১৪ বছর বয়সে ২৬ বছরের নারীকে প্রেমপত্র
সত্তর দশকের শেষের দিকের কথা। সেই সময়ে পত্রিকায় কলমবন্ধুর একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে ১৪ বছরের কিশোরের। সেখানে লেখা, ‘বন্ধু হতে চাইলে চিঠি দিও।’ সেটা দেখে চিঠিতে সরাসরি ভালো লাগার কথা লেখেন এই কিশোর। কিন্তু তখনো তিনি জানতেন না, যাঁকে চিঠি লিখছেন, তিনি এই কিশোরের থেকে ১২ বছরের বড়। সেই চিঠি চলে যায় সেই ২৬ বছরের তরুণীর কাছে। চিঠিতে প্রেমের প্রস্তাবে বেশ রেগে চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, সেই চিঠির উত্তর ১৪ বছরের কিশোরের বাবা হাতে চলে যায়, এ ঘটনা ঘটেছিল অভিনেতা ফারুক আহমেদের জীবনে।
এই অভিনেতার ‘না বলা কথা’ বই এবার একুশের বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে। সেখানেই জীবনের নানা ঘটনা উঠে এসেছে। এই অভিনেতা বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত জীবনটা আড়াল করিনি। আমি জীবনে যত অপমানিত হয়েছি, আমার ব্যর্থতা, সফলতা, আমার প্রেম; প্রসঙ্গক্রমে যে কথাগুলো এসেছে, সেগুলো সবই এই বইয়ে তুলে ধরেছি। চাইলে কোনো ঘটনা বাদ দিতে পারতাম, তা করিনি। ব্যক্তিগত জীবন আড়াল করিনি, ৫টি প্রেম ছিল জীবনে। আমার স্ত্রী এসব প্রেমের কথা জানে।’
কিশোর বয়স থেকেই প্রেমের ঘটনাগুলো তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে প্রেমের ক্ষেত্রে বেশির ভাগই ছিল একক প্রেমের কথা। যে প্রেমের কথা কখনো প্রিয় মানুষকে বলতে পারেননি। আবার একটি সম্পর্ক থেকে তিনি নিজেই সরে এসেছেন। কিন্তু প্রেম নিয়ে তিনি কখনোই কাউকে ছোট করেননি। এমনকি কারও ক্ষতি করেননি। তবে প্রেমে পড়ে নিজের ক্ষতি করেছেন।
ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি একবার একটি মেয়েকে পছন্দ করলাম। সেই মেয়ে আমাদের পাশের বাসায় থাকত। তাকে কোনো দিনও ভালো লাগে, এমন কিছু বলিনি। হয়তো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, তখন চেয়ে থেকেছি। পরে মেয়েটি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। আর এসব প্রেম–ভালোবাসার কারণে বলা যায় আমার লেখাপড়ায় এক বছরের গ্যাপ পড়ে যায়। এ ঘটনাগুলো সবার জীবনেই কমবেশি রয়েছে, কিন্তু অনেকেই হয়তো বলবেন না। আমি বলেছি। এর কারণ, আমি সেই তরুণ বয়স থেকেই সাহসী।’
প্রেম নিয়ে কখনো কারও কাছ থেকে কি কড়া কথা শুনেছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাকে কেউ কখনোই কিছু বলেনি। কারণ, আমি নিজেই সরে এসেছি। তবে একবার যখন কলমবন্ধু হওয়ার জন্য চিঠি লিখেছিলাম, তখন সেই মেয়ে আমাকে চিঠির উত্তর দিয়েছিল। সেই চিঠি পড়ে যায় বাবার হাতে। সেই চিঠি নিয়ে বাবা আমাকে বলেছিলেন, “তোমার রোল নম্বর আগে ছিল ২, এ বছর হয়েছে ৯, এসব বাদ দিয়ে পড়ালেখা করো।” সেই চিঠি পড়ে দেখি, মেয়েটি তখন লিখেছিল, আমি একটা বেয়াদব। আমিও পরে বুঝতে পারি, সে আমার অনেক সিনিয়র। সেই দিনগুলো একজন তরুণের চোখে কেমন ছিল। সেটাই আমি নিজের মধ্য দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমার লেখায় সময়কে ধরতে পারবেন পাঠকেরা।’
ফারুক আহমেদ জানান, জীবনে নানা রকম ঘটনা থাকে। সেই ঘটনাগুলো জীবনকে নানাভাবে এগিয়ে নিয়েছে। কোনো ঘটনা তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে পরিপক্ব করেছে। ‘আমার জীবনের সব ঘটনা থেকেই আমি শিক্ষা নিয়েছি। হয়তো আমার যে সফলতা, সেগুলো শিক্ষার ফল। একটি কথা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারব, আমি জীবনে কখনোই কারও ক্ষতি করিনি। আমার সৎ সাহস সব সময়ই ছিল। আমার ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা আমার স্ত্রী সবই জানে। সে–ই ছিল আমার ৫ নম্বর প্রেম।’
গত বছর এই অভিনেতা জানিয়েছিলেন, প্রতিবছর বই প্রকাশ করতে চান। এটা তাঁর দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল। আগে ব্যস্ততার কারণে লেখালেখি হয়ে ওঠেনি। এখন থেকে লেখালেখির জন্য অভিনয়ের পাশাপাশি আলাদা সময় বের করছেন। তাঁর এই আত্মজীবনীমূলক বই ‘না বলা কথা’ থেকে বাদ যায়নি হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি। সর্বশেষ জানালেন, ‘হাও মাউ খাও’ নামে আরেকটি নাটকের বইও এসেছে বইমেলায়।