মরে গেলে কষ্ট পায়, বিচ্ছেদে বলে ‘তুমি খারাপ’

শবনম ফারিয়া
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

সমাজের দিকে আঙুল তুললেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নারী নির্যাতন নিয়ে একের পর এক পোস্ট দিতে গিয়ে নিজের বিচ্ছেদের ঘটনাও নতুন করে তুলে এনেছেন এই অভিনেত্রী। সমাজের দিকে আঙুল তুলে ফারিয়া লিখেছেন, ‘সমাজ পুরুষকে মহিমান্বিত করে, নারীকে ধিক্কার দেয়। স্বামীর নির্যাতনে মরে গেলে সমাজ দুঃখ পায়, কিন্তু নিজেকে বাঁচানোর জন্য তালাক দিলে বলে “তুমি খারাপ”।’

আজ বৃহস্পতিবার ফারিয়া তাঁর ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘নিজের ঘটনা খুলে বলাটা আমার জন্য সহজ নয়। যদি পারতাম, সেটা আরও আগেই করতাম। মনে আছে, সেই ঘটনায় মানুষ কীভাবে আমার দিকে আঙুল তুলেছিল। এসব কারণেই আমরা এত নারী নির্যাতন হতে দেখি।’

শবনম ফারিয়া
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এলমা চৌধুরী হত্যার ঘটনায় ফারিয়া নিজের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনাকে সামনে তুলে আনেন। স্বামীর নির্যাতনে হাত ভাঙার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘মৃত মেয়েটার ছবি দেখার পর বারবার আমি দেড়-দুই বছর পেছনে ফিরে যাচ্ছিলাম। মনে পড়ছিল, কীভাবে ভাঙা হাত নিয়ে আমি “দেবী” সিনেমার প্রমোশন করেছি। যখন কেউ জানতে চেয়েছে কী হয়েছে, বলেছিলাম সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছি! কীভাবে ব্যথা পেয়েছি, সেটা সবাইকে বলার সাহস আমার ছিল না। কারণ আমি জানতাম, এই মানুষটার সঙ্গেই আমাকে থাকতে হবে, নাইলে মানুষ কী বলবে। আমার মা সমাজে মুখ দেখাবে কীভাবে। আমার দুই বোন যে স্বপ্ন নিয়ে এত আয়োজনের প্ল্যান করছে, তাদের কী জবাব দেব। কাবিনের তিন মাস না যেতেই এত কিছু! নিশ্চয়ই সমস্যা আমারই। আমি এই ভেবে দিনের পর দিন জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। বারবার ভেবেছি, কিছু হলে সবাই আমাকেই খারাপ বলবে। কিন্তু আমি খুব সৌভাগ্যবান যে আমার মা আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে, সাহস দিয়েছে। বুঝিয়েছে, মানুষ কী বলে, তার চেয়ে নিজের ভালো থাকা আরও অনেক জরুরি। জোর করে বিয়ে টিকিয়ে রাখার চেয়ে বেঁচে থাকা আরও জরুরি।’

ফেসবুকে পৃথক এক পোস্টে নিজের বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে ফারিয়া লিখেছেন, ‘যে মানুষটিকে আমি বিয়ে করেছিলাম, তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না। আমিই ব্যাপারটাকে এত দূর গড়াতে দিয়েছিলাম। শুরুতে আমার পরিবারও আমার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। কারণ, আমার বাবা নেই, বড় ভাই বা পুরুষ অভিভাবক নেই। পরে যখন আমার বোন আবিষ্কার করলেন আমাদের সম্পর্কটা বিষাক্ত হয়ে গেছে, তিনি তৎক্ষণাৎ আমাকে বাঁচালেন।’ এলমার জন্য মানুষের দুঃখ করা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘স্বামীর নির্যাতনে কোনো মেয়ে মরে গেলে আমাদের সমাজের লোকেরা কাঁদে! কিন্তু যখন কারও বিচ্ছেদ হয়ে যায়, ভেতরের ঘটনা না জেনেই তারা মেয়েটাকে সংসার টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ ভাবা শুরু করে। মেয়েটার দোষ খুঁজে বের করা, তাঁকে চারিত্রিক সনদ দেওয়া, হাসাহাসি করা—কী না করে।’

শবনম ফারিয়া
ছবি : ইনস্টাগ্রাম থেকে

তবে বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যথেষ্ট চিন্তাভাবনার পরামর্শও দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। লিখেছেন, ‘বিয়ে একটা দারুণ ব্যাপার। সামাজিকভাবে আমরা বরং বিচ্ছেদকে নিরুৎসাহিত করি। এমনকি কেউ যদি এসে আমাকে বিচ্ছেদের কথা বলে, শুরুতে আমি বলি, সময় নাও।’

শবনম ফারিয়া
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে হারুনুর রশীদ অপুকে বিয়ে করেন ফারিয়া। বিয়ের ঠিক ১ বছর ৯ মাসের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছিন্ন হন ফারিয়া ও অপু। কেন এমন হলো? জানতে চাইলে প্রথম আলোকে ফারিয়া বলেছিলেন, ‘সমস্যা যতটা না আমাদের দুজনের, তার চেয়ে বেশি আমাদের দুই পরিবারের। আমার বাবা নেই, মাকে নিয়ে আমার পরিবার। তার ওপর আমি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করি। আর দশজন মেয়ের বিবাহবিচ্ছেদ আর আমার বিবাহবিচ্ছেদ একেবারে ভিন্ন। আমি একটা মেয়ে, আমাদের সমাজ মেয়েদের দোষটাই আগে দেখবে জানি। সে কারণে অনেকভাবে চেষ্টা করেছি, যাতে সংসারটা টেকে। কিন্তু কোনোভাবেই সেটা সম্ভব হয়নি।’

আরও পড়ুন

টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি ‘দেবী’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন শবনম ফারিয়া। ইভ্যালির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের এক গ্রাহক মামলা ফারিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা করে। গত সোমবার মামলায় আগাম জামিন পেয়েছেন ফারিয়া।