সব বলেও কিছুই বললেন না তুষি
‘কাজ করছি। কিন্তু কাজ নিয়ে কিছু বলা যাবে না। কবে, কখন মুক্তি পাবে, তা নিয়ে কিছুই জানি না। আমার কাজ শেষ। ছবি করেছি, করব, হবে, হচ্ছেও। সব রকম প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ—সব দিকেই আছি। হচ্ছে, হবে, চলমান।’ গত বুধবার বিকেলে নাজিফা তুষির সঙ্গে আলাপের শুরুটা এভাবেই। সব বলেও যেন কিছুই বললেন না। অথচ ‘হাওয়া’র মতো আলোচিত সিনেমা মুক্তির দুই বছর পরও তুষিকে পর্দায় দেখা যায়নি, ভক্ত-অনুসারীদের তাঁর নতুন কাজ দেখার অপেক্ষা যেন ফুরাচ্ছে না। এ সময়ে তাহলে কী করলেন তিনি? আলাপে আলাপে ওঠে অনেক প্রসঙ্গই।
প্রথমেই জানতে চাওয়া, কাজ নিয়ে জানতে চাইলে রহস্যময় উত্তর দিচ্ছেন কেন? বললেন, ‘ছবি নিয়ে কিছু বলা বারণ। এ কারণে আমিও কিছু খোলাসা করতেও পারছি না। আমিও হাঁপিয়ে উঠেছি। আমারও কিন্তু কাজের খবর জানাতে ইচ্ছা করে। ভক্তরাও অপেক্ষা করেন। সবাইকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, একটা কাজ শেষ করছি। আশাবাদী, কারণ ভালো হয়েছে। যাঁর সঙ্গে কাজ করেছি, তিনি আমার পছন্দের পরিচালক। তাঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা ছিল, সেটা হয়েছে। যে প্রসেসে কাজটা হয়েছে, এটা অনেকটা মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো।’
পরিচালক ও কনটেন্টের নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া কাজটিকে ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টি’র সঙ্গে তুলনা করেছেন নাজিফা তুষি। কারণ হিসেবে তুষি বললেন, ‘প্রথমত এই পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চাওয়ার ইচ্ছাপূরণ। এই পরিচালকের সঙ্গে যেকোনো কাজ করলেই খুশি হতাম। সেখানে যা করেছি, তা চিন্তার চেয়েও বেশি। এটার প্রসেস ও চরিত্র যা, তা মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো।’
মেজবাউর রহমান সুমনের হাওয়ার পর অনেক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন নাজিফা তুষি। ভেবেচিন্তে হ্যাঁ বলেছিলেন এই ছবির পরিচালক-প্রযোজককে। তবে কারা তাঁরা, সে বিষয়ে কুলুপ এঁটেছেন। জিজ্ঞেস করলে একটাই জবাব, ‘এখনই সিনেমা নিয়ে কোনো তথ্য দিতে পারব না। প্রযোজক-পরিচালকেরা সময়মতো জানাবেন।’
অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত রাখেননি নাজিফা তুষি। ‘হাওয়া’ মুক্তির পর ছয় মাস কোনো কাজ করেননি। তবে কয়েকটি অভিনয় কর্মশালা করেছেন। এর মধ্যে সৈয়দ জামিল আহমেদের কাছে একটা স্বল্পমেয়াদি ও মাস্টার্স কোর্স করেছেন। এর বাইরেও তাঁর কাছে অভিনয়, চিত্রনাট্য লেখা ও ভয়েস মডিউলেশনের অনেকগুলো কর্মশালা করেছেন। অভিনয়ে নিজেকে আরও এগিয়ে নিতে প্রাচ্যনাটের সঙ্গেও যুক্ত হন। কর্মশালায় পরিচালনার নানা কৌশল আয়ত্ত করলেও পরিচালনা নিয়ে কোনো ভাবনাচিন্তা নেই। তবে লেখালেখিটা উপভোগ করেন বলে জানালেন তুষি।
ঢাকা ও এর আশপাশে নতুন কনটেন্টের শুটিং করেছেন নাজিফা তুষি। নতুন এ কাজ তাঁকে দারুণ সমৃদ্ধ করেছে বলেও মনে করছেন। তুষি বললেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সঙ্গে যখন কাজ হয়, তখন নিজের মধ্যেও একধরনের ছাপ পড়ে। যেমন যখন আমি জামিল আহমেদ স্যারের তত্ত্বাবধানে ক্লাস করতাম, দশটা মিনিটও যে ওখানে কাটাতাম, সেটাই অনেক বড় পাওয়া ছিল। মনে হতো, এ সময়টায় আমার মধ্যে কিছু না কিছু ঢুকছে, যেটা নতুন।’
অভিনয়জীবন ১০ বছরের হলেও তুষির কাজের সংখ্যা কম। এটা তাঁর নিজের চাওয়া। কাজ কম করলেও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা থাকে বেশি।
তুষি বললেন, ‘অভিনয়শিল্পী হিসেবে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ লাগে নতুন নতুন চরিত্রে দেখার। বই পড়া কিংবা সিনেমা থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়। তবে একজন অভিনয়শিল্পী জীবন থেকেও অনেক কিছু শেখে। জীবনের পারিপার্শ্বিকতায় আরও বেশি কিছু শেখে। জীবনের ভ্রমণটা রোমাঞ্চকর হয়, যখন নতুন পরিচালক বা এমন একজন পরিচালকের (নতুন কনটেন্টের পরিচালক) সঙ্গে কাজের সুযোগ তৈরি হয়, নতুন দিক জানা যায়। যে কাজটা শেষ করলাম, এটার মাধ্যমে জীবনে নতুন একটা লেন্স যুক্ত হয়েছে, যেটার অন্য প্রেক্ষাপট থেকে বিশ্বকে দেখতে পাই। যদিও তিনি খুবই একাডেমিক নয় কিন্তু আমি শিখেছি। আমি আমার পরিচিতজন ও বন্ধুবান্ধবকে এসব বলেছি।’
তুষি জানালেন, তাঁকে আগামী বছর পর্দায় দেখা যাবে। একে একে তিনটি নতুন কাজ মুক্তি পাবে। আপাতত সে অপেক্ষাতেই থাকতে হবে।