‘দুঃখ লাগে, আমরা ব্যর্থ হচ্ছি’

ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ক্যাফে ডিজায়ার দিয়ে নাম লেখান সারিকা সাবরিন। পরে ওটিটির কাজ দিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ঈদনাটক ও উপস্থাপনা নিয়েই ব্যস্ত। সারিকার খবর জানাচ্ছেন মনজুরুল আলম
সারিকা সাবরীন
ছবি: প্রথম আলো

বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর পাওয়া গেল সারিকাকে। জানালেন, বাসা বদল করবেন, তাই বাসা খুঁজছিলেন। ফোনকল বুঝতে পারেননি। তারকা হয়ে বাসা খুঁজতে গেলে কেউ চিনে ফেলেন না? সারিকা বলেন, ‘আমি কখনোই নিজেকে তারকা মনে করি না। আমার জীবনযাপন খুবই সাধারণ। বাসায় আমি একদম সাধারণ হয়ে থাকি। আর দশটা মেয়ে যেভাবে সংসার করে, আমিও তা–ই। সারাক্ষণ কাজের মধ্যে থাকি। মেয়েকে দেখাশোনা, তার জন্য টিফিন তৈরি, এটা–ওটা নিয়েই পরিবারের পেছনে সব সময় যায়। সেভাবে নিজের পছন্দে বাসা খুঁজছি। এতে পরিবারের অন্যরাও সহায়তা করে। কোনো কাজই আমার অপছন্দের নয়। বরং সব কাজ নিজের পছন্দে করতেই ভালোবাসি।’

জীবনকে যাপন
একটা সময় মাসে ৩০ দিন শুটিং করতেন সারিকা। কখনো দু-তিন দিন শুটিং না থাকলেও সেই দিনটাও কোনো অভিনয়শিল্পীকে ফোন দিয়ে শুটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতেন। এর মধ্যেই উপলব্ধি করেন, পরিবার ও নিজেকে সময় দেওয়া হচ্ছে না। সন্তান জন্মের পর সেটা আরও বেশি অনুধাবন করেন। একসময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও দূরে সরে যান। ‘একটা সময় বুঝতে শুরু করলাম, যে সময় চলে যাচ্ছে, সেটা আর ফিরে পাব না। সন্তানকে সময় দেওয়া উচিত। সময়ের মিস ইউজ করছিলাম। সেই থেকে কাজ কমিয়েছি। এখন আমার আর বাইরের কোনো জগৎ নেই। পরিবার নিয়েই জীবনকে যাপন করছি।’

সারিকা সাবরীন
ছবি: প্রথম আলো

প্রজন্মের ভাবনা
সম্প্রতি চারদিকে নানা ঘটনা ঘটছে। সেগুলো ভাবনায় ফেলে দেয় এই অভিনেত্রীকে। তাঁকে ভাবায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কি নিরাপদ একটি দেশ গড়ে উঠছে? ‘আমাদের এত সুন্দর একটা দেশ। কিন্তু দুঃখ লাগে, আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা কী রেখে যাচ্ছি! নতুনেরা এসে কী শিখবে? সে কতটা নিরাপদে জীবন যাপন করবে? সেই নিশ্চয়তা কি আমরা দিতে পারছি? একটা প্রজন্মকে কি আমরা ভবিষ্যতের সুন্দর আশার নিশ্চয়তা দিতে পারি না! আমাদের ব্যর্থতা কোথায়, জানি না। তবে চাইলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি দেশ দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করতে পারি। আমি আশাবাদী। ’

সারিকা সাবরীন
ছবি: প্রথম আলো

গেস্ট হতে গিয়ে হোস্ট
অভিনয় নিয়েই থাকতে চেয়েছিলেন। হঠাৎ একদিন বাংলাভিশন থেকে ফোন। অনুষ্ঠান করে দিতে হবে। ধরে নিয়েছিলেন, হয়তো অতিথি হয়েই যেতে হবে। কিন্তু প্রস্তাব শুনে অবাক। কারণ, তাঁকে নাকি হোস্ট হতে হবে। অনেক নার্ভাসনেস নিয়ে শুরু করেছিলেন ‘আমার আমি’ শো। সেই অনুষ্ঠান এবার চার বছরে পড়েছে। ‘শুরুতে ভাবতাম, উপস্থাপনা তো আমার কাজ নয়। দর্শক কীভাবে নেবেন, এগুলো ভাবতাম। কিন্তু এখন অনেক ভালো লাগে। দেখা যায়, শুটিংয়ে তো সহশিল্পী ছাড়া অন্যদের সঙ্গে দেখা হয় না। এখানে সবাই গেস্ট হয়ে আসে। বাসায় আসার মতো, সবার সঙ্গে আড্ডা হয়, খোঁজখবর জানা হয়। এটা দারুণ উপভোগ করি,’ বলেন তিনি। তরুণ উপস্থাপকদের জন্য কোনো পরামর্শ আছে? এমন প্রশ্নে সারিকা বলে, ‘পরামর্শ আমি দিতে পারব না। সেই জ্ঞান আমার নেই। জ্ঞান দেওয়ার শিক্ষা এখনো অর্জন করতে পারিনি।’

‘আমলনামা’র পোস্টার

‘ক্যাফে ডিজায়ার’ থেকে...
তিন বছর আগে, বিরতির পর চরকির অ্যানথোলজি সিনেমা ক্যাফে ডিজায়ার দিয়ে নজর কাড়েন সারিকা। পরে রায়হান রাফীর মায়া দিয়ে গত বছর আলোচনায় আসেন। সেই ধারাবাহিকতায় আবার ওটিটিতে তাঁকে আলোচনায় এনেছেন রায়হান রাফী। আমলনামায় তাঁকে জাহিদ হাসানের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর চরিত্রে দেখা গেছে। ওটিটি ও রাফী যেন তাঁর ভাগ্যের দুয়ার খুলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রায়হান রাফী এই সময়ের প্রতিভাবান একজন নির্মাতা। তার টিম গোছানো। সবচেয়ে ভালো লাগে, সে শুটিংয়ে চিত্রনাট্যের অনেক কিছু বদলে দেয়। সেটার প্রতিফলন পর্দায় দেখা যায়। বারবার ওটিটি আমাকে আলোচনায় আনছে। এখন আমি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি ওটিটির কাজে। রাফহান রাফীর মতো নির্মাতা পেলে তো বাড়তি পাওনা।’

সঙ্গে জাহিদ হাসান ও মোশাররফ করিম
সারিকার পছন্দের অভিনেতাদের মধ্যে শীর্ষে জাহিদ হাসান ও মোশাররফ করিম। সেই অভিনেতাদের সঙ্গেই দীর্ঘ বিরতির পর কাজ করা। একসঙ্গে জাহিদ হাসানের সঙ্গে করেছেন আমলনামা; অন্যদিকে সারিকা আর মোশাররফ করিমকে দেখা গিয়েছিল সিকান্দার বক্স নাটকে। দীর্ঘদিন পর তাঁরা আবার ঈদনাটকে অভিনয় করছেন। সারিকা বলেন, ‘জাহিদ ভাই অনেক মজার মানুষ। মোশাররফ ভাইও তা–ই। শুটিংয়ে তাঁরা প্রাণবন্ত থাকেন। সব সময় হাসানোর ওপর রাখেন। এবার ওয়েবের শুটিংয়ে গিয়ে সব সময় জাহিদ ভাইয়ের কারণে হেসেছি। সবচেয়ে বড় কথা শিক্ষা। তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার থাকে। অনেক দিন পর দুজন প্রিয় অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে অভিনয় করেছি। এমন শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করলে অল্প কাজেই অভিনয়ের ক্ষুধা মিটে যায়।’