চমক নিয়ে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা উঠছে আজ
ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৯তম আসরের পর্দা উঠছে আজ। এই আয়োজন সামনে রেখে নতুন করে সেজেছে ইতালির উত্তরের শহর ভেনিস। অবশেষে সাজ সাজ রবে বিশ্ব চলচ্চিত্রের রথী–মহারথীদের আগমনের অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে। ১১ দিন চলবে এই উৎসব। উদ্বোধনী সিনেমা ‘হোয়াইট নয়েজ’ দিয়ে আজ উৎসব শুরু হচ্ছে। তিনবার অস্কারে মনোনয়ন পাওয়া নোয়া বামব্যাক তিন বছর পরে সিনেমাটি দিয়ে ফিরছেন। শুধু তিনিই নন, এবারের উৎসবে বিশ্ব বিখ্যাত পরিচালকদের ফেরা, উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগের সিনেমা নির্বাচন, তারকাদের উপস্থিতি, নেটফ্লিক্সের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণসহ নানা চমক রয়েছে।
প্রতিযোগিতা বিভাগে চমক
ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের সিনেমার তালিকায় বিশ্ব চলচ্চিত্রবোদ্ধা, চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আলাদা নজর থাকে। এর অন্যতম কারণ সিনেমা বাছাইয়ে আলাদা গুরুত্ব পায় সিনেমার ধরন, নির্মাণ ও বিভিন্ন উপমহাদেশকে যুক্ত করা। এবারের উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে ২৩টি সিনেমা লড়বে সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণসিংহ বা গোল্ডেন লায়নের জন্য। ছয়টি মহাদেশের ১২টি দেশ থেকে অংশ নিচ্ছে সিনেমাগুলো। ‘হোয়াইট নয়েজ’ সিনেমায় উঠে এসেছে আমেরিকার সমাজে টিকে থাকার কঠিন বাস্তবতা; জাপানি সিনেমার ‘লাভ লাইভ’–এর গল্প সড়ক দুর্ঘটনার পর বাবা–ছেলের কঠিন সংগ্রাম ও অপরাধবোধ ঘিরেই নির্মিত হয়েছে।
ইরানি সমাজের নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প উঠে এসেছে ‘নো বেয়ারস’ সিনেমায়। এ ছাড়া যুদ্ধ, থ্রিলার, সাইকোলজি থ্রিলারসহ নানা স্বাদের সিনেমার মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে।
পরিচালকদের ফেরা
মূল বিভাগের প্রতিযোগিতায় রয়েছেন বিশ্বের খ্যাতিমান নির্মাতারা। দীর্ঘ প্রায় এক দশক পর অ্যান্ড্রু ডমিনিক ফিরছেন নতুন সিনেমা ‘ব্লন্ডি’ দিয়ে। ‘মাদার’ সিনেমার পর পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে ড্যারেন অ্যারোনোফস্কি ফিরছেন ‘দ্য হুইল’ সিনেমা নিয়ে। ২০১৫ সালে ‘রেভেন্যান্ট’ সিনেমা দিয়ে অস্কার জয়ের পর আর কোনো সিনেমা বানাননি আলেজান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতু। ‘রেভেন্যান্ট’ সিনেমাটি দিয়ে ইনারিতু জিতে নেন পরিচালক বিভাগে অস্কার। মেক্সিকোর এই চলচ্চিত্র নির্মাতা এবার ‘বারডো’ দিয়ে পর্দায় ফিরছেন। ২০১৮ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে চিত্রনাট্যের পুরস্কার জয় করেছিল জাফর পানাহির ‘থ্রি ফেসেস’ সিনেমা। এরপর দীর্ঘ চার বছর পরে ‘নো বেয়ারস’ দিয়ে ফিরছেন এই নির্মাতা। এ ছাড়া লুকা গোওডাগিনো, জোয়ানা হগ ও লরা পোইট্রাসের মতো পরিচালকেরা দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ফিরছেন। বোঝা যায়, এবার প্রতিযোগিতা বিভাগে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর হবে।
তরুণদের দখলে
৭৯তম এই চলচ্চিত্র উৎসবে আউট অব কম্পিটিশন ফিকশন ও নন-ফিকশন বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে ১০টি করে সিনেমা। এ ছাড়া হরাইজনস শাখায় ৬টি সিনেমা মনোনয়ন পেয়েছে।
আরও রয়েছে হরাইজন এক্সট্রা বিভাগে ৯টি সিনেমা, ১২টি তথ্যচিত্র; আউট অব কম্পিটিশন সিরিজ বিভাগে ২টি ছয় পর্বের সিরিজ। এসব বেশির ভাগ সিনেমাই তরুণ নির্মাতাদের। ফিলিপাইন, কোরিয়া, অস্ট্রিয়াসহ বিভিন্ন দেশের তরুণ নির্মাতা—কেউ প্রথম, কেউ দ্বিতীয় বা তৃতীয় সিনেমা দিয়ে বিশ্বের এই সম্মানজনক উৎসবে জায়গা পেয়েছেন। ভেরা সিনেমা দিয়ে প্রথমবার উৎসবে জায়গা করে নিয়েছেন পরিচালক তিৎজা কোভি। তবে প্রবীণ নির্মাতাদের মধ্যে কিম কি দুকের শেষ ছবি কল অব গড আউট অব কম্পিটিশন শাখায় দেখানো হবে। কিম ২০২০ সালে মারা যান। ৯০ বছর উদ্যাপন ১৯৩২ সালে ইতালির এই উৎসব প্রথম শুরু হয়েছিল। সেই হিসেবে এবার উৎসবটি ৯০ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। মাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ কিছু কারণে উৎসবটি কয়েকবার আয়োজন হয়নি। উৎসবের ৯০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রথমবারের মতো ভেনিসে অংশ নিচ্ছে অস্কার একাডেমি। একই সঙ্গে উৎসবে ক্ল্যাসিক্যাল শাখায় জঁ রনোয়ার, সত্যজিৎ রায়, হেনরি কিং, অ্যাওয়ার্ড ইয়ানসহ একাধিক গুণী নির্মাতাদের সিনেমা দেখানো হবে। অস্কারের আগেই আলোচনায় তবে সবকিছু ছাপিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছে ভেনিসের সিনেমা। গত কয়েক বছরে এই উৎসবের ‘ডিউন’, জোকার, দ্য কিং অব কমেডি, নো ল্যান্ডসম্যান, শেপ অব ওয়াটার, স্পটলাইট, বার্ডম্যানসহ একাধিক সিনেমা অস্কারে সেরা সিনেমা, পরিচালকসহ নানা শাখায় বাজিমাত করেছে।
গত বছর জেন ক্যাম্পিয়ন পরিচালিত পাওয়ার অব ডগ সিনেমা অস্কারে আলোচনায় ছিল। সিনেমাটি সেরা পরিচালকের পুরস্কার জয় করে। হলিউড অভিনেত্রী জুলিয়ান মুর প্রধান বিচারক হিসেবে তাঁর দলের সঙ্গে বেছে নেবেন সেরা সিনেমা। ভেনিসে কারা বাজিমাত করবে, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। রেবেকা জোটলস্কি পরিচালিত আদার পিপলস চিলড্রেন দিয়ে শেষ হবে উৎসব।
একনজরে প্রতিযোগিতা বিভাগের সিনেমাগুলো
হোয়াইট নয়েজ (উদ্বোধনী সিনেমা), পরিচালক: নোয়া বামবাচ (যুক্তরাষ্ট্র)
আই সাইনোর ডেল ফরমিস, পরিচালক: গিয়ান্নি অ্যামিলিয়ো (ইতালি)
দ্য হুইল, পরিচালক: ড্যারেন অ্যারোনোফস্কি (যুক্তরাষ্ট্র)
ল’ইমেনসিতা, পরিচালক: ইমানুয়েল ক্রিয়েলিস (ইতালি)
সেইন্ট ওমের, পরিচালক: এলিস ডিওপ (ফ্রান্স)
ব্লন্ডি, পরিচালক: অ্যান্ড্র ডমিনিক (যুক্তরাষ্ট্র)
টিএআর, পরিচালক: টড ফিল্ড (যুক্তরাষ্ট্র)
লাভ লাইফ, পরিচালক: ফজি ফুকাদা (জাপান)
বারডো, পরিচালক: আলেজান্দ্রো গঞ্জালেজ
ইনারিতু (মেক্সিকো) এথেনা, পরিচালক: রমেন গ্যাভরেস (ফ্রান্স)
বনস অ্যান্ড অল, পরিচালক: লুকা গোওডাগিনো (যুক্তরাষ্ট্র)
দ্য ইটারন্যাল ডটার, পরিচালক: জোনানা হগ (যুক্তরাজ্য)
বিয়ন্ড দ্য ওয়াল, পরিচালক: ভাহিদ জালিলভ্যান্ড (ইরান)
দ্য বানশি অব হনিশেরিন, পরিচালক: মার্টিন ম্যাকডোনাগ (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য) আর্জেন্টিনা, ১৯৮৫, পরিচালক: সান্তিয়াগো মিতার (আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্র)
চিয়ারা, পরিচালক: সুজানা নিচিয়ারেলি (ইতালি)
মনিকা, পরিচালক: আন্ড্রে পালারো (ইতালি)
নো বেয়ারস, পরিচালক: জাফর পানাহি (ইরান)
অল দ্য বিউটি অ্যান্ড দ্য ব্লাডশিড (সমাপনী), পরিচালক: লরা পোইট্রাস (যুক্তরাষ্ট্র)
আ ক্যাপল, পরিচালক: ফ্রেডরিক উইজম্যান (যুক্তরাষ্ট্র)
দ্য সন, পরিচালক: ফ্লোরিয়ান জিলার (যুক্তরাষ্ট্র)
আওয়ার টাইস, পরিচালক: রোশডি জেম (ফ্রান্স)
আদার পিপলস চিল্ড্রেন, পরিচালক: রেবেকা জোটলস্কি (ফ্রান্স)