তারকাদের পারিশ্রমিক কমাতে চান প্রযোজকেরা

প্রযোজকেরা বলছেন, ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে তারকাদের পারিশ্রমিক একটি বড় বাধা।কোলাজ

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে একের পর এক তারকা পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন, অনেক দিন থেকেই এমন অভিযোগ করে আসছিলেন প্রযোজকেরা। তরুণ শিল্পীদের কেউ কেউ একলাফে নাটকপ্রতি লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন। অন্যদিকে নাটক থেকে বিজ্ঞাপন কমেছে, তার সঙ্গে কমেছে আয়। পরিণতিতে নাটক নির্মাণ কমে গেছে। নির্মাণ ব্যয় কমানো ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণের আপাতত কোনো পথ দেখছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। প্রযোজকেরা বলছেন, ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে তারকাদের পারিশ্রমিক একটি বড় বাধা। পারিশ্রমিক না কমালে একেবারেই থমকে যেতে পারে নাটকের ইন্ডাস্ট্রি।

লাইভ টেক ইউটিউব চ্যানেলের স্বত্বাধিকারী তামজিদ আতুল জানান, ধরা যাক, একটি নাটকের বাজেট ৩ থেকে ৭ লাখ টাকা। সেই বাজেটের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পারিশ্রমিক শুধু একজনকেই দিতে হয়। একাধিক প্রযোজকের অভিযোগ, ইউটিউব নাটকে ভিউয়ের দোহাই দিয়ে পারিশ্রমিক বাড়াতেন তারকারা। যে কারণে পারিশ্রমিক বাড়ানো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনও হয়েছে, কোনো কোনো তারকা বছরে দুইবার পর্যন্ত পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন।

প্রযোজকেরা আরও জানান, দেশের অন্য সেক্টরের মতো এখানেও অরাজকতা ছিল। তামজিদ আতুল বলেন, ‘একটা নাটকের ৬০ বা ৭০ শতাংশ টাকা একজন আর্টিস্টকে দিলে বাকি আর কী থাকে। যেভাবে রাজস্ব কমছে, সেখানে আগের মতো বড় বাজেটের নাটক নির্মাণ করে পোষানো সম্ভব না। শিল্পীদের পারিশ্রমিক কমাতে হবে। কারও পারিশ্রমিক তিন ভাগের এক ভাগ কমানো উচিত। আগের জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। অনেকের অর্ধেক কমাতে হবে। না হলে ইন্ডাস্ট্রি সামনে আরও বেশি বিপর্যয়ের দিকে যাবে।’

নাটকের বড় অংশ পারিশ্রমিক নেন অভিনয়শিল্পীরা। ছবি: কোলাজ

একই কথা বললেন পরিচালক ও প্রযোজক মোস্তফা কামাল রাজ। নাটকের শীর্ষ চ্যানেলের একটি তাঁর সিনেমাওয়ালা ইউটিউব চ্যানেল। অভিজ্ঞতা থেকে এই পরিচালক জানান, নাটক নির্মাণ একেবারেই কমেছে। আগের মতো বিনিয়োগ নেই। ঝুঁকি নিয়ে কেউ শুটিং করছেন না। এখান থেকে বের হওয়া দরকার। রাজ বলেন, ‘নাটকের পারিশ্রমিকের বড় অংশই একজন তারকাকে দিতে হয়। একটা সময় নাটক থেকে আয় থাকলেও এখন আর সেটা নেই। বিজ্ঞাপন অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। স্পনসরের অভাবে আমি নাটক মুক্তি দিতে পারছি না। তারা বলছে ফান্ড নেই। আবার নাটকের মধ্যে ইউটিউব বিজ্ঞাপন ৮০ শতাংশ কমে গেছে। যে কারণে নাটকের ভিউ থাকলেও আয় অনেক কমেছে। এতে বেশি বাজেটের নাটক থেকে আয় করা সম্ভব নয়। সবার আগে দরকার বাজার রান করা। এ জন্য তারকাদের পারিশ্রমিক কমানোর দরকার আছে। এখন জরুরি সবাই মিলেই আগের জায়গায় মার্কেটকে নিয়ে যাওয়া। শিল্পীসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

প্রয়োজনে পারিশ্রমিকে ছাড় দিতে চান মুশফিক আর ফারহান, তৌসিফ মাহবুব। কোলাজ
স্পনসরের অভাবে আমি নাটক মুক্তি দিতে পারছি না। তারা বলছে ফান্ড নেই। আবার নাটকের মধ্যে ইউটিউব বিজ্ঞাপন ৮০ শতাংশ কমে গেছে। যে কারণে নাটকের ভিউ থাকলেও আয় অনেক কমেছে।
মোস্তফা কামাল রাজ

ইউটিউবকেন্দ্রিক চ্যানেলগুলোতে মোশাররফ করিম, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, মেহজাবীন চৌধুরী, নিলয় আলমগীর, ফারহান আহমেদ জোভান, তৌসিফ মাহবুব, মুশফিক আর ফারহানসহ কিছু তারকার কদর বেশি। এসব তারকার পারিশ্রমিক নাটকপ্রতি ২ থেকে ৪ লাখ টাকা। কখনো আরও বেশি। আবার কেউ সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে পারিশ্রমিক কমিয়েও কাজ করেন।

পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ। ছবি: ফেসবুক

এই অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে তৌসিফ মাহবুব জানান, তিনি যৌক্তিক জায়গা থেকে পারিশ্রমিক বাড়িয়েছিলেন। কাজের মানে গুরুত্ব দিয়েছেন। সময় নিয়ে কাজ করতেন। কিন্তু এই বাজেট নিয়ে কখনোই কারও কাছ থেকে অভিযোগ শোনেননি। তিনি কখনোই বছরে দুইবার পারিশ্রমিক বাড়াননি। তৌসিফ বলেন, ‘সবকিছুর সঙ্গে সমন্বয় করেই আমি পারিশ্রমিক নির্ধারণ করি। এখন যদি বলা হয় ইন্ডাস্ট্রির ঘুরে দাঁড়ানোর স্বার্থে বাজেট কমাতে হবে, তাহলে অবশ্যই ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে যৌক্তিকভাবে সিদ্ধান্ত নেব। এখানে ব্যক্তির চেয়ে সবার স্বার্থ আগে দেখতে হবে। সেক্রিফাইস করতে হলে করব। আমরা এটাই চাই, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াক। একদিন হয়তো যোগ্যতা আমাদের আরও বেশি বাজেট এনে দেবে।’

নাটক এগিয়ে নিতে সবাইকে এগিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন প্রযোজকেরা। ছবি: কোলাজ
এখন স্পনসর এলে কতটা কমেছে? আগে ৬ টাকা স্পনসর পাওয়া গেলে এখন যদি ৪ টাকা কমে যায়, তাহলে এক কথা। তখন বাজেটে চাপ তৈরি হবে। সেখানে কতটা কমেছে, সেটাও প্রশ্ন। এ ছাড়া আগে যাঁরা বিনিয়োগ করছেন, তাঁরা একেবারে বিনিয়োগ বন্ধ করাটাও প্রশ্ন রাখেন। তবে আমার জায়গা থেকে নাটকের পাশে আছি।’
মুশফিক আর ফারহান

সর্বাধিক পারিশ্রমিক পাওয়া শিল্পীদের আরেকজন অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান। তিনি বলেন, ‘নাট্যাঙ্গনে আমাদের কাজের সংখ্যা কমেছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়োজনে যদি পারিশ্রমিক কমাতে হয়, তাতে অবশ্যই কমাব। আমার মনে হয়, সব শিল্পীই কমাবেন। কোনো সিদ্ধান্ত হলেই তার সঙ্গে আছি।’ তবে তিনি মনে করিয়ে দিলেন, কম বাজেটে নাটক বানানোর সুযোগে কেউ যেন আবার সুযোগসন্ধানী না হয়ে ওঠেন। তাহলে শিল্পীরাও ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এই সময় তিনি নাটকের স্পনসর নিয়েও কথা বলেন। মুশফিক বলেন, ‘এখন স্পনসর এলে কতটা কমেছে? আগে ৬ টাকা স্পনসর পাওয়া গেলে এখন যদি ৪ টাকা কমে যায়, তাহলে এক কথা। তখন বাজেটে চাপ তৈরি হবে। সেখানে কতটা কমেছে, সেটাও প্রশ্ন। এ ছাড়া আগে যাঁরা বিনিয়োগ করছেন, তাঁরা একেবারে বিনিয়োগ বন্ধ করাটাও প্রশ্ন রাখেন। তবে আমার জায়গা থেকে নাটকের পাশে আছি।’