১৬ বছর ধরে আফজাল হোসেন
কয়েক প্রজন্মের পছন্দের অভিনয়শিল্পী আফজাল হোসেন। অভিনয়ের বাইরে বিজ্ঞাপনচিত্র, নাটক ও টেলিছবি নির্মাণেও নিজের পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। মাঝেমধ্যে বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান উপস্থাপনাতেও তাঁকে দেখা গেছে। এমন একটি অনুষ্ঠান হলো ‘রংতুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’। চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠানটি ১৫ বছর ধরে উপস্থাপনা করে আসছেন তিনি। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আফজাল হোসেন চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে ভাবনার আদান–প্রদান করেন।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে ‘রংতুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’ অনুষ্ঠানের এবারের আয়োজনের উপস্থাপনায়ও থাকছেন আফজাল হোসেন। এ নিয়ে টানা ১৬ বছর অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন তিনি। এত বছর কীভাবে পার করেছেন, টেরই পাননি তিনি। অভিনয়ের বাইরে এই অনুষ্ঠান উপস্থাপনার কাজ খুব উপভোগ করেন আফজাল হোসেন। কারণ, বিভিন্ন প্রজন্মের চিত্রশিল্পীর সঙ্গে ভাবনার আদান–প্রদান চলে এই আয়োজনে, যা অন্য সময় সেভাবে সম্ভব হয় না।
‘রংতুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’ আয়োজন সম্পর্কে আফজাল হোসেন বললেন, ‘আমার কাছে এটাকে খুবই অসাধারণ আয়োজন মনে হয়। কেউ আসলে এ রকম ভাবতেও পারে না। শিল্পীরা এক জায়গায় হয় একটা দিনে, দিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ছবি আঁকেন। এটা অনেক বড় ব্যাপার। যদিও সেভাবে বিষয়টা দেখা হয় না। কিন্তু ব্যাপারটা অনেক বড়। দেশের শ্রেষ্ঠ শিল্পী থেকে শুরু করে বর্তমান ও যাঁরা আগামীর শিল্পী হবেন, তাঁরা সবাই একত্র হয়ে এ দিনে ছবি আঁকেন। ছবি আঁকার ধরনও খুব আলাদা। যা ভালো না লেগে উপায় নেই।’
কথায়–কথায় আফজাল হোসেন জানালেন, শুরুর দিকে অংশ নেওয়া অনেক চিত্রশিল্পীকে এখন আর এই আয়োজনে পাওয়া যায় না। তাঁদের ভীষণ রকম মিস করেন তিনি। বললেন, ‘এখন অনেককে পাই না, অনেকে বেঁচে নেই। তাঁদের মিস করি। দিনটার বিশেষত্ব হচ্ছে, দিনটা তো আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পীরা সেই দিনকে স্মরণ করার জন্য, শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সবাই একত্র হন, এটা অনেক বড় ব্যাপার। এটা মোটেও প্রাত্যহিক কোনো ব্যাপার নয়। খুব নিয়মিত ঘটনাও নয়।’
‘রংতুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’ চ্যানেল আইয়ের উদ্যোগে ১৬ বছর ধরে আয়োজিত হচ্ছে। এই আয়োজনে যুক্ত হয় পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানও। তবে এটার বাণিজ্যিক মূল্য না থাকলেও উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ও পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের শিল্পের প্রতি একধরনের দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে স্পষ্ট ভাষায় জানালেন আফজাল হোসেন। তিনি বললেন, ‘১৬ বছর ধরে চলতে থাকা এই আয়োজনের বাণিজ্যিক মূল্য হয়তো ও রকম নেই। কিন্তু মানুষের মেধা ও মননের বিকাশটা খুব সুন্দরভাবে ঘটায়। যা কিছু সুন্দর ও সৃষ্টিশীল, তার চর্চা হওয়া মানে একটা সাধারণ মানুষের নানাভাবে উপকৃত হওয়া। এটার জন্য চ্যানেল আই যে কাজ করছে, সেটা অনেক বড় ব্যাপার। তারা এর মাধ্যমে শিল্পের প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা প্রকাশ করছে।’
গত কয়েক বছরে অভিনয়ের নতুন মাধ্যম ওটিটিতেও আফজাল হোসেনের বিচরণ শুরু হয়েছে। প্রথম সিরিজ মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন। শুরুতেই বাজিমাত করেন তিনি। নেতিবাচক চরিত্রের আফজাল হোসেনের অভিনয় দেখে সবাই এক ব্যাক্যে বলছিলেন, এ এক অন্য আফজাল হোসেন। এরপর তাঁকে পেট কাটা ষ, কারাগার–এর মতো প্রশংসিত সিরিজেও দেখা গেছে। দুই সিরিজে তাঁর উপস্থাপন ও অভিনয় সবার মন কেড়েছে।
ওটিটির পাশাপাশি এখন আফজাল হোসেন মঞ্চেও কাজ করছেন। আছেন চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গেও। আফজাল হোসেন জানান, তিনি অভিনয়টাই করে যেতে চান। ১৯৭৫ সালে যার শুরু। ৪৮ বছর ধরে সম্মানের সঙ্গে এ কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।