সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগের ঘোষণায় কে কী বলছেন
শিল্পকলার কাজে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতার একপর্যায়ে তিনি পদত্যাগের কথা জানান। বক্তৃতার মধ্যেই মঞ্চে তিনি শিল্পকলা একাডেমির সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন। পরে তিনি পদত্যাগের কারণ উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যমে লিখিত বক্তব্যে দেন। এদিকে আজ শনিবার দুপুরে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কথা বলেছেন সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগ প্রসঙ্গে।
ফারুকী তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি জামিল ভাইয়ের নাটকীয় পদত্যাগ নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম না। কারণ, তাতে আমাকে এমন কিছু উদাহরণ টানতে হবে, যেটা তাঁর জন্য অস্বস্তিকর হবে। আমি চাচ্ছিলাম না, কারণ আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ফর রেকর্ডস আমাকে আসলে এগুলো বলতেই হবে। আজকে আমাদের অনেকগুলা কাজ আছে। এটা শেষ করে সময় পেলে লিখব। শুধু এইটুকু আপাতত বলে রাখি, উনার বলা অনেকগুলা কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলা কথা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল না করতে পারাজনিত হতাশা থেকে বের হয়ে আসা বলে মনে হচ্ছে। আমার বিস্তারিত লেখা হয়তো উনাকে বিব্রত করতে পারে। কিন্তু আমাকে আপনি এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন, যেখানে আমাকে বিব্রতকর হলেও সত্য বলতে হবে, জামিল ভাই।’ এদিকে সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগের খবরে শিল্প–সংস্কৃতি অঙ্গনে বেশ আলোচনা হচ্ছে।
সুরকার ও সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান একটি ভিডিও ক্লিপ তাঁর ফেসবুকে শেয়ার করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে সৈয়দ জামিল আহমেদ কথা বলছেন। ক্যাপশনে শেখ সাদী খান লিখেছেন, ‘দেশটা কি আইনকানুনের বাইরে চলে গেল নাকি? যে লঙ্কায় যায় সে-ই রাবণ হতে চায়। এই দারুণ ক্ষমতাগুলোর বিশেষ তদন্ত না হলে আরও কঠিন জাহান্নামে যাবে দেশ!’
সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগ ইস্যুতে কথা বলেছেন পরিচালক আবু সাইয়ীদ। প্রথিতযশা এই নাট্যজনের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগতভাবে কোনো পরিচয় নেই বলেও উল্লেখ করেছেন।
পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়ে আবু সাইয়ীদ তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ। আমি তাঁর এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের কেউ কোনো পদে গেলে সহসা পদত্যাগ করতে চান না। উনি ভালো এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। মহাপরিচালক থাকাকালীন অবস্থায় তিনি কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার প্রতিবাদ অনেকেই করেছেন, আমিও করেছি। আমি মনে করি, কারও ভুল বা বিতর্কিত সিদ্ধান্তের যেমন প্রতিবাদ করতে হবে, তেমনি ভালো সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। কেউ কেউ মনে করছেন, তাঁর উচিত শিক্ষা হয়েছে—এমন দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আমি একমত নই। কোনো ব্যক্তি যদি তাঁর ভুল থেকে, তাঁর অক্ষমতা থেকে বেরিয়ে আসতে চান, তাঁকে সহযোগিতা করা উচিত। কিন্তু তা না করে কেউ কেউ যদি তাঁর ভুল, তাঁর বিতর্কিত কর্মকে সামনে এনে তাঁকে তিরস্কার করতে থাকি, তাহলে আমাদের চলমান লোভ এবং দুর্বল মানসিক গঠন থেকে বেরিয়ে আসতে পারব না।’
সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগের ঘোষণার পর নিজের ফেসবুকে পরিচালক শ্রাবণী ফেরদৌস লিখেছেন, ‘কাজের পরিবেশ যেখানে নেই, কাজ করতে গেলেই বাধা, সেখান থেকে বেরিয়ে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু এই পদে কে বসবেন? তিনিও ঠিকভাবে কাজটা করতে পারবেন? আগে যিনি ছিলেন, তিনি কি করেছেন? অনেক প্রশ্ন, উত্তর তো জানা। এই জানাকে ভাঙবে কে? স্যারকে অভিবাদন, আবার শুরু হোক আপনার থিয়েটার। প্রশাসনিক যাত্রার চেয়ে সৃজনশীল জার্নিতেই আপনাকে মানায় ভালো।’
নাট্যনির্দেশক কাজী রোকসানা তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একজন জামিল আহমেদকে শিল্পের উৎকর্ষের জন্য যতখানি প্রয়োজন, ততখানি অন্য কাউকে নয়। শুধু ঢাকাকে যাঁরা বাংলাদেশ ভাবেন, তাঁরা যদি ঢাকাকে ছাড়িয়ে একবার শুধু ঢাকার বাইরে নজর দেন, এমনকি ঢাকাতেও চোখ বোলান, তবে দেখতে পাবেন—নানামুখী শিল্পচর্চা কেমন করে ডালপালা মেলছে শিল্পকলার মাধ্যমে। জারিগান বা কাওয়ালি, যাত্রা বা নাটক বা চিত্রকলা বা সিনেমা বা আর যা কিছু—কোনটা হচ্ছে না এই মুহূর্তে বাংলাদেশে! চারিদিকে যখন উগ্রবাদীদের আস্ফালন দেখে মানুষ ভীত, তখন এই স্রোতে দাঁড়িয়েই চলছে সব। যাঁর নেতৃত্বে এসব কর্মযজ্ঞ—তিনি হাল ছেড়ে দিলেন। পদত্যাগ করলেন। “কায়দা করে বাঁচো”টা স্যার রপ্ত করে ফেলতে পারলে হয়তো সেটা বৃহৎ অর্থে শিল্পের জন্য ভালো হতো। তবে তিনি নিজের সিদ্ধান্তেই অটল সারা জীবন। কিন্তু তিনি কাজের পরিবেশ নিয়ে, বিশেষ করে যে অভিযোগ করে পদত্যাগ করেছেন, আশা করছি ভবিষ্যতে সেসব বিষয় উত্তরণের চেষ্টা করবে মন্ত্রণালয়। তবে এটাও বলতে চাই, মন্ত্রণালয় এখন নতুন করে যে স্ক্রিপ্টই লিখুক, আমরা যাঁরা জামিল স্যারকে চিনি, জানি— তাঁরা ঠিক বুঝে যাব কোনটা “ডাহা মিথ্যা” আর কোনটা সত্য। তবু মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার অপেক্ষায়।’