প্রথম আলো :
ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না...
শামীম হাসান সরকার: আমি শুটিংয়ে। এমন এক জায়গায় শুটিং করছি আর এমন চরিত্র, লুঙ্গি পরে আছি। যে কারণে সঙ্গে মোবাইল রাখা যায় না। ফোন কাছে না থাকায় ধরতে পারিনি।
প্রথম আলো :
ঈদের নাটকের শুটিং?
শামীম হাসান সরকার: হ্যাঁ, ঈদের নাটকের শুটিং গত সপ্তাহ থেকে শুরু করেছি। এখন ঈদের আগে টানা কাজ করে যাব। সেভাবেই প্ল্যান করা। এ জন্য এত দিন শুটিং করিনি। বিরতি নিয়েছিলাম।
প্রথম আলো :
দীর্ঘ বিরতি কেন?
শামীম হাসান সরকার: সত্যি বলতে কি, ভালো গল্প, চিত্রনাট্য পাচ্ছিলাম না। কমন গল্প, একই চরিত্র আর কত? এখন থেকে ছাড় দিতে চাই না। এখন বেঁচে থাকার জন্য টাকা দরকার আছে কিন্তু ‘জামাই-বউ’, ‘শালী-দুলাভাই’ টাইপের কাজ আর করব না। ভিউ না হোক, তবু হাস্যকর কোনো কাজে আমি নেই।
প্রথম আলো :
গত বছরের তুলনায় এ বছর কাজের সংখ্যা কম কেন?
শামীম হাসান সরকার: নতুন বছরেই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, অপ্রয়োজনীয় কমেডি, লাফালাফি করে, উচ্চ স্বরে সংলাপ বলে মানুষ হাসানো, এমন মানহীন কাজগুলো করব না। আমি চরিত্রাভিনেতা হিসেবে শুরু করেছিলাম। তখন অনেক ভালো গল্পে কাজ করেছি। বাস্তব সেই গল্পগুলোই দিন শেষে আমার পছন্দের কাজ। সেখান থেকে বের হয়ে ভিউর পেছনে ছুটেছি। সেটাও প্রয়োজন ছিল। এখন ভালো কাজ করতে চাই। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কাজ কিছুটা কমে গেছে। এতে আমি হতাশ নই। মিলিয়ন ভিউ আর ট্রেন্ডিং নিয়ে ভাবছি না। পছন্দমতো কাজ করতে চাই।
প্রথম আলো :
আপনার অভিনীত ‘ভাত’ নাটকটি ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে ১ নম্বরে ছিল। এতটা প্রত্যাশা ছিল?
শামীম হাসান সরকার: ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে ১ নম্বরে থাকবে, এমন প্রত্যাশা ছিল না। তবে গল্পটি দর্শকেরা পছন্দ করবেন, এটা মনে হয়েছিল। দর্শকদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। এর আগে সেলসম্যান নাটকও দর্শকেরা পছন্দ করেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে, আমি ভুল পথে নেই, ঠিক আছি। যেসব পরিচালক আমার সিদ্ধান্ত জানেন, তাঁরা আগেই বলে দিচ্ছেন, ‘শামীম ভাই, কমেডি ছাড়া প্রযোজক রাজি হচ্ছে না, ক্লিপস দিয়েই নাটক বানাতে চায়, এ জন্য আপনাকে নিতে পারছি না।’ পরিচালকদের এই ফিডব্যাক ভালো লেগেছে। তাঁরাও আমার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
প্রথম আলো :
বছরের প্রথম দিনই কেন নিজেকে বদলানোর সিদ্ধান্ত নিলেন?
শামীম হাসান সরকার: আমাকে শুনতে হয়েছে, কমেডি ছাড়া নাকি অন্য কিছু পারি না। এ কথা শুনে খুবই খারাপ লেগেছিল। এক অভিনেতা কেন শুধুই এক জনরার গল্পের মধ্যে আটকে থাকবে। সেখান থেকেই আমি নিজের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করেছি। এখন পরিচালকদের আগেই বলে দিই, আমি কী ধরনের বাস্তবধর্মী কাজ করতে চাই। এতে কাজ কমলে আমার কোনো সমস্যা নেই। যা করব বুঝে করব। আমি ভালো কাজ দিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
প্রথম আলো :
শোনা যায়, অনেক অভিনেতা আগেই সহশিল্পীর নাম বলে দেন। সহকর্মী বাছাইয়ে আপনার ভূমিকা কী থাকে?
শামীম হাসান সরকার: আমি বিনোদনজগতে আসার আগে থেকেই কিন্তু এগুলো দেখে আসছি। কে নায়িকা হবেন...এ বিষয়গুলো কিন্তু সিনিয়রদের দেখেই পরবর্তী প্রজন্ম শিখেছে। কিন্তু আমি কোনো দিনও বলি না, আমার সঙ্গে কোন নায়িকা অভিনয় করবে। এমন হয় যে চার-পাঁচজনের মধ্যে পরিচালক আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কাকে নেওয়া যায়, তখন বলি অমুককে নিতে পারেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিই না। আমাকে নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই।
প্রথম আলো :
কোনো বিষয় নিয়ে আক্ষেপ আছে?
শামীম হাসান সরকার: কিছু বিষয় নিয়ে তো আছেই। আমার সঙ্গে একসময় অনেক কাজ করেছে, পরে হয়তো সে একটু ভালো জায়গায় গেল; তখন আমারই আরেক সহকর্মী সেই অভিনেত্রীকে বলল, ‘ওর সঙ্গে কাজ কোরো না। আমি তোমাকে সাপোর্ট দেব। জুটি হয়ে কাজ করব।’
প্রথম আলো :
এমন ঘটনা ঘটেছেন আপনার সঙ্গে?
শামীম হাসান সরকার: হ্যাঁ, এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আমি গিয়েছি। তো, পরে সে কথা শুনে কেউ কেউ কাজ করতে চান না। এখন সেই নায়িকা তো আমার বোন বা আত্মীয় নন। তাঁকে তো জোর করে বলতে পারি না, আমার সঙ্গে জুটি হয়ে কাজ করেন। তবে সবার অতীত মনে রাখা উচিত। কেউ কারও জন্য কিছু করলে বেইমানি না করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।
সাক্ষাৎকার: মনজুরুল আলম, ঢাকা