প্রসেনজিৎ থেকে যীশু, যে অভিনেতাদের নতুন করে চিনিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ
আজ চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুদিন। ‘উৎসব’, ‘শুভ মহরত’ থেকে ‘চোখের বালি’র পরিচালক হিসেবে বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন ঋতু। তাঁর অন্যতম গুণ ছিল, বাণিজ্যিক ছবির তারকাদের নিজের ছবিতে অন্যভাবে হাজির করা। তাঁর হাত ধরেই প্রচলিত বাণিজ্যিক ছবির বাইরে নতুন করে নিজেদের জাত চিনিয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, টোটা রায়চৌধুরী থেকে যীশু সেনগুপ্তরা। এই তিন অভিনেতার ক্যারিয়ারের বাঁকবদলে ঋতুপর্ণের ভূমিকা নিয়ে এই আয়োজন।
১৯৮০ দশকের মাঝামাঝিতে নায়ক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর পর একের পর এক বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ‘অপমন’, ‘ওরা চারজন’, ‘জ্যোতি’, ‘শত্রুপক্ষ’, ‘অমর প্রেম’–এর মতো ছবি করছিলেন।
অনেক সমালোচকই নাচ ও অ্যাকশনে দক্ষ বাণিজ্যিক ছবির ভবিষ্যৎ ‘কান্ডারি’ হিসেবে মনে করেছিলেন তাঁকে। তবে ঋতুপর্ণ ভেবেছিলেন অন্যভাবে। ১৯৯৪ সালে তাঁর ‘উনিশে এপ্রিল’ ছবিতে সুযোগ দেন প্রসেনজিৎকে। এবার অবাক হওয়ার পালা। এত দিনের চেনা প্রসেনজিৎ যেন মুহূর্তেই অচেনা হয়ে ধরা দিলেন। সমাজের আর দশটা চেনা চরিত্রের মতোই পর্দায় পাওয়া গেল তাঁকে। এরপর ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালনায় একে একে ‘চোখের বালি’, ‘খেলা’, ‘দোসর’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, ‘নৌকাডুবি’র মতো ছবিতে দেখা যায় অভিনেতাকে। এ ছাড়া কৌশিক গাঙ্গুলি, সৃজিত মুখার্জি থেকে অতনু ঘোষের মতো অন্য ধারার নির্মাতাদের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করেছেন প্রসেনজিৎ। তবে এ ধরনের ছবিতেও তিনি যে অসাধারণ অভিনয় করতে পারেন, সেটা প্রথম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন ঋতুপর্ণই।
পরিচালকের মৃত্যুর পর টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রসেনজিৎ বলেছিলেন, ‘আমি অনেক বাণিজ্যিক ছবি করেছি। কিন্তু ঋতু আমার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা অভিনেতাকে খুঁজে বের করেছে। এমন একজন অভিনেতা বানিয়েছে, যে প্রচলিত নাচ, গান আর অ্যাকশন দৃশ্যের বাইরে নিজের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে পারে।’
প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণ একসঙ্গে সাতটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। প্রসেনজিতের উদাহরণ দেওয়া যায় টোটা রায়চৌধুরীর ক্ষেত্রেও। ১৯৯৬ সাল থেকে অভিনয় করছিলেন। কিন্তু ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছেন ‘চোখের বালি’র পর। ছবিতে বিহারী চরিত্রে ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সঙ্গে তাঁর অভিনয় অনেকেই টোটার ক্যারিয়ার–সেরা বলে মনে করেন। টোটা এখন সৃজিত মুখার্জির ওয়েব সিরিজে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করছেন। নিয়মিত কাজ করছেন বলিউডেও। যার পেছনে ঋতুকেই কৃতিত্ব দেন টোটা, ‘আমি ঋতুপর্ণের সঙ্গে কাজ করেছি, এটা সব সময় আত্মবিশ্বাস জোগায়। অকালে হারিয়ে না গেলে একসঙ্গে আরও কাজ করা যেত।’
তবে ঋতুপর্ণ যদি কারও ডুবতে বসা ক্যারিয়ারকে চাঙা করেন, সেটা যীশু সেনগুপ্তের। একসময় অনেকে তাঁকে অপবাদ দিয়ে বলতেন, যীশু থাকলে নাকি ছবি হিট হয় না।
কিন্তু অভিনেতাকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে নেন পরিচালক। ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া সেই ছবি ‘আবহমান’ পরে চারটি শাখায় ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। এরপর যীশু রাতারাতি হয়ে ওঠেন পশ্চিমবঙ্গের অনেক পরিচালকের প্রথম পছন্দ। এখন তো তিনি বাংলার সঙ্গে হিন্দি ও তেলেগুতে নিয়মিত কাজ করছেন। তবে ঋতুর প্রসঙ্গ উঠলেই আফসোস হয় যীশুর, ‘আমার আজকের এই অবস্থান পুরোপুরি ঋতুর জন্য। ও আমাকে হাতে–কলমে অভিনেতা হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। একটাই আফফোস, আমার আজকের এই ব্যস্ততা, সাফল্য ও দেখে যেতে পারল না।’ ‘আবহমান’ ছাড়াও ঋতুপর্ণের পরিচালনায় ‘নৌকাডুবি’তে অভিনয় করেন যীশু।