হুমায়ুন ফরীদির জীবনে কত গল্প...
২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আজকের দিনে অগণিত ভক্তকে কাঁদিয়ে অনন্তকালে যাত্রা করেন কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। আজ প্রিয় অভিনেতার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। অভিনেতার প্রতিটি কথা, বাক্য, জীবনদর্শন এখনো গেঁথে আছে ভক্তদের হৃদয়ে। সেটে সবাইকে কৌতুকে মাতিয়ে রাখতেন। থাকতেন সবার মধ্যমণি হয়ে।
জীবনে অনেক পাগলামি করেছেন হুমায়ুন ফরীদি। দেশ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাবার নিয়ে মজাচ্ছলে গল্প বলেছেন ভক্তদের কাছে। কই মাছের গল্প দিয়ে সাক্ষাৎকারটি শুরু করেন অভিনেতা। গল্পটা অনেকটা এ রকম, হুমায়ুন ফরীদি সিনেমা নিয়ে তখন দারুণ ব্যস্ত। সেটে একদিন বাবুর্চি অভিনেতার কাছে জানতে চাইলেন, তিনি কী খাবেন দুপুরে? হুমায়ুন ফরীদি উত্তরে বলেছিলেন, তোমরা যা দাও, তখন বাবুর্চি বলে উঠলেন, আপনি কখনো কিছু বলেন না, আপনি কিছু বলেন, আমরা সেটা বানাই। তখন হুমায়ুন ফরীদি বাবুর্চিকে বলেন, ‘ভাই কই মাছ খাওয়াইও যদি পারো।’ এর পর থেকে সিনেমার শুটিং থাকলে হুমায়ুন ফরীদির জন্য কই মাছ থাকতই। শুধু সিনেমাতেই নয়, নাটকেও কই মাছই পরিবেশন করা হতো প্রিয় অভিনয়শিল্পীর জন্য।
ঝাল পছন্দ হুমায়ুন ফরীদির। এমনকি অবাক তথ্যও দিয়েছিলেন শিল্পী। তিনি বলেন, বিদেশে গেলেও আমার পকেটে কাঁচা মরিচ থাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময়ে বন্ধুর বোন খাবার নিয়ে গিয়েছিল, বন্ধু গোসলের পর খাবেন, তার আগেই বন্ধুদের নিয়ে হুমায়ুন ফরীদি সেই খাবার খেয়ে সাবাড় করে খালি বক্স রেখে এসেছিলেন বন্ধুর রুমে। এমনকি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে ঈদে কোরবানির জন্য কেনা স্যারের গরুও চুরি করেছেন বন্ধুরা মিলে। সেই গরু সাভার থেকে কসাই এনে ২০ জনের জন্য ১৫ কেজি রান্না করা হয়েছিল, বাকিটা স্যারকে দিয়েছিলাম। সার তো হতভম্ব। ঈদের দিন সকালেই নতুন গরু কিনেছিলেন তিনি।
হুমায়ুন ফরীদি বলেন, মানুষের ভালোবাসা, ছবি তোলা, অটোগ্রাফ এগুলোর জন্য সচরাচর বাইরে যাওয়া হতো না। তবে মানুষ এমন না করলেও খুব খারাপ লাগবে। মঞ্চ থেকে অভিনয়ে আসার যাত্রাটাও ভক্তদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন তিনি। হুমায়ুন ফরীদি বলেন, অভিনয়ে আসার পেছনেও গল্প আছে। চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম অনুষ্ঠান করতে, তখন আফজালরা তারকা, তাদের জন্য এসেছিল মার্সেডিজ, আর আমাদের জন্য টেম্পো। এটা দেখে আঘাত পেয়েছিলাম। এমন বৈষম্য মানতে পারিনি। রাতে খাওয়ার পর আফজালকে বললাম, আমাকে নায়ক হতে হবে, সে বলল কেন বন্ধু?
তোকে এত দিন ধরে বলেছি কর! আমি বললাম, তোদের জন্য এসেছে মার্সেডিজ, আমাদের জন্য টেম্পো। যদিও সবাই আমাদের সঙ্গে টেম্পোতেই এসেছিল, মার্সেডিজে কেউ উঠে নাই। আমি বললাম, অভিনয় করব। আফজাল ঢাকায় এসে পরপর চার-পাঁচটা নাটক করল আমাকে নিয়ে কেন্দ্রীয় চরিত্রে। তারপর টেলিভিশন তারকা বা হিরো হয়ে গেলাম। যদিও কখনো হিরো হতে চাননি, বরং অভিনয়শিল্পী হতে চেয়েছিলেন সবার প্রিয় হুমায়ুন ফরীদি।
ছোটবেলায় অনেক দুরন্তপনা ছিল অভিনেতার। মার খেয়েছিলেন প্রচুর। নাওয়া–খাওয়া ভুলে গিয়ে সারা দিন ঘুড়ি ওড়াতেন হুমায়ুন ফরীদি।