‘সিনেমা নিয়ে এই উন্মাদনা থাকা জরুরি’
ছোট পর্দার অভিনয়শিল্পী মোশাররফ করিম বড় পর্দায়ও অভিনয় করে থাকেন। কলকাতার পরিচালকের চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। এবারই প্রথম ঈদ উৎসবে তাঁর ছবি মুক্তি পেয়েছে। ‘চক্কর’ ছবিটি চলছে মাল্টিপ্লেক্সে। ছবিটিসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে গত বুধবার দুপুরে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুর কাদের
পায়ে ব্যান্ডেজ, হুইলচেয়ারে মোশাররফ করিম। বুধবার তাঁকে দেখা গেল স্টার সিনেপ্লেক্সে। এমন মোশাররফ করিমকে দেখে অবাক দর্শক–ভক্তরা। কী হয়েছে অভিনেতার? জানা গেল, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পরপর দুটি অস্ত্রোপচার হয় মোশাররফ করিমের। এদিকে নিজের নতুন সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। বাধ্য হয়ে ব্যান্ডেজ পায়ে হুইলচেয়ারে চলতে হচ্ছে তাঁকে।
গল্প আর চরিত্র পছন্দ হলে ছোট পর্দার অভিনেতা মোশাররফ করিম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এবার ঈদে শুধু সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত চক্কর। যাঁরাই ছবিটি দেখছেন, প্রশংসা করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অভিনয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মোশাররফ করিমের কাছেও ছবিটি নিয়ে ইতিবাচক সব কথাবার্তা পৌঁছে যাচ্ছে।
‘চক্কর’–এ কেন
দেশের পাশাপাশি গেল কয়েক বছরে ভারতীয় পরিচালকের ছবিতেও অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোয় তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি ছবিটির শুটিংয়ে অংশ নেন মোশাররফ করিম। কী ভেবে এই ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, জানতে চাইলে মোশাররফ করিম বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, চরিত্রটা ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচের একজন মানুষের। এমন তিনটা দিক ছবিতে খুঁজে পেয়েছি, মনে হয়েছে, এটা আমার করা উচিত। সবচেয়ে বড় কথা, চরিত্রের একটা সর্ম্পূণতা আছে।’
ঈদ উৎসবে
নাটকে মোশাররফ করিমের অভিনয়জীবন দুই যুগের বেশি সময়ের। তার আগে মঞ্চে কাজ করতেন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে সুযোগ পেলে চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। প্রথম চলচ্চিত্র তৌকীর আহমেদ পরিচালিত জয়যাত্রা। এর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৭টি ছবি মুক্তি পেয়েছে তাঁর। তবে কোনো ছবির ঈদের মতো বড় উৎসবে মুক্তির কথা জানা নেই তাঁর। তবে ঈদ উৎসবে মুক্তি পাওয়ায় অনেক বেশি যে আনন্দিত, তা অবশ্য নয়। মোশাররফ করিম বলেন, ‘আমার মূল আনন্দটা হয় অভিনয়টা করার সময়। এই সিনেমা করার সময় যে আনন্দ পেয়েছি, দেখার সময় আনন্দটা আরও বেশি পেয়েছি। একটা গল্পকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের দারুণ মুনশিয়ানা দেখিয়েছে জীবন (শরাফ আহমেদ)। ছবির এডিটরও দেখাতে পারছে, চিত্রগ্রাহক খসরু ভাই দেখাতে পারছে। সব মিলিয়ে দারুণ ও খুব আন্তরিক একটা টিম ছিল।’
মোশাররফ করিমের ইচ্ছা ছিল, ছবি মুক্তির সময়টায় প্রেক্ষাগৃহে যাবেন। কিন্তু পায়ের অস্ত্রোপচারের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের আনন্দ–উচ্ছ্বাসের চিত্রটা ঠিকই তাঁর কাছে পৌঁছে গেছে। বুধবার বিকেলে হুইলচেয়ারে করে মোশারররফ করিম স্টার সিনেপ্লেক্সে যান। কথা বলেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রোবেনা রেজা। মোশাররফ করিম বলেন, ‘আমি বছরখানেক ধরে ফেসবুকে একেবারেই সক্রিয় নই। আগেও যে ছিলাম, তা কিন্তু নয়। এরপরও এবার যা যা ঘটেছে, আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়েছে। এসব দেখে ভালো লেগেছে।’
ছবির উন্মাদনা ও হিসাব–নিকাশ
ঈদে মুক্তি পেয়েছে ছয়টি চলচ্চিত্র। মোশাররফ করিমের চক্কর ছাড়া মুক্তি পাওয়া অন্যান্য ছবির মধ্যে আছে ‘বরবাদ’, ‘দাগি’, ‘জংলি’, ‘জ্বীন ৩’ ও ‘অন্তরাত্মা’। ঈদে মুক্তি পাওয়া ছবি নিয়ে দর্শকের আলাদা একটা উন্মাদনা থাকে। দেশের সিঙ্গেল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্সে আগ্রহের শীর্ষে আছে বরবাদ, ‘দাগি’ আর ‘জংলি’। সিনেমা নিয়ে এই উন্মাদনা থাকাটা জরুরি মনে করছেন মোশাররফ করিম। তিনি বলেন, ‘এখনকার সময়টা বেশ কঠিনও। তাই ছবি নিয়ে সবার মধ্যে সিনেমা নিয়ে এই উন্মাদনা থাকা জরুরি।’ আমাদের ছোটবেলার সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, গ্রামে তো বলতে গেলে তখন টেলিভিশনও ছিল না। মানুষের বিনোদন আসলে ছিল সিনেমা হলে। সে সময় একটা সিনেমা হিট হওয়ার অবস্থা অপেক্ষাকৃত সহজ ছিল। এখন তো বিনোদনের বিষয়টা বিস্তৃত হয়ে গেছে। মানুষের ঘরে ঘরে, বলতে গেলে হাতে হাতে সিনেমা হল। ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশের মানুষ আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি দেখতে পছন্দ করে। আমাদের কাজ দেখতে চায়, যা দেশকে ভালোবেসে তৈরি হচ্ছে। এ কারণেই কিন্তু আমার মনে হয়, আমাদের দায়িত্বের জায়গাটা কেমন হওয়া দরকার। চক্কর সিনেমাটা করে আমার ভালো লাগল। দর্শকের উন্মাদনাও চলছে। তাই সিনেমা আরও করতে চাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে দর্শকের আনুকূল্য খুব প্রয়োজন। দর্শকের সেই আনুকূল্য পাচ্ছিও।’
কথা প্রসঙ্গে এই অভিনয়শিল্পী জানান, সিনেমা নিয়ে নানা হিসাব–নিকাশের কথাও। সেই কথা বলতে গিয়ে মোশাররফ করিম বলেন, ‘ এমনিতে তো সিনেমার ক্ষেত্রে নানা সমীকরণ আছে। হল পাওয়া, না পাওয়া—অনেক খেলা আছে। ব্যবসারও অনেক খেলা আছে। যদিও এগুলোর বিষয়ে আমি ওয়াকিবহাল নই। তারপরও সেগুলো যদি আরও সহজ হতো, তাহলে সুবিধা হতো। একটা জায়গায় নানান ধরনের সিনেমা হবে। সেই সিনেমা সবাই নিজেদের মতো উপভোগ করবে। দেশের একজন পরিচালকের যোগ্যতা আছে ভালো সিনেমা বানানোর। চমৎকার গল্প বলার। কিন্তু এসব খেলার কারণে ছবিটা বানাতে না পারলে, প্রতিভা মারা যায়।’
প্রয়োজন মৌলিক গল্প
বাংলাদেশি ছবি এখন বিশ্বজুড়েই মুক্তি পাচ্ছে। প্রশংসার পাশাপাশি এসব ছবি ঘিরে ব্যবসায়িক সফলতার গল্পও লেখা হচ্ছে। তাই এখন প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। মোশাররফ করিম বলেন, ‘যখন বাজারটা গ্লোবাল হয়, তখন চ্যালেঞ্জটা অনেক। বিশ্বের অন্য দেশের মানুষ আমার দেশের নিজস্ব গল্পটাই দেখতে চাইবে, যেটাকে দেখে তাদের মনে হবে, এটা তো বাংলাদেশের ছবি। মৌলিক মনে হবে। আমি দেখা গেল যে একটা ছবি বানালাম, যেটায় অন্য দেশের ছবির সঙ্গে মিল, কখনো কখনো নকল—তখন তো তা আসলে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। সেটা হয়তো বাংলাদেশের মানুষের গ্রহণযোগ্যতা পাবে, সার্বিকভাবে বাইরের দেশে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে না। দিন শেষে আমাদের মৌলিক গল্পের সিনেমাটা বেশি জরুরি। এখন মালয়ালম ছবির অনেকেই প্রশংসা করেন। গ্রামের গল্প নিয়ে ছবি হচ্ছে। প্রশংসা হচ্ছে কেন? ছবিতে তাদের নিজস্বতা পাচ্ছি। কিন্তু মালয়ালম ছবি যদি বাংলাদেশের মতো হয়, সেই ছবি দেখতে তো আমার আগ্রহ হতো না। কারণ, আমি তো দর্শক হিসেবে নতুন কিছু পাচ্ছি না।’