‘বিরসকাব্য’ হয়ে যায় ‘বউয়ের জ্বালা’! নাটকের উদ্ভট নাম নিয়ে মোশাররফ করিমের হতাশা
নাটকের মান নিয়ে প্রশ্ন নানা সময়ে ওঠে। মানহীন নাটকের কারণে দর্শকেরা দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, এমন কথাও শোনা যায়। এবার পড়তি মান, নিম্নমানের গল্প, অভিনয়, অত্যধিক বিজ্ঞাপন বিরতির পাশাপাশি যোগ হয়েছে নতুন বিরক্তি—উদ্ভট নাম। নাটকগুলোর এমন নাম শুনে বিভিন্ন সময়ে বিস্ময় ও বিরক্তি প্রকাশ করেন নাট্যজনেরা। অনেকে নাটকের এমন উদ্ভট ও অরুচিকর নামকরণকে পরিচালকদের সৃজনশীলতা ও শিক্ষার অভাবকে দায়ী করছেন। নাটকের উদ্ভট নামের অভিজ্ঞতা দেশের নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমেরও হয়েছে। ‘বিরসকাব্য’ নামের একটি নাটকের শুটিং করলেও প্রচারের সময় দেখেন এটির নাম ‘বউয়ের জ্বালা’! তিনি বলেছেন, ‘নাটকের অধিকাংশ নামই এখন ভালো না।’
নাম নয়, কাজে পরিচয়—আগে গুরুজনেরা ছোটদের এ কথা বলতেন এটি বোঝাতে যে নাম যত ভালোই হোক না কেন, মানুষের মূল পরিচয় তার কাজে। তবে ইদানীং বাংলা নাটকের নাম দেখে অনেকে ভিরমি খাচ্ছেন। বলছেন, রুচি ও মানের বিচারে নামও গুরুত্বপূর্ণ। নামেও আসলে অনেক কিছু যায়-আসে।
নাটকের উদ্ভট নাম প্রসঙ্গে টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম চ্যানেল ২৪–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘নাটকের অধিকাংশ নামই এখন ভালো না। আমি একবার একটা নাটকের কাজ করেছিলাম, তার নাম “বিরসকাব্য”। কিছুদিন পর নাটকটা দেখার সময় দেখি, এটার নাম বউয়ের জ্বালা। এ ঘটনাগুলো আমরা ঠেকাতে পারিনি। আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু এগুলো ঠেকানো যায়নি। আমরা ভিউয়ের জগতে ঢুকে গেছি, যেটাকে অস্বীকার করা যাচ্ছে না। অস্বীকার করার প্রয়োজনও নাই। তবে সেখানে আমার একটা দায়ও আছে। দায় হচ্ছে, আমার একটা নাটক দর্শক দেখবে; কিন্তু আমার সত্তাকে বিসর্জন দিয়ে না, উলঙ্গ হয়ে না। কারণ, আমি তো আসলে নিজেকে উপস্থাপন করতে চাই।’
মোশাররফ করিম জানালেন, তিনি একটা গল্প প্রায়ই বলেন। তা হচ্ছে, ‘একটা লোক সারাজীবন গুড় খেয়ে আসছে। লোকে তো গুড় খায়, তাকে গুড় দাও—এটা প্রযোজক বা অন্য কেউও বলতে পারেন। একজন পরিচালক কিন্তু অন্যভাবে বলতে পারেন, লোকে গুড় খায়, কিন্তু তাকে আমি গুড়ের সন্দেশ খাওয়াব। খাওয়ার পর লোকেও বলবে, আরে আমি তো এটা খাইনি। দারুণ তো। ঠিক এই জায়গায় শিল্পীর দায় আছে। নামের ক্ষেত্রে অদ্ভুভ অদ্ভুত সব নাম। কিন্তু আমি আসলে যেটা পছন্দ করি, ভেতরের গল্পটা অ্যাটলিস্ট ঠিকঠাক হতে হবে।’
‘মাথা গরম জামাই’ নামের একটা নাটকে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। এমন নাম নাটকে হতে পারে মনে করছেন তিনি। বললেন, ‘“মাথা গরম জামাই” নাটকের একটা নাম হতেই পারে। এর মধ্যে খারাপ কিছু নাই। অশ্লীল কিছু নাই। কিন্তু আমাদের শুনতে যেন কেমন লাগে।’
আগেকার দিনের উদাহরণ দিয়ে মোশাররফ করিম বললেন, ‘কত সুন্দর সুন্দর নাম আমাদের একটা সময় ছিল। আমাদের সময়ে সিনেমার নাম ছিল “সূর্য দীঘল বাড়ী”, “তিতাস একটি নদীর নাম”, “কখগঘঙ”—নামের মধ্যে একটা সাহিত্যের ছোঁয়া ছিল। এখন সেই জায়গা থেকে আমরা খুব সহজ জায়গায় চলে আসছি। মানুষের খুব কাছে চলে আসছি, সাহিত্য থেকে নেমে এসেছি। এটা কিন্তু সাহিত্যের ক্ষেত্রেও ঘটছে। বঙ্কিমচন্দ্রও বলেছিলেন, রচনার ভাষা প্রাঞ্জল হওয়া উচিত। কিন্তু উনার ভাষাই পড়া যায় না। সহজে বোঝা যায় না। তার মানে উনি যা লিখেছিলেন, সেটা ওই সময়ের জন্য প্রাঞ্জল ছিল এবং তিনি চেষ্টা করেছেন। সেটা আস্তে আস্তে মানুষের ভাষার যে কথ্যরূপ, তার কাছাকাছি এসেছে—একটাই কারণ, তা মানুষের জন্যই। মানুষ যাতে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এখন মাথা গরম জামাই বললে, একজন মানুষ খুব দ্রুত তার মাথার মধ্যে একটা চিত্র তৈরি করে নিতে পারে। এটা একটা অভ্যস্ততাও। এখন আমরা ট্রেন্ডের মধ্যে আছি। কিন্তু ট্রেন্ড অবশ্যই যৌক্তিক হতে হবে। সে হিসেবে “মাথা গরম জামাই” এই ধরনের নামের সঙ্গে মানুষ একসময় অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে।’