বছর দশেক আগে ভারতের দিল্লিতে একটি উৎসবে গিয়েছিলেন অভিনয়শিল্পী ও নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার সেই উৎসবে নাট্যকার মহেশ দাত্তানির লেখা ‘সেভেন স্টেপস অ্যারাউন্ড দ্য ফায়ার’-এর খোঁজ পান। হিজড়া সম্প্রদায় নিয়ে লেখা নাটকটি পড়ে সিদ্ধান্ত নেন, ভবিষ্যতে এটি থেকে মঞ্চের জন্য নাটক বানাবেন। দেশে ফেরার সময় বইটি আর সঙ্গে করে নিয়ে আসা হয়নি। পরে প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাক্টিংয়ের একাডেমিক পরিচালক শহীদুল মামুন বইটি সংগ্রহ করেন। অনুবাদের কাজটিও তিনি করেন, নাম দেন ‘আগুনযাত্রা’।
চার মাস ধরে নানা ধাপে ‘আগুনযাত্রা’কে মঞ্চ উপযোগী করেছেন প্রাচ্যনাটের সদস্যরা। আজাদ আবুল কালামের নির্দেশনায় আজ মঙ্গলবার ঢাকার বেইলি রোডের মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন। প্রথম প্রদর্শনী শুধু আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য, জানালেন প্রাচ্যনাট-সংশ্লিষ্টরা। গত দুদিন এই নাটকের কারিগরি প্রদর্শনী হয়েছে।
আজাদ আবুল কালাম গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বললেন, ‘নাটকের গল্পে দেখা যাবে, একটা মেয়ে হিজড়া সম্প্রদায়ের জীবনযাপন নিয়ে গবেষণা করার মনস্থির করে। এর পেছনে প্রধান কারণ, তাকে একটা সময় দত্তক নেওয়া হয়। মেয়েটি যে দত্তক, এটা জানতে পারে, তার বয়স যখন ১১-১২ বছর। গবেষণা করতে করতে সমাজের নানা বিষয় তুলে ধরা হবে। নাটকটি সবাই দেখুক, এরপর নিজে থেকে জানুক।’
আজাদ আবুল কালাম জানালেন, মঞ্চে সাতটি চরিত্র থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ দুটি চরিত্র চম্পা আর আনারকলি। এই দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন যথাক্রমে প্রদ্যুৎকুমার ঘোষ আর শাহেদ আলী। কমলা নামে আরেকটি চরিত্র আছে, দর্শক যাকে পর্দায় দেখতে পাবেন।
হিজড়া সম্প্রদায় নিয়ে নিজেদের নতুন প্রযোজনা প্রসঙ্গে আজাদ আবুল কালাম বললেন, ‘আমরা তো নানা বিষয় নিয়ে কাজ করি। এটাও একটা বিষয়, যা নিয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করার পরিকল্পনা ছিল। জেন্ডার ইস্যুতে আমাদের দেশে অস্বচ্ছতা আছে, তৃতীয় লিঙ্গ বলতেই অচ্ছুত। এরাও যে মানুষ, এই দাবিটাও উপেক্ষিত হয়। এরা কিন্তু বিশাল একটা সম্প্রদায়। আমরা সেটাই বলতে চেয়েছি।’
আনারকলি চরিত্রে রূপদানকারী শাহেদ আলী আপাতত কিছু বলতে চান না। তাঁর বক্তব্য, ‘সবাই নাটকটি দেখতে আসুক, তারপর জানুক আমরা কী নিয়ে কাজ করেছি, কারা কাজ করেছি। শুধু এটুকু বলে রাখলেন, ‘আগুনযাত্রা’ একটা মানবিক গল্প, যে মানবিকতাকে আমরা এড়িয়ে যাই, চিন্তা করি না।’
শাহেদ আলী জানালেন, চার মাস ধরে মহড়া করে এই নাটকের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন তিনি। এই নাটকের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর পর প্রাচ্যনাটের কোনো নতুন নাটকে আজাদ আবুল কালামের নির্দেশনায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন তিনি। সর্বশেষ তিনি ‘রাজা এবং অন্যান্য’ নাটকে অভিনয় করেন।
‘আগুনযাত্রা’য় আরও আছেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম, চেতনা রহমান, শারমিন আক্তার, আবদুর রহিম খান, রকি খান, তানজি কুন, শওকত হোসেন, ডায়ানা ম্যারলিন, ফয়সাল সাদী, আহমেদ সাকি, এ কে এম ইতমাম, তমাল, রানা নাভেদ, উচ্ছ্বাস তালুকদার প্রমুখ। নেপথ্যের কলাকুশলীদের মধ্যে আছেন সাইফুল ইসলাম (মঞ্চ ও আলো), রাহুল আনন্দ (সংগীত), স্নাতা শাহরিন (কোরিওগ্রাফি), আফসান আনোয়ার (পোশাক) এবং শাহরিয়ার শাওন ও রিপন কুমার দাস ধ্রুব (ভিডিও নির্মাণ ও প্রক্ষেপণ)।
প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পার করেছে প্রাচ্যনাট। এরই মধ্যে মঞ্চে এনেছে ৪০টি প্রযোজনা।