সেই গোসল মোশাররফ করিমের ঈদের দিনের সবচেয়ে বড় উপহার...
ছোট পর্দায় এবারের ঈদে জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমের উপস্থিতি কিছুটা কম। তবে তাঁর ভক্তদের জন্য দারুণ একটি খবর হচ্ছে, ‘চক্কর ৩০২’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দা কাঁপাতে চলেছেন মোশাররফ। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন শরাফ আহমেদ জীবন।
২৬ মার্চ মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটির ট্রেলার এবং মুক্তির পর বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছে। সিনেমাটিতে মোশাররফ করিমকে দেখা যাবে মঈনুল চরিত্রে। মঈনুল একজন পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি কিনা নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে রহস্য উদ্ঘাটনে নেমে পড়েন। এটি থ্রিলার গল্প। সেই সঙ্গে মানবিক দিকও আছে। আরও আছে সম্পর্কের কথা।
সরকারি অনুদানের সিনেমাটির শুটিং হয়েছে ২০২৩ সালে ঢাকা শহর, সদরঘাট, মানিকগঞ্জ, দিয়াবাড়ি, জৈনাবাজারসহ নানা জায়গায়। দর্শক এ সিনেমায় পুলিশ কর্মকর্তা মঈনুলের চোখ দিয়ে রহস্য, মানবিক ও সম্পর্কের গল্প দেখবেন রুপালি পর্দায়।
তবে দর্শকের জানার আগ্রহ তো থাকেই, মোশাররফ করিমের শৈশব-কৈশোরের ঈদ কেমন ছিল? মোশাররফ বলেন, ‘শৈশব-কৈশোরের ঈদ মানেই ছিল আমার কাছে অপার অপেক্ষা। এ অপেক্ষার অন্য নাম আনন্দ। এই যুগে অপেক্ষা বলে যেন কোনো ব্যাপার আর নেই। অপেক্ষা এখন উপেক্ষার জিনিস। সবকিছু আমরা তৎক্ষণাৎ হস্তগত করে ফেলতে চাই। অথচ অপেক্ষাই তো প্রাপ্তিকে দুর্লভ আর মধুর করে তোলে।’
আর কী কী ঈদের আনন্দকে মধুর করে তুলত? ‘নতুন জামাকাপড়, মায়ের হাতের সুস্বাদু রান্না, সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া, অবাধ ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা—এ সবকিছু একসঙ্গে পাওয়ার জন্য সারা বছরের যে অপেক্ষা, ঈদের আনন্দকে মধুর করে তুলত সেটাই,’ বলেন মোশাররফ করিম।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পিঙ্গলকাঠি গ্রামে বেড়ে ওঠা মোশাররফ করিম অভিনয়জীবনে ঢুকে পড়ার পর ব্যস্ততার কারণে গ্রামে নিয়মিত ঈদ করতে যাওয়া যে হয় না, তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কারও। তাঁর ভাষ্যে, ‘গ্রামে আমি ঈদ করেছি দশম শ্রেণি পর্যন্ত। অভিনয়জীবনে ঢুকে যাওয়ার পর গ্রামে যাওয়া হয়েছে মাঝেমধ্যে। ব্যস্ততার কারণে বহু বছর গ্রামে যাওয়াও হয় না। ঢাকায় ঈদের দিনে সেই বিশেষ আনন্দ আর কোথায়! নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে অনেকটা সময় ঘুমিয়েই কেটে যায়। ঈদের ফাঁকা ঢাকা শহরে মন ছুটে যায় কৈশোরের গ্রামে।’
কেমন ছিল তাহলে মোশাররফ করিমের কৈশোর? ‘কৈশোর আমার কাছে সব সময়ই বিস্ময়ের। কিশোর মনে সবকিছু নিয়েই বিস্ময়। ছোট্ট একটা টিলা তার মনে এভারেস্টের মতো উঁচু পর্বত। সবুজ যেন অতি গাঢ় সবুজ। আকাশ নিশ্ছিদ্র নীল। কারণ, কিশোর মনে জীবন, সমাজ বা পূর্বধারণার হিসাব নেই। তার মন টলটলে স্বচ্ছ। সেখানে সবকিছুর প্রতিবিম্বই নিটোল আর আনন্দময়,’ কৈশোর নিয়ে এভাবেই নিজের ভাবনার কথা জানান মোশাররফ।
ঈদের দিনের শুরুটা কীভাবে হতো এবং সারাটা দিন কেমন কাটত, সেটাও জানিয়েছেন জনপ্রিয় এই অভিনেতা, ‘ঈদের দিন আমরা উঠে পড়তাম কাকডাকা ভোরে। সূর্য ওঠারও আগে। নদীতে ঝাঁপিয়ে গোসল করতে যেতাম। ঈদ উপলক্ষে কেনা হতো নতুন সাবান। সবাই দল বেঁধে সাঁতার কাটতাম। ঈদের ভোরের সেই অবগাহনের আনন্দ ছিল অপার্থিব। সেই গোসল ঈদের দিনের সবচেয়ে বড় উপহার—শাসনবিহীন সারাটা দিন। এদিন কারও কোনো শাসন নেই, চোখরাঙানি নেই, ধমক নেই। আহ্, কী স্বাধীন একটা দিন!’
বাবা, মা কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে ছোটদের আবদার থাকবেই থাকবে। বড়রাও চেষ্টা করেন সেই আবদার যথাসাধ্য পূরণের। মোশাররফ কী আবদার করতেন? ‘বায়না ধরে বাবার হাত ধরে বাজারে যেতাম। চা খাওয়া হতো বড়দের সঙ্গে বসে। বাবার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতাম আত্মীয় বা তাঁর পরিচিতদের বাড়ি,’ বলেন ‘চক্কর ৩০২’-এর পুলিশ কর্মকর্তা মঈনুল।
শৈশব-কৈশোরের ঈদের দিনগুলো যেন অতিদ্রুত শেষ হয়ে যায়। ক্ষণস্থায়ী বলেই বোধ হয় তীব্র ছিল ঈদের আনন্দ, এমনটাই মনে করেন মোশাররফ করিম।
[২০২৩ সালে প্রথম আলোয় প্রকাশিত মোশাররফ করিমের লেখা থেকে তথ্য সংগৃহীত]