যে কারণে আত্মহত্যা করেছেন তরুণ মডেল
গত ২৯ তারিখ বিকেলে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান লোরেন। ফেরেন ৩০ তারিখ ভোর সাড়ে ৫টায়। রাতে বাইরে থাকায় বাবা–মা তাঁকে বকাঝকা করেন। বকা খেয়ে বেডরুমে গিয়ে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়েন তিনি। ভোর সাড়ে ৭টায় গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় তাঁকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখেন তাঁর বাবা–মা।
রোববার ভোরে নিজ কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন মডেল লোরেন মেন্ডেস। আজ জানা যায় তাঁর আত্মহত্যার কারণ। ধারণা করা হচ্ছে, স্বাধীন জীবনযাপনের কারণে বাবা–মায়ের শাসনে অভিমান করেই আত্মহত্যা করেছেন এই তরুণী।
গতকাল রোববার ভোর সাড়ে ৭টায় নিজ কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। এই ঘটনায় গতকাল রাতেই অপমৃত্যুর মামলা করা হয় গুলশান থানায়। সেই মামলায় লোরেন মেন্ডেসের বাবা উল্লেখ করেন, শাসন করার কারণেই মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল আমরা একটি অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছি। সেখানে তাঁর বাবা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেটা আমরা থানায় রেকর্ড করেছি।’ সেখানে কী লেখা আছে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা জানান, মেয়েটির বাবা লিখেছেন, গত ২৯ তারিখ বিকেলে লোরেন কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান। ৩০ তারিখ ভোর সাড়ে ৫টায় বাসায় ফেরেন। বাবা–মা সারা রাত বাইরে থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে বাইরে ছিলাম।’ পরে মেয়েকে বকাঝকা দেওয়ায় তিনি নিজ কক্ষে গিয়ে বাতি নিভিয়ে দেন। পরে ভোর সাড়ে ৭টায় গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় তাঁকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকাহত বাবা ব্লিন মেন্ডেস ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েটা ছিল অনেক স্বাধীনচেতা। বাইরে থাকতে চাইত বেশি। কাউকে কিছু না বলেই বাইরে চলে যেত। আমরা চাইতাম এভাবে যখন-তখন বাইরে না যাক। মাঝেমধ্যে আমরা তাঁকে বাধা দিতাম। আমরা চাইতাম সে তার ক্যারিয়ারে ভালো করুক। আমরা তার ভালোর জন্য কিছুটা শাসন করতাম। সে আমাদের কথা বুঝতে পারল না।’
গত দুই বছর ধরে লোরেন নিজের ইচ্ছে মতোই চলাফেরা করতেন। বাবা–মা কিছু বললেই হুট করে রেগে যেতেন। এভাবে বাইরে যাওয়া নিয়ে বহুবার তিনি তাঁর বাবা–মায়ের সঙ্গে রাগারাগি, তর্কাতর্কি করছেন। তবে কখনো আত্মহত্যার চেষ্টা করেননি বা তাঁর ভেতর এমন কোনো লক্ষণও দেখা যায়নি। গুলশান থানার উপপুলিশ পরিদর্শক ফুল কুমার রায় জানান, লাশের ময়নাতদন্ত শেষে আজ বেলা তিনটার দিকে তাঁর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এই সময় উপস্থিত ছিলেন লোরেন মেন্ডেসের বাবা এবং মামা। গাজীপুর তাঁদের গ্রামের বাড়িতে লোরেনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পরিবারের শোক কিছুটা কমলে আবারও তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশের তদন্ত দল।
গত ২৭ আগস্ট সর্বশেষ ‘ট্রল’ নাটকের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন তরুণ অভিনেত্রী ও মডেল লোরেন মেন্ডেস, সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা ও ছোট দুই বোন। নাটকের গল্পে তিনি ছিলেন অপূর্বের ছোট বোন। সেখানে বেশ শান্ত দেখা গিয়েছিল লোরেনকে। গতকাল রোববার তাঁর আত্মহত্যার খবরটি নিশ্চিত করেছিলেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান।
ফটোশুট ও মডেলিং দিয়ে লোরেন মেন্ডেস ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরে তিনি মিউজিক ভিডিওর মডেল হিসেবেও পরিচিতি পেতে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় শুরু করেন নাটকে অভিনয়। একটি বিজ্ঞাপনে তাঁর ‘ইন্টারনেট শেষ হলেও নো টেনশন’ সংলাপটি সবার নজর কাড়ে। প্রশংসিত হন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘অমর প্রেম’ এবং ‘তোমার পিছু ছাড়ব না’ গানে অভিনয় করে। তিন দিন আগে এই অভিনেত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অভিনীত একটি বিজ্ঞাপন শেয়ার করে ভিউ বেশি হওয়ার খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন।