কেন টিকে আছে নিলয়–হিমির জুটি
‘একই অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কেন বারবার অভিনয় করেন। মিডিয়াতে কি আর কোনো নায়ক–নায়িকা নেই,’ ভক্ত ও সহকর্মীদের কাছ থেকে কথাগুলো শুনতে হয় এই জুটিকে। কারণ, তাঁরা একসঙ্গে অভিনয় করেছেন ১২০টির বেশি নাটকে। বলছি অভিনয়শিল্পী জুটি নিলয় আলমগীর ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমির কথা। বেশির ভাগ প্রযোজক ও পরিচালক একসঙ্গেই দুই অভিনয়শিল্পীর শিডিউল চান। কেউ গল্প দেওয়া মানেই সেখানে তাঁরা দুজনই আছেন। আবার এমনও হয়, শুটিংয়ে তাঁদের একসঙ্গে না দেখলেই ভ্রু কুঁচকে যায় ক্যামেরা–লাইটম্যানসহ অন্যান্য কলাকুশলীর। এমনও হয়েছে মাসজুড়েই ক্যামেরার সামনে তাঁরা অভিনয় করেছেন। এই তারকাদের জুটি হিসেবে একসঙ্গে টিকে থাকার গল্পও যেন নাটকের মতোই।
২০১৬ সালের কথা। এটিএন বাংলার ‘জলে ভেজা রঙ’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন নিলয় ও হিমি। পরে আরও দু–তিনটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন। একসঙ্গে টুকটাক অভিনয় করতেন। জুটির কথা তাঁরা কখনোই ভাবেননি।
করোনার মধ্যে একসঙ্গে তাঁরা একক নাটক ‘বন্ধুর বউ’ ও ‘বিয়ে পরীক্ষা’য় অভিনয় করেন। পরবর্তী সময়ে বুঝতে পারেন, দর্শকেরা একসঙ্গে তাঁদের কাজ করা পছন্দ করেছেন। তাঁদের জুটি বেঁধে অভিনয় করাতে এগিয়ে আসেন প্রযোজক ও পরিচালকেরা। তার পর থেকে টানা একসঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছেন নিলয়-হিমি। একসঙ্গে তাঁদের ৩৫টি নাটকের ভিউ কোটির ওপরে।
জুটি হিসেবে কাজ করার কয়েকটি কারণের কথা বললেন নিলয় আলমগীর। সেগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে কো-আর্টিস্ট হিসেবে হিমির সঙ্গে তাঁর ভালো বোঝাপড়ার কথা। অভিনয়ে কমফোর্ট একটা জোন থাকে। দ্বিতীয়ত, দর্শক, পরিচালক ও প্রযোজকদের পছন্দ।
এই প্রসঙ্গে নিলয় প্রথম আলোকে আগে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘অনেক সহশিল্পীই আছেন, যাঁরা শিডিউল নিয়ে ঝামেলা করেন। শিডিউল মেলানো কষ্ট হয়ে যায়। অনেকে শুটিংয়ের তারিখ নিয়েও গড়িমসি করেন। ডেট দিতে চান না। এখন আমি তো এই নায়িকা ওই নায়িকা তাঁদের পেছনে শিডিউলের জন্য বারবার কথা বলতে পারব না। এখন হিমির মধ্যে এই আচরণগুলো নেই। যে কারণে একসঙ্গে কাজ করতে করতে সংখ্যাটা বেশি হয়ে গেছে।’
একসঙ্গে বেশি অভিনয় করার কারণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ থাকে বৈচিত্র্য আনা। অনেক সময় এমনও হয় গল্প প্রায় এক। আবার রোমান্টিক, কমেডি ধারার এই গল্পগুলোর কস্টিউম, লোকেশন এক। গ্রামের গল্প হলে ভিন্নতা আনা যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বা শহরের মেয়ে হলে আলাদা নজর কাড়তে কস্টিউম নিয়ে হিমিকে আলাদা সময় দিতে হয়। অভিনেত্রী হিমি বলেন, ‘অনেক সময় তো দর্শক জিনস টপ দেখলে মন্তব্য করে ফেলেন, “একই রকম গল্পের নাটক মনে হচ্ছে।” যে কারণে এখন একই লোকেশনে বেশি কাজ করছি না। আগে উত্তরায় বেশি শুটিং করতাম, এখন ভিন্নতা আনতে ঢাকার বাইরে কুয়াকাটা, কক্সবাজার, চট্টগ্রামেও যাচ্ছি। এখন দর্শক, পরিচালক ও প্রযোজক আমাদের একসঙ্গে দেখতে চান, আমরা তাঁদের না করতে পারি না। ১০০–এর বেশি নাটক হয়ে যাবে, এটা ভাবিনি। এখন সব সময় চেষ্টা থাকে জুটি হিসেবে নতুন কিছু করার। আমরা জুটি হিসেবে খুশি। এর কারণ নিলয় ভাই অনেক হেল্পফুল, সহজেই আমাকে বুঝতে পারেন। আর আমি সব সময় প্রফেশনালিজমটা বজায় রাখতে চাই।’
শুটিংয়ে এখন তাঁদের জুটি ঘিরে প্রতিদিনই বেশ মজা হয়। কোনো দৃশ্যের ইম্প্রোভাইজ করতে গিয়ে তাঁদের যেন হাসির রোগে পেয়ে বসে। তবে অনেকেই বিরক্তও হন। এসব নিয়ে হিমির মাথাব্যথা নেই। বোঝাপড়াটাই আসল। জানা গেল, শুধু মজাই নয়, দুজন একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে কখনো কখনো নিজেরা কোনো দৃশ্যের ইম্প্রোভাইজ নিয়ে তর্ক ও বিতর্কে জড়িয়ে যান। এই মান–অভিমান বেশি সময় থাকে না। শুটিং ইউনিটগুলো তাঁদের সব সময় জুটি হিসেবে দেখতে চায়।
এই জুটির সঙ্গে নাটকগুলোয় ঘুরেফিরে একই পার্শ্বচরিত্রগুলো ঘুরেফিরে আসে। দেখা যায়, দু–তিনজন ঘুরেফিরে মা-বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন। যে কারণে দর্শকদের কাছে মনে হয় যেন একটি পরিবার। নিলয় ও হিমির নাটকের মধ্যে ‘জামাই–শ্বশুর’ সিরিজের নাটকগুলো দর্শকদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। সেই নাটকে শ্বশুর চরিত্রে বেশির ভাগ অভিনয় করেন মাসুম বাশার। এই অভিনেতা বলেন, ‘এই জুটির সঙ্গে একসঙ্গে এত অভিনয় করা হয় যে ভক্তরাও বিভিন্ন সময় প্রশ্ন করেন, “হিমি কি আসলেই আপনার মেয়ে? আর নিলয় আপনার জামাই?” এগুলো বেশ মজা লাগে। বোঝা যায় জুটির নাটকগুলো জনপ্রিয়। এর কারণ তাদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া।’ ‘বউ জামাই ৪২০’ নামের একটি নাটকের নিচে এক ভক্ত মন্তব্য করেছেন, ‘একসঙ্গে তাঁদের নাটক দেখতে দেখতে মনে হয় আসলেই তাঁরা এক পরিবারের সদস্য।’ জানা গেল, আজও তাঁদের উত্তরায় একসঙ্গে একটি নাটকের শুটিং করার কথা রয়েছে।
একসঙ্গে নিলয়–হিমি
প্রথম অভিনয়: ‘জলে ভেজা রঙ’ (২০১৬)
প্রথম আলোচিত নাটক: ‘বন্ধুর বউ’
দর্শকপ্রিয় নাটক: ‘আমরা গরিব’, ‘সংসার আমার ভাল্লাগেনা’, ‘ব্রেকআপ কোনো ব্যাপার না’, ‘ভুতুড়ে প্রেম’, ‘হবু ঘরজামাই’, ‘বিপদে পড়ে বিয়ে’
অভিনীত নাটকের সংখ্যা: ১২০টির বেশি