ততক্ষণে আমি বুঝতে পেরেছি, জিম্মি জমে গেছে

প্রথমবারের মতো ওয়েব সিরিজে অভিনয় করলেন জয়া আহসান। ঈদে মুক্তি পাওয়া সিরিজ ‘জিম্মি’র জন্য প্রশংসিতও হয়েছেন। সম্প্রতি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে এই অভিনয়শিল্পীর নতুন চলচ্চিত্র ‘জয়া আর শারমীন’। নতুন একটা চলচ্চিত্রের শুটিংও করছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুর কাদের

প্রথম আলো:

গেল কয়েক বছর সিনেমা নিয়েই আপনার ব্যস্ততা। এর মধ্যে প্রথমবার ওয়েব সিরিজে অভিনয় করলেন। আগেও নিশ্চয় আপনার কাছে সিরিজে অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছিল, ‘জিম্মি’ দিয়ে শুরু করলেন কেন?

জয়া আহসান : সব সময় আমরা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চাই। ‘জিম্মি’র বিষয়টাও তেমন। প্রথমত, পরিচালক। দ্বিতীয়ত, গল্প। তৃতীয়ত, হালকা মেজাজের একটা কাজ আমি করতে চাইছিলাম, মাথাভারী কিছু করতে চাইছিলাম না। চতুর্থত, একটা ঠিকঠাক প্রজেক্ট, যেমনটা আমি চাই। আমার চরিত্রও ঠিকঠাক আছে এবং আমজনতাকেও কানেক্ট করতে পারছে—সে জন্য আমি ‘জিম্মি’ দিয়ে শুরু করলাম। এই সিরিজে আমার চরিত্রের অনেকগুলো স্তর দেখতে পেয়েছি। আমার অভিনীত রুনা লায়লা চরিত্রে লোভ, কাম, হিংসা, ভালোবাসা—সবই ছিল। একই চরিত্রের ভেতর এতগুলো শেডে অভিনয় করতে পারা তো অনেক আনন্দের ব্যাপার, তাই না।

প্রথম আলো:

‘জিম্মি’তে আপনি ছাড়া আর কার অভিনয় আপনাকে মুগ্ধ করেছে?

জয়া আহসান : সবার অভিনয় আমার ভালো লেগেছে। বিশেষ করে আমি বলব জয় আর ইরেশ যাকেরের কথা। তবে সবাই সবার জায়গা থেকে ভালো করেছে। এত ভালো ভালো সব অভিনয়শিল্পী না পেলে আমি কি অভিনয় করতে পারতাম?

জয়া আহসান
ছবি : প্রথম আলো

প্রথম আলো :

মুক্তির পর ‘জিম্মি’ কি দেখা হয়েছে?

জয়া আহসান : হ্যাঁ। একা নয়, কয়েকজন মিলে দেখেছি। আমি দেখার সময় মা ছিল, ভারত থেকে আমার একজন বন্ধু এসেছিল, সে–ও ছিল। আমার আম্মা কখনোই আমার কোনো কাজ দেখে খুব বেশি উচ্ছ্বসিত হন না। আম্মা ‘জিম্মি’ দেখেছেন রাত ১২টার সময়, ঈদের আগের দিন। ওই সময়টায় সাধারণত আম্মা ঘুমিয়ে পড়েন। আম্মার ভালো লেগেছে এ কারণে বুঝলাম, যখন মা ঘুমালেন না, শেষ পর্যন্ত দেখলেন। ততক্ষণে আমি বুঝতে পেরেছি, ‘জিম্মি’ জমে গেছে। এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ছিল। ‘জিম্মি’ দেখে মা দেখে হাসছেন, রিঅ্যাকশনও দিচ্ছেন। আশফাক নিপুন এবার হালকা জিনিসই বানাতে চেয়েছে। অথচ সবাই বলেছে, ‘মহানগর’–এর মতো এই না, সেই না। কথা হচ্ছে, ‘মহানগর’–এর মতো কিছু একটা কেন বানাবে? ভিন্ন রকম কিছু একটা বানাতে চেয়েছে, সে জন্যই তো আমার কাছে এসেছে, আমরা একসঙ্গে কাজটা করেছি। এটা হালকা মেজাজের কিন্তু চমকে যাওয়ার মতো কাজ নয়। তবে সবাই পছন্দ করছে। আমার বাসার হেল্পিং হ্যান্ডসও দেখেছে, তারও ভালো লাগল। ‘জিম্মি’তে যা দেখানো হয়েছে, এসব রিপু আমাদের সবার মধ্যে আছে। তাই সাধারণ বিষয়টা সবাই রিলেট করতে পেরেছে।

প্রথম আলো :

বাপ্পারাজের মতো নব্বইয়ের তারকাকে দেখলাম আপনার অভিনয় নিয়ে কথা বলেছেন। আপনি ফেসবুকে তা শেয়ারও করেছেন।

জয়া আহসান : বাপ্পা ভাইয়ের কথাগুলো ছিল ভীষণ অনুপ্রেরণার। অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও তাঁদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন। সবাই এটাও জানতে চেয়েছেন, রুনা লায়লার মতো যদি টাকা পাই, তাহলে কী করব। আমি তাঁদের বলেছি, জানি না রুনা লায়লার মতো টাকা পেলে কী করব, তবে সময় বলে দেবে কী করব। তখন আমার ভেতর লোভ কতটুকু কাজ করছে, এটাও বিষয়। এটা ঠিক যে আমি ‘জিম্মি’র রুনা লায়লার মতো সোনার গয়না কিনব না। পেলে যদি সেই টাকা আমার খরচ করতেই হয়, লোভটা আমি যদি আটকাতে না-ই পারি এবং বুঝতে পারি যে এটা অন্যায়ের টাকা, তাহলে পথকুকুরদের জন্য কিছু একটা করে দেব। আর আমাকে যদি খুব বেশি কিছু একটা খরচও করতে হয়, তাহলে কক্সবাজার থেকে ঘুরে অসতে পারি।

‘জিম্মি’তে জয়া আহসান
প্রথম আলো:

কক্সবাজার কেন?

জয়া আহসান : সমুদ্র আমার খুব ভালো লাগে। নিজেকে একটু সমুদ্র ট্রিপ দিলাম আরকি। অনেক দিন যাওয়া হয় না। আমার যদিও সমুদ্রের চেয়ে জঙ্গল ভালো লাগে বেশি। কিন্তু সমুদ্র দেখার একটা বিলাসিতা আছে না। আর ‘জিম্মি’তে রুনা লায়লা যেহেতু সমুদ্র দেখতে গেছে, আমার মধ্যে এখনো সেই চরিত্রটা তো রয়ে গেছে। আমরা তো সব চরিত্র থেকে একটু একটু নিয়ে বের হই। বড় হই। আমি এটা দেখতে চাই, চরিত্রটা করার পর আমার ভেতরে কী কী নিলাম। প্রতিটা প্রজেক্ট থেকে আমরা কিছু না কিছু শিখি। এরপর আমরা আমাদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাই—মানুষ হিসেবে, শিল্পী হিসেবে। এটা সবাই নেয়। কেউ যখন একটা বই পড়ে, কিছুটা ভেতরে ধারণ করে। নিজের অজান্তেই তা ঢুকে যায়। তাই আমিও বুঝতে চাই, ‘জিম্মি’ করার পর রুনা লায়লার লোভটা ঢুকল, নাকি উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঢুকল, হিংসাটা কেমন, সেটা দেখতে চাই।

প্রথম আলো :

আপনার লোভ আছে? কিসের?

জয়া আহসান : না না, কেন লোভ থাকবে না। আমার অনেক দিন বাঁচার ইচ্ছা। আমি আরও ভালো ভালো কাজ করি, এটাও লোভ। আমি আরও বেশি প্রাণপ্রকৃতির জন্য কাজ করতে চাই। মাকে যেন অনেক বেশি কিছু দিতে পারি, মায়ের সঙ্গে যেন বেশি সময় কাটাতে পারি, এটা খুব ইচ্ছা আছে।

প্রথম আলো:

‘জয়া আর শারমীন’ ছবিটি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। ছবিটি দর্শক কবে দেখতে পাবেন?

আরও পড়ুন

জয়া আহসান : মাত্র তো সেন্সর ছাড়পত্র পেল। মুক্তির আগে আরও বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া আছে। আশা করছি, এটা আরও কিছুদিন পর সবাই দেখতে পারবে।

প্রথম আলো :

নতুন ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন?

জয়া আহসান : এখনই কিছু করিনি। তবে কথাবার্তা চলছে, দেখা যাক কোন ছবি দিয়ে শুরুটা করতে পারি।

‘জিম্মি’ সিরিজের শুটিংয়ে জয়া আহসান
হইচইয়ের সৌজন্যে
প্রথম আলো:

ঈদ কেমন কাটল?

জয়া আহসান : ঈদ খুব ভালো কাটল। বাসার সবাই মিলে ঘুরতে গেলাম, সব আত্মীয়স্বজনের বাড়ি। গেট টুগেদার হলো। ঈদের সময়টায় আমি প্রথমে নানির কবর জিয়ারত করি, সেটা দিয়ে আমার ঈদ শুরু হয়। এরপর খালার বাড়ি, বোনের বাড়ি যাই। সন্ধ্যাবেলায় উত্তরায় আমার আরেক নানির বাড়ি অবশ্যই যেতে হয়। ওখানে না গেলে আমার ঈদ হয়ই না। আর প্রচুর খাওয়াদাওয়া করেছি।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

নিজে কি কোনো রান্নাবান্না করেছেন?

জয়া আহসান : না না, আমি শুধু খাওয়ার দলে আছি। আজও খিচুড়ি খেলাম, সবজি কাঁচা মরিচ ডলে খেলাম।

প্রথম আলো:

ঈদের এই ছুটিতে এমন কিছু দেখা বা পড়া হয়েছে, যা আপনাকে মুগ্ধ করেছে?

জয়া আহসান : এখনো কিছু দেখা হয়নি। তবে সুযোগ পেলে ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো দেখব। সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা আমাদের জন্য যদিও বেশ টাফ হয়, তারপরও গিয়ে দেখব। ইচ্ছা আছে।

প্রথম আলো :

শুনলাম, আপনি ‘তাণ্ডব’–এ অভিনয় করছেন, দীর্ঘ বিরতির পর আপনাকে ও শাকিব খানকে বড় পর্দায় দেখা যাবে।

জয়া আহসান : এটা নিয়ে আমি এখনই কিছু বলতে পারব না। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাদের সময়মতো ছবিটির ব্যাপারে কথা বলবে। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না, বলা যেতে পারে।