দাদার পিছু ছাড়ছিল না ছোট্ট লুবাবা
সদ্য প্রয়াত অভিনেতা দাদা আবদুল কাদেরের পিছু ছাড়ছিল না নাতনি ছোট্ট লুবাবা। সকালে অভিনেতার মৃত্যুর পর লুবাবাকে বাসায় রেখেই তার দাদার দাফনের কথা ভেবেছিলেন সবাই। কিন্তু বাসায় থাকেনি ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া লুবাবা। দাফনের আগপর্যন্ত দাদার সঙ্গেই থাকতে চেয়েছে সে।
লুবাবার দাদা অভিনেতা আবদুল কাদেরের মরদেহ শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নেওয়া হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। কাঁদতে কাঁদতে দাদার মরদেহের সঙ্গে শিল্পকলায় গিয়েছিল সে। ভারত থেকে ফেরার পর সর্বশেষ দাদার সঙ্গে তার কথা হয়। সে সময় দাদা তাকে বেশ কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। সেগুলো মনে করে এখনো কাঁদছে লুবাবা। সারা জীবন দাদার সেই কথাগুলো মনে রাখতে চায় সে। শিল্পকলা একাডেমির প্রাঙ্গণে দাদার মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে লুবাবা বলে, ‘দাদা আমাকে বলেছিল, তুমি অনেক বড় হবে। অনেক ভালো মেয়ে হবে।’ কথাটা বলেই কাঁদতে থাকে সে।
কাঁদতে কাঁদতেই বলে, ‘দাদা বলেছিল, “আমি যখন থাকব না, তখন কারও সঙ্গে কোনো দিন খারাপ ব্যবহার করবে না। খারাপ কোনো কাজ করবে না। মানুষকে সম্মান করবে, সৎ থাকবে,” কথাগুলো বলে দাদা খুব কেঁদেছিলেন।’ দাদা মারা যাওয়ার আগে আর তাঁর সঙ্গে কোনো কথা হয়নি লুবাবার।
তবে যখন কথা হয়, দাদা তাকে আদর করে দিয়েছিলেন। সে কথা মনে করে কাঁদতে থাকে লুবাবা। তারপর হঠাৎ কান্না থামিয়ে বলে, দাদা তাকে দেখতে পাচ্ছে। সে কাঁদলে দাদার কষ্ট হবে। শব্দ করে না কাঁদলেও লুবাবার চোখ থেকে তখনো টপটপ করে জল ঝরছিল।
দাদা আবদুল কাদের অফিস থেকে ফিরলে দৌড়ে কাছে যেত লুবাবা। দাদার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে রাখত সে। তারপর পরিবারের সবাই একসঙ্গে চা খেত। দাদার কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক গল্প শুনত লুবাবা। শেষবার দাদার সঙ্গে মালয়েশিয়ায় বেড়াতে গিয়েছিল। সেবার অনেক মজা করেছিল সে। লুবাবাকে সব সময় শুটিংয়ে নিয়ে যেতেন আবদুল কাদের। বিভিন্ন দৃশ্য তাকে দাদাই বুঝিয়ে দিতেন। দৃশ্যধারণ শেষে দাদা প্রতিবার তার অভিনয়ের প্রশংসা করতেন। সেসব স্মৃতি স্মরণ করে কান্না আটকে রাখার চেষ্টা করছিল লুবাবা। পাশ থেকে লুবাবার ভাই মনে করিয়ে দেয়, দাদা তাদের মানুষের মতো মানুষ হতে বলেছেন।
প্রথমবার দাদার ক্যানসারের কথা শুনে চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিল লুবাবা। ফোঁপাতে ফোঁপাতে মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ক্যানসার হলে কী হয়। মায়ের কাছে ক্যানসার সম্পর্কে শোনার পর ফোন থেকেই অনলাইনে খুঁজতে থাকে ক্যানসারের চিকিৎসা। এই রোগের শেষ পরিণতি জেনে মন খারাপ হয় ছোট্ট লুবাবার। কিন্তু সে থেমে থাকে না। দাদা কীভাবে সুস্থ থাকবেন, সেই উপায় খুঁজতে থাকে সে। কাঁদতে কাঁদতে সেদিন লুবাবা বলেছিল, ‘আমি ইন্টারনেটে দেখেছি, রক্ত কমে গেলে রাইস খেতে হবে। চিকেন, ডিম, আনার খেলে দাদা আবার সুস্থ হয়ে উঠবে।’ কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। আজ শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা আবদুল কাদের।
তিন বছর বয়সে দাদার সঙ্গে অভিনয় শুরু করে ছোট্ট লুবাবা। দাদাই তাকে বুঝিয়ে দিতেন কোন দৃশ্যে কীভাবে অভিনয় করতে হবে। লুবাবার মা জাহিদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার শ্বশুর সব সময় বলতেন, লুবাবা তাঁর অভিনয়গুণ পেয়েছে। বাবা যেমন অভিনয়ের জন্য প্রশংসা পেতেন, তেমনি লুবাবাও অভিনয় শেষে শুটিং সেটের সবার প্রশংসা পায়।’ আবদুল কাদেরের পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম জানান, জোহরের নামাজের পর আবদুল কাদেরের একটি জানাজা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সন্ধ্যায় বনানী কবরখানায় তাঁকে সমাহিত করা হবে। তিনি বলেন, ‘বাবা আমাকে সব সময় মেয়ের মতো দেখতেন। তাঁর কাছেই আমি মানুষ হয়েছি। বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’