হুমায়ূন আহমেদের ‘আয়নাঘর’–রহস্য ফাঁস করলেন স্বাধীন খসরু
দিন কয়েক আগেই অভিনেতা স্বাধীন খসরু ফেসবুকে বলেছিলেন, ‘আয়নাঘর’ নিয়ে লিখবেন। অবশেষে কথা রাখলেন তিনি। আজ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে ‘আয়নাঘর’–এর কাহিনি ফাঁস করেছেন স্বাধীন। কী এই ‘আয়নাঘর’? এর সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের সম্পর্কই–বা কী?
স্বাধীন খসরু লেখা শুরু করেছেন রাজধানীর ধানমন্ডিতে হুমায়ূন আহমেদের বাসভবন দখিন হাওয়া থেকে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে। তাঁর লেখায়, ‘বিকেলের নাশতা শেষে আমাদের যাত্রা শুরু হয় নুহাশ পল্লীর উদ্দেশে। ঢাকা থেকে প্রথমে মিনিবাসে, তারপর প্রথমবারের মতো মহিষের গাড়িতে করে। গজারিবনের সরু কাঁচা লাল মাটির এঁটেল রাস্তা দিয়ে সারা শরীরে কাদামাখা যাত্রা শেষে পৌঁছালাম স্বপ্নের নুহাশ পল্লীতে। দীর্ঘ তিক্ত যাত্রা শেষে দীর্ঘ স্বস্তির নিশ্বাস। আমরা তিনজন, হুমায়ূন আহমেদ, মেহের আফরোজ শাওন আর আমি। নুহাশ পল্লীতে আমার প্রথম আসা। উদ্দেশ্য, নুহাশ পল্লী ভ্রমণ এবং আমার পরীক্ষামূলক প্রথম নাটকের শুটিং হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে। তখন আমাদের যৌথ প্রযোজনায় “চন্দ্রকথা” সিনেমার লোকেশন রেকি এবং প্রি-প্রোডাকশনের কাজ পুরোদমে চলছে। গান রেকর্ডিং চলছে।’
নুহাশ পল্লীতে যাওয়ার পর হুমায়ূন আহমেদ নিজে স্বাধীন খসরুকে সবকিছু ঘুরিয়ে দেখান। স্বাধীন লিখেছেন, ‘নুহাশ পল্লীতে প্রথম কোনো অতিথি এলে তিনি সব সময় এটা করে থাকেন। নুহাশ পল্লী গাইড ট্যুর। প্রবেশদ্বারের বাঁ দিক থেকে আমরা শুরু করলাম। প্রথমেই ৭০ প্রজাতির কয়েক শ আমগাছের চারা, মানে আমবাগানই বলা যায়। পুরো নুহাশ পল্লীতে যথারীতি গজারিবন ছিল, এগুলো কেটে নিজের পছন্দমতো সব ধরনের ফলের গাছ, ফুলের গাছ রোপণ করা হয়েছে। তবে বলে রাখা ভালো, গজারিবন কেটেছেন বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে। তারপর একে একে সব ধরনের গাছ, স্থাপনা, হাঁস–মোরগের খামার, হরিণের খামার, অস্ট্রেলিয়ান গাভির খামার পেরিয়ে পুকুরঘাটে পৌঁছালাম। পুকুরঘাটে কিছুক্ষণ বসে ধূমপানবিরতি। আবার পুকুরঘাটের বাঁ দিক দিয়ে পুকুরপাড় পুরো হেঁটে এই পাশ দিয়ে ঔষধি বাগানে ঢুকলাম। প্রায় হাজার ধরনের ঔষধি গাছ লাগানো আছে। প্রতিটি ঔষধি গাছের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক নাম বাংলা ও ইংরেজিতে প্লেটে লেখা আছে। পরিচয় করিয়ে দিলেন, দেখলাম, শুনলাম। যতই দেখছি, যতই ওনার কথা শুনছি, মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হচ্ছি।’
পরে হুমায়ূন আহমেদ জানান সন্ধ্যায় স্বাধীন খসরুকে নিয়ে নুহাশ পল্লী ট্যুর দেওয়ার কারণ। কারণটা হচ্ছে পরদিন সকালে স্বাধীন খসরু যখন ঘুম থেকে উঠবেন, দেখে সবকিছু মনে হবে অন্য রকম। তখন মোমবাতি জ্বলবে না, কোনো বৈদ্যুতিক লাইট থাকবে না। লাগবে অন্য রকম, মনে হবে আরেক নুহাশ পল্লী।
এরপরই লেখায় ‘আয়নাঘর’–রহস্য ফাঁস করেন স্বাধীন খসরু। তাঁর ভাষ্যে, ‘বাংলোতে ঢুকলাম, নুরুল হককে (বাংলোর প্রধান তত্ত্বাবধায়ক) ডেকে বললেন আমার রুমের তালা খুলে চাবি আমাকে দিয়ে দিতে। কাপড় বদলে শাওয়ার সেরে ড্রয়িংরুমে তাড়াতাড়ি আসতে বললেন। বলে উনি পাশে ওনার রুমে ঢুকে পড়লেন। নুরুল হক আমাকে নিয়ে রুমের তালা খুলতে রুমের সামনে। দেখতে পেলাম, রুমের দরজাতে বড় করে লেখা আছে “আয়নাঘর”।’
বাংলোতে মোট সাতটি রুম আছে রান্নাঘরসহ। প্রতিটি রুমের দরজায় লেখা আছে একটি নাম। আর প্রতিটি নামই হচ্ছে ওনার বইয়ের নামে নামকরণ। যেমন ‘আয়নাঘর’, ‘দেবী’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘অচিনপুর’, ‘ফেরা’।
‘আয়নাঘর’–রহস্য ভেঙে স্বাধীন খসরু আরও লিখেছেন, ‘আমার জন্য বরাদ্দ হলো আয়নাঘর। তখন থেকেই শুরু আমার আয়নাঘরের আবাসন। রুমের চাবি থাকত আমার কাছে। ঢাকা চলে এলে চাবি থাকত নুরুল হকের কাছে। বলে রেখেছিলেন, আমি না থাকলে যেন অন্য কাউকে এই রুম খুলে দেওয়া না হয় বা চাবি দেওয়া না হয়। সেই আমার, আমার আয়নাঘর।’