‘ছাদে খেলতে যাওয়া বাচ্চাটার কী দোষ ছিল’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র–জনতার পক্ষে সরব ছিলেন তরুণ অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান, জানালেন তিনি।
‘স্বাধীনতার সুখ চারপাশে। আহ্, কী যে শান্তি। কী যে মধুর।’ ছাত্র–জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর এক ফেসবুক বার্তায় লিখেছিলেন সাদিয়া আয়মান।
এই আন্দোলনে শিল্পীদের একটি অংশ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বিপরীতে শিক্ষার্থীদের পাশেও ছিলেন অনেকে। শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা নিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকেই অধিকার আদায় করতে চাই। আমি সরকারি চাকরি নিয়ে খুব একটা আগ্রহী ছিলাম না। তাই বলে শিক্ষার্থীরা যেটা নিয়ে আন্দোলন করছে, সেটা নিয়ে কথা বলব না, এমনটা তো হয় না।’
‘আমি বাস্তবেও সব সময় যা কিছু সত্য, যা ন্যায্য, তা নিয়ে কথা বলি। আমি সব সময় সত্যের জয় চেয়েছিলাম। মানুষ যেন ন্যায্যতা পান, সেটাই চেয়েছিলাম। সে কারণেই আমি আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম।’ প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন সাদিয়া আয়মান।
‘বাচ্চাটার কী দোষ ছিল’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটির বাসার ছাদে খেলতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে সাড়ে ছয় বছরের রিয়া গোপ। রিয়া ছাড়া আরও অনেকে নিহত হয়েছেন। মানুষের মৃত্যু অনেকের মতো সাদিয়াকেও মর্মাহত করেছে।
সাদিয়া বলছিলেন, ‘যিনি (শেখ হাসিনা) এত দিন ধরে শাসন করেছেন; এত অত্যাচার করেছেন। গত ১০ থেকে ১৫ বছরের কথা বাদই দিলাম। কারফিউর মধ্যেও এত মানুষ মারছে। বাচ্চাগুলো মারছে। একটা বাচ্চা মেয়ে ছাদে খেলছিল, ওর কী দোষ ছিল? নাম না জানা কত মানুষ মারা গেছে।’
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে বাইরে চলে যাওয়াকেই ছাত্র–জনতার আন্দোলনের বিজয়ের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখেন সাদিয়া আয়মান। তাঁর ভাষ্যে, ‘যিনি সরকারে থাকা অবস্থায় এমন হত্যাযজ্ঞ চলেছে, সেই মানুষ পদত্যাগ করে পালিয়ে গেছেন। এটা পুরো দেশের সাধারণ মানুষের প্রাপ্তি। মানুষের বিজয়।’
শেখ হাসিনার পতনের খবরে দেশজুড়ে মানুষ বিজয়ের মিছিল করেছেন; বিজয় উদ্যাপন করেছেন।
আছে বিষাদও
বিজয়ের আনন্দের রেশ কাটার আগেই দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন স্থাপনা ও ভাস্কর্য ভাঙচুর, সাম্প্রদায়িক হামলা ও লুটপাট করেছে। বিষয়টি ব্যথিত করেছে তরুণ এই অভিনেত্রীকে।
‘বিভিন্ন স্থাপনা, ভাস্কর্যে ভাঙচুর ও লুটপাট করছে। এটা দেখে খারাপ লাগছে। আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, সেটাকে রক্ষা করতে হবে। এটা আমাদেরই দায়িত্ব। উনি পালিয়ে যাওয়ার পর খুশি হয়েছি, এটা ঈদের মতো আনন্দের। কিন্তু গণভবনে ঢুকে জিনিসপত্র নিয়ে আসায় খুব খারাপ লেগেছে।’ বলেন সাদিয়া আয়মান।
সাদিয়া আয়মান বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মিউজিয়াম পুড়িয়েছে, এটা দেখে খুব খারাপ লেগেছে। এটা পুনর্নির্মাণ হোক। আরেকটা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে, এটা লজ্জাজনক ছিল। ওনার মেয়ের জন্য অনেক ভুগেছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধু এটা ডিজার্ভ করে না। যতগুলো ভাস্কর্য ও মন্দির ভাঙা হয়েছে, সেগুলো পুনর্নির্মাণ করা হোক।’
আশা দেখছেন
দেশ গড়ার প্রত্যয়ে জাতীয় সংসদ ভবন পরিষ্কার ও ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ উপাসনালয় পাহারা দিচ্ছেন। এসব খবরে আশার আলো দেখছেন সাদিয়া।
সাদিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সংসদ ভবন পরিষ্কার করছেন এবং ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। মুসলিমরা মন্দির পাহারা দিচ্ছেন। এগুলো খুব ভালো লাগে। আমাদের দেশের মানুষ এতটা মানবিক দেখে ভালো লেগেছে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা দেশের জন্য এত কিছু করেছে, এটার জন্য আমি গর্ব বোধ করি।’
যেমন বাংলাদেশ চান
আগামী দিনের বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে সাদিয়া বলেন, ‘আমরা নতুন একটা বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষায় আছি। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধসহ সব ধর্মের মানুষ ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করব। ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে এসেছেন, তাঁর কাছেও আমাদের অনেক আশা রয়েছে। আশা করি, নতুন একটা বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছি।’