আলোচনায় নাটকের শীর্ষ তারকাদের পারিশ্রমিক, সমাধান কী?

নাটকের সর্বাধিক পারিশ্রমিক নেন এসব তারকারা। ছবি: কোলাজ

বর্তমানে নাটকের শীর্ষ পাঁচ তারকার মধ্যে সর্বাধিক পারিশ্রমিক নেন অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। দুই বছর আগে নাটকপ্রতি দু-তিন লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিলেও বর্তমানে তিনি একটি নাটক থেকে পারিশ্রমিক নেন সর্বনিম্ন চার লাখ টাকা। শর্ত থাকে, তিন দিনে শুটিং শেষ করতে হবে। তিন দিনের বেশি শুটিং হলে প্রতিদিন শুটিংয়ের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করেছেন দেড় লাখ টাকা। কোনো নাটকের শুটিং ১০ দিন হলে সে ক্ষেত্রে নাটকপ্রতি পারিশ্রমিক দাঁড়ায় ১০–১৫ লাখ টাকা। অপূর্বর সঙ্গে কাজ করা পরিচালক ও প্রযোজকেরা এ তথ্য দেন।

বর্তমানে নাটকপ্রতি তিন লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেন মোশাররফ করিম, নিলয় আলমগীর, মুশফিক আর ফারহান। আড়াই লাখ পারিশ্রমিকের তালিকায় রয়েছেন তৌসিফ মাহবুব, ফারহান আহমেদ জোভানসহ কয়েকজন। প্রযোজক সূত্রে জানা যায়, এসব তারকার ‘বেস্ট ফ্রেন্ড ২ ’, ‘হৃদয়ের এক কোণে’, ‘প্রেমেরই পরশে’, ‘লাইজু’সহ ২০টির বেশি নাটক স্পনসরের সংকটে ভালোবাসা দিবসে প্রচারিত হয়নি। সেগুলো ঈদে প্রচারিত হওয়ার কথা রয়েছে।

‘লস্ট ইন লাভ’ ভালোবাসা দিবসে প্রচার হওয়ার কথা থাকলেও প্রচার হয়নি। ছবি: ফেসবুক

অন্যদিকে ঈদের জন্য তৈরি হয়েছে শতাধিক নাটক। এসব নাটক প্রচারে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। নাটকের বাজেট বেশি হওয়ার কারণে ইউটিউব থেকে টাকা তোলা সম্ভব নয়, বলছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। যে কারণে তাদের স্পনসরের ওপর নির্ভর করতে হয়। এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে নাটক স্পনসরের সংকটে ভুগছে। শীর্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকেরা বলছেন, ছোট পর্দার শীর্ষ তারকাদের পারিশ্রমিক রয়ে গেছে আগের মতোই। কেউ আবার পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেনও। এমন পরিস্থিতিতে তারকারা পারিশ্রমিক কমিয়ে সহযোগিতা করলে এই সংকট মোকাবিলা করা যাবে। সে ক্ষেত্রে বাড়তি টাকার জন্য স্পনসরের পেছনে ছুটতে হবে না। যথাসময়ে নাটক মুক্তি দেওয়া যাবে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে সময়ের একজন আলোচিত নির্মাতা জানান, স্পনসরের সংকটে গত ঈদুল আজহার ২০টি মতো বড় বাজেটের নাটক আটকে আছে। গেল ভালোবাসা দিবসের ৮০ শতাংশ নাটক একই কারণে আটকে গেছে। সেগুলো নাকি ঈদে প্রচারিত হবে। আবার ঈদের জন্যও নাটক নির্মিত হচ্ছে। এখন প্রযোজকেরা নিশ্চিত নন, কোন নাটকগুলো ঈদে প্রচার করতে পারবেন। শিল্পীদের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতির ভয়ে এই পরিচালক নাম প্রকাশ করতে চাননি। ঈদে কয়েক শ নাটক জমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই পরিচালক। তাঁর মতে, তারকারা যদি পারিশ্রমিক ৫০ হাজারের মতো কমান, তাহলে এমনিতেই অন্যান্য খরচও অন্তত দুই লাখ টাকা কমানো যাবে। তাহলে বাড়তি স্পনসর ছাড়াই নাটক মুক্তি দিয়ে টাকা ওঠানো যাবে। নাটককে সহায়তা করতে হলে পটভূমি বিবেচনায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে নাট্যাঙ্গনে বেকারত্ব বাড়বে।

ভালোবাসা দিবসের ‘বেস্ট ফ্রেন্ড ২’ প্রচার হবে ঈদে। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

অপূর্ব ও নাজনীন নীহা অভিনীত ‘মন দুয়ারী’ নাটকটি প্রচারিত হয় ইউটিউব চ্যানেল সিএমভিতে। নাটকটি গত বছরের হওয়ায় স্পনসরও গত বছরেই পাওয়া। যে কারণে তারা স্পনসরসহ মুক্তি দিতে পেরেছে। এই চ্যানেলের কর্ণধার শাহেদ আলী। তিনি জানান, এবার তাঁদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ছয়টি নাটক ভালোবাসা দিবসে প্রচারিত হওয়ার কথা থাকলেও সম্ভব হয়নি। এই প্রযোজক তারকাদের পারিশ্রমিক কমানোর পাশাপাশি ঠিক সময়ে শুটিং শুরু করার বিষয়ে গুরুত্ব দেন। শাহেদ আলী বলেন, ‘শুটিং শুরু হয় বেলা একটা পর। কিন্তু শুটিং যদি সকাল ৯টায় শুরু করতে পারি, তাহলে সময়মতো দিনের আলোয় কাজ শেষ করতে পারি। এমনিতেই শুটিংয়ের খরচ কমে যাবে। শুটিংয়ের বাড়তি সময় কমলে নাটকপ্রতি দু–তিন লাখ টাকা সাশ্রয় করা যাবে। তাহলে আমাদের স্পনসরনির্ভরতা কমবে। তাহলে নাটক মুক্তিতে জট তৈরি হবে না। এখন ঈদেও যদি স্পনসর ঠিকমতো পাওয়া না যায়, তাহলে শত শত নাটক আটকে যাবে। পরে কেউ চাইবে না লোকসানে নাটক বানিয়ে যেতে। সামনে বড় সংকট দেখছি।’

মুশফিক আর ফারহান। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

পারিশ্রমিকসহ নানা বিষয়ে জানার জন্য অভিনেতা অপূর্বকে গত রোববার বেলা আড়াইটায় বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। কোটি কোটি ভিউয়ে এগিয়ে থাকলেও ভালোবাসা দিবসের ছয়টি নাটকই আটকে গেছে মুশফিক আর ফারহানের। সর্বাধিক পারিশ্রমিকের অন্যতম এই অভিনেতা জানান, সম্প্রতি তিনি একাধিক নাটক থেকে পারিশ্রমিক এক লাখের বেশি টাকা কম নিয়েছেন। এমনকি পারিশ্রমিক না নিয়েও শুটিং শেষ করেছেন। সেই টাকাও চাইতে পারছেন না। তাঁর কণ্ঠে আক্ষেপ, ‘আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে হাওরে শুটিংয়ে গিয়েছি, স্যালাইন নিয়ে শুটিং করেছি। একটি শুটিং শেষে আমার পারিশ্রমিকের এক লাখ টাকা ক্যাশ দিয়ে আসছি কাজটি শেষ করতে। পরিচালকের নাম বলছি, খবর নেন। এগুলো নিয়ে কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কথা বলে না। একই পারিশ্রমিকে ৩ দিনের কাজ ১০ দিনে করলেও এখানে কেউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। শুধু আমাদের পারিশ্রমিক কমানো নিয়ে কথা বলে!’

তরুণ এই অভিনেতা আরও বলেন, ‘ভালোবাসা দিবসের তিন–চার দিন আগে বলা হলো, স্পনসর পাচ্ছে না। এটা আগে জানালে সেই কাজগুলোর করার দরকার ছিল না। এই যে ৬০–৭০ শতাংশ পারিশ্রমিক এখন বকেয়া পড়েছে, সেটাও তো আমি চাইতে পারছি না। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তো স্পনসর ছাড়া নাটক বিক্রি করবে না। মাঝখানে আমরাও বঞ্চিত। আমি জানি, জোভান, তৌসিফ সবাই যে যেভাবে পারছে সহায়তা করছে। এটা নিয়ে কেউ কথা বলুক আর না বলুক, তারপরও বলব, আমরা শিল্পীরা সব সময়ই ছাড় দিতে প্রস্তুত আছি। চাই কোনো নাটক ঝুলে না থাকুক।’

ঈদ সামনে রেখে বেশির ভাগ নাটকের শুটিং শেষ। অনেক নাটক পুরোপুরি শেষ, কোনো কোনো নাটকের সম্পাদনা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে পারিশ্রমিক কমালেও অন্তত ঈদনাটকের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। স্পনসর নিয়েও নেই আশার কথা। সব বিবেচনায় ঈদে ছোট পর্দার নাটকের বাজার নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেল।