বাস্তব কি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বাসার-তটিনীর নাটকটি
মা–বাবা আর তিন ভাই-বোনের সংসার। ভাই-বোনের মধ্যে সজল সবার বড়। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার। বাবার বয়স হয়েছে। টেনেটুনে সংসারটা চলে। স্নাতক শেষ করেছে সজল। পরিবারের হাল ধরতে চাকরির জন্য চেষ্টা করা উচিত তার। কিন্তু তার স্বপ্ন উচ্চতর পড়ালেখার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যাবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় যেতে হলে বড় অঙ্কের টাকা প্রয়োজন। টাকার জোগাড় হবে কীভাবে? বাবা বাড়ি, জমিজমা বন্ধক রেখে ও ধার করে টাকার ব্যবস্থা করে দেয় তাকে। অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনা হয় সজল। খায়রুল বাসার ও তটিনী অভিনীত ‘দূরদেশ’ নাটকের শুরুর গল্পটা এমন। সজল চরিত্রে খায়রুল বাসার অভিনয় করেছেন। আর তটিনী অভিনয় করেছেন মিতু চরিত্রে।
অভিনয়ের দক্ষতা দিয়ে চরিত্র দুটিকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন দুজন।
মিতু গ্রামের সহজ, সরল ও শিক্ষিত তরুণী। মন-প্রাণ উজাড় করে সজলকে ভালোবাসে। মনেপ্রাণে চায়, সজল যেন অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে সফল হতে পারে। পাশাপাশি একটা ভয়ও উঁকি দেয় মনে। বিদেশে গিয়ে সজল তাকে ভুলে যাবে না তো? সজল অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর পরে কী ঘটে?
অস্ট্রেলিয়ায় সজলের থাকার জায়গা ও খাওয়ার অসুবিধা হয় না। এক বড় ভাইয়ের বদৌলতেই সহজে সব মিলে যায়। কয়েক দিন যেতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সজলের। চেষ্টা করে কাজ জোগাড়ের পর টিউশন ফির খরচ কিছুটা তুলতে পারলেও বাড়ি পাঠানোর টাকা জোগাড় করতে পারে না সে। ফলে মাসে মাসে দিতে চাওয়া টাকা না পেয়ে পাওনাদারেরা বাড়ি এসে বাবাকে হুমকি দিয়ে যায়।
টাকা না দিতে পারলে বাড়ি, জমিজমা সব বেহাত হয়ে যাবে। বাড়ি থেকে টাকা দেওয়ার জন্য ফোন করে সজলকে সবটা জানায়। রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ থেকে শুরু করে ফুড ডেলিভারি পর্যন্ত সজল যে কাজ পায়, সেটাই করতে শুরু করে। কাজ করতে করতে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। আর এই সময়টাতে তার রুমমেটরা ও প্রেমিকা মিতু তাকে সমর্থন দেয়। ফোনে কথা হলেই মিতু বলে, সব ঠিক হয়ে যাবে।
সুস্থ হয়ে আবারও টাকা উপার্জনের জন্য পরিশ্রম করতে শুরু করে সজল আর এদিকে গল্পও এগোতে থাকে। একটি দৃশ্যে যে বড় ভাইয়ের কাছে অস্ট্রেলিয়ায় এসে সজল ওঠে, কথোপকথনের এক পর্যায়ে সজলকে সে বলে, দেশে যদি চাকরির প্রপার সুযোগ-সুবিধা থাকত, তাহলে কি এই দূরদেশে আসতাম…কথাটা যেন চোখের সামনে রূঢ় বাস্তবতাকে তুলে ধরে। রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করতে করতে ক্লান্ত পর্যুদস্ত সজলকেও বলতে শোনা যায়, ‘পড়ালেখা করতে এসে পড়ালেখা বাদ দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে...।’
দেশের বাইরে গিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে কত পরিশ্রম করে টিকে থাকতে হয়; সবার জার্নি যে সহজ হয় না, সেই বাস্তবতার প্রতিচ্ছবিই যেন উঠে এসেছে নাটকটিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সজল কি সফল হতে পেরেছে? মিতুর যে সংশয় তৈরি হয়েছিল, দূরে গিয়ে সজল তাকে ভুলে যাবে না তো? তারই–বা কী হলো। এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে দেখে নিতে পারেন ‘দূরদেশ’ নাটকটি। মেজবাহ উদ্দিন সুমনের চিত্রনাট্যে নাটকটির নির্মাতা রুবেল হাসান। খায়রুল বাসার ও তটিনী ছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিজানুর রহমান, জিয়াউর রহমান রনি, শিল্পী সরকার, ডা. জাকির পারভেজ প্রমুখ।