চার্লি চ্যাপলিনের চরিত্রে অভিনয় করা আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা: ফারুক আহমেদ

অভিনেতা ফারুক আহমেদ। ছবি: ফেসবুক থেকে

ক্যারিয়ার নিয়ে আফসোসের শেষ নেই অভিনেতা ফারুক আহমেদের। এর কারণ, মঞ্চে তাঁর যেভাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেখানে থেকে একদমই আলাদা চরিত্রে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন। যে কারণে মঞ্চের বাইরে কমেডি নাটকের চরিত্রের কারণে তিনি দর্শকদের কাছে একভাবে পরিচিত। আড়ালেই থেকে গেছে তাঁর শৈল্পিক আরেক সত্তা।

ফারুক আহমেদ আফসোস করে বললেন, ‘নাটকে আমি একধরনের চরিত্র দিয়ে পরিচিতি পেয়েছি। পরে পরিচালকেরা আমাকে একই চরিত্রের জন্য ডেকেছেন। আমাকে ভিন্নভাবে কেউ আবিষ্কারের চেষ্টা করেননি। সিরিয়াস কাজে আমার ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। এটা একজন অভিনেতার জন্য কষ্টের কারণ।’

অথচ ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে শুধু কমেডি নিয়ে অভিনয়ের কোনো ইচ্ছাই ফারুক আহমেদের ছিল না। তখন বৈচিত্র্যপূর্ণ সব চরিত্রে নাম লিখিয়েছেন। এই অভিনেতা বলেন, ‘এখনো আলোচিত মঞ্চনাটকের মধ্যে “কেরামত মঙ্গল”, “যৈবতী কন্যার মন”সহ একাধিক নাটকের কথা প্রথম দিকে আসে। সেসব মঞ্চনাটকে আমি গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্রে অভিনয় করেছি। “কেরামত মঙ্গল” নাটকে কেরামত চরিত্রে অভিনয় করেছি। পরে হুমায়ূন আহমেদের নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছি। সেটাও আমার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। হুমায়ূন ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞতা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অনেকেই যে আমার ওপর ভরসা রাখতে পারেননি, সেটা খারাপ লেগেছে।’

অভিনেতা ফারুক আহমেদ

ফারুক আহমেদ মনে করেন, কমেডির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সময় জীবনবোধের গল্প বলা হয়েছে। সেই ধারায় হুমায়ূন আহমেদ–পরবর্তী সময়ে আর কেউ তেমন তাঁকে তুলে ধরতে পারেননি। যে কারণে তাঁকে একই ধারায় দিনের পর দিন অভিনয় করে যেতে হয়েছে। তিনি মনে করেন, যথাযথভাবে তাঁকে ব্যবহার করা হয়নি।

‘আমার যোগ্যতা অনুযায়ী আমাকে কেউ ব্যবহার করেননি। একজন অভিনয়শিল্পীর অভিনয় দক্ষতার ব্যবহার নিয়ে সব সময়ই আফসোস থাকে। সেই আফসোস আমার বেশি। দীর্ঘ প্রায় তিন যুগের ক্যারিয়ারে নিজের দক্ষতার কত ভাগ দিতে পারলাম, সেটা বলা কঠিন। তবে এটা বলা যায়, আমি সন্তুষ্ট নই। এখন যদি কমেডি নাটক দিয়ে ভালো মানের কাজের সুযোগ থাকত, তাহলে আফসোস থাকত না। কারণ, কমেডি বিশ্বমানের হতে পারে। আমি মনে করি, সেই জায়গায় যাওয়ার আমার যোগ্যতা আছে। কিন্তু আমাকে ব্যবহার করবেন কে, সেই জায়গায় সংকট রয়েছে,’ বলেন ফারুক আহমেদ।

কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে বিশ্বের জনপ্রিয় কমেডি অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের প্রসঙ্গ। এই অভিনেতার ভীষণ ভক্ত ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘চার্লি চ্যাপলিনের গল্পগুলো যেভাবে শুরু হয়, সেটার শেষটা আমাদের মানবিকভাবে প্রশ্ন করতে শেখায়। একই গল্পে নানাভাবে তাঁকে দেখা যেত। একটি চরিত্র ক্ষুধার জ্বালায় জুতা খাচ্ছে, দর্শক দেখে হাসছেন। সেই চরিত্রই আবার মানবিক বোধ জাগ্রত করছে। দর্শকদের কাঁদাচ্ছে। তাঁর সঙ্গে আমি নিজেকে তুলনা করছি না। তবে কমেডি নিয়ে এমন মানে যাওয়ার একটি ইচ্ছা ছিল। মাঝেমধ্যেই ভাবি, কমেডি দিয়ে যদি চার্লি চ্যাপলিনের মতো একটা জায়গায় যেতে পারতাম।’

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে অভিনেতা ফারুক আহমেদ

আপনি চার্লি চ্যাপলিনের কোনো সিনেমা রিমেক করা হলে সেখানে অভিনয় করতে চান? এমন প্রশ্নে এই অভিনেতা বলেন, ‘কেউ যদি চার্লি চ্যাপলিনের সিনেমায় আমাকে দিয়ে রিমেক করেন, তাহলে আমি খুব খুশি হব। আমি আগ্রহ নিয়ে কাজটি করব। চার্লি চ্যাপলিনের চরিত্রে অভিনয় করা আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা। শুধু একটাই কারণে কমেডির মধ্যে প্রচণ্ড এক মানসিক বার্তা আমাকে ভাবায়।’

ফারুক আহমেদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, তিনি অভিনয়ের এখনো তাঁর সেরাটা দেখাতে পারেননি। সেই চেষ্টা এখনো করে যাচ্ছেন। অভিনেতা হিসেবে সেই অপ্রাপ্তি হয়তো সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। কারণ, অভিনেতার প্রাপ্তির কোনো শেষ নেই। এবার এই অভিনেতার কাছে জানতে চাই, আপনার কমেডি চরিত্রের ভাইরাল সংলাপ নিয়ে। শুনেই হাসেন তিনি।

স্ত্রীর সঙ্গে অভিনেতা ফারুক আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো

‘গাঞ্জা খাইয়া কুল পাই না, পড়াশোনা করব কোন সময়,’ এই সংলাপ প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবেই তাঁকে শুনতেই হয়। নাটকটির নাম ‘বৃক্ষমানব’। এ ছাড়া ‘বংশের একটা ইজ্জত আছে, আমরা সরকার বংশ’, ‘দূর ছাতা, আবার বলে তৈয়ব ভাই, অত ভাই ব্রাদারের আমার সময় নাই’, ‘আমি বোকাসোকা মানুষ, আল্লাহপাক আমার মাথায় বুদ্ধিসুদ্ধি দেয় নাই’, ‘ফুলি আজ তোমারে অধিক সৌন্দর্য লাগতেছে’,  ‘জীবনটা হইল একটা কুয়া, যার কুয়া যত গভীর, তার জীবনের দুঃখ তত বেশি’, ‘সত্য কথা দিনে ১৪ বার বলা যায়’, ‘কী জন্য মারল কিছুই বুঝতে পারলাম না’, ‘আপনাকে দেখলেই বোঝা যায় উচ্চশিক্ষিত’, ‘দুধ মধুর চেয়েও মিষ্টি, আরেক গ্লাস দুধ দিতে বলেন’সহ এমন বহু সংলাপ প্রায়ই শুনতে হয়। এগুলোর ফেসবুক, ইউটিউবে কোটি ভিউ।

আফসোস নিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সংলাপগুলো দর্শক পছন্দ করেন, এটা ভালো লাগে; কিন্তু বেশির ভাগ সংলাপ অনেক আগের। গত ২০ বছরে নতুন কি চরিত্র, সংলাপ যোগ হলো, সেটা ভাবায়। একজন অভিনেতার নানা চরিত্রের ক্ষুধা থাকে। পরিচালকেরা অভিনয়শিল্পীদের নানাভাবে আবিষ্কার করলে এই আফসোস থাকে না। তাহলেই একজন বৈচিত্র্যময় অভিনয়শিল্পী হয়ে ওঠেন। এখন সিনেমা নাটকে, নানাভাবে নিজেকে ভাঙার চেষ্টা করছি। অনেক আর গৎবাঁধা চরিত্রে অভিনয় করতে চাই না।’
আজ ২৫ মার্চ এই অভিনেতার জন্মদিন। ১৯৬০ সালে মানিকগঞ্জ জেলায় তাঁর জন্ম। বিশেষ দিনটি ৩৪ বছরের ক্যারিয়ারে কখনো উদ্‌যাপন করেননি তিনি। ফারুক আহমেদ জানান, পাকিস্তানের সেই কালরাতের সাক্ষী তিনি। জন্মদিনে সেই গণহত্যার ঘটনাগুলোই মনে পড়ে। দিনটি আজ কর্মব্যস্ততায় কাটছে। তিনি শুটিং করছেন ঈদের নাটক ‘ছোট কাকু’ সিরিজের ‘মিশন মুন্সিগঞ্জ’-এ। এতে তাঁর সহশিল্পী ডা. এজাজ, আশনা হাবীব ভাবনা, আরফান আহমেদ প্রমুখ।