও সিনেমার গল্প লিখতেন। এ ছাড়া তিনি কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবেও কাজ করতেন।