‘বিয়ের পরেও স্বামী প্রচুর প্রেম করেছে, আমি প্রেম করার সময় পাইনি’
দক্ষিণ কলকাতার পুরোনো বাড়িতে ‘আড়ি’ ছবির শুটিং চলছে। অভিনেত্রী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় সেই কারণেই মুম্বাই থেকে এখন কলকাতায়। শুটিংয়ের ফাঁকে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জীবনের নানান গল্প বলেছেন অবলীলায়।
মৌসুমী ছোটদেরও ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করেন। কারণ, তাঁর গুরু তরুণ মজুমদার সবাইকে আপনি বলতেন। সেটি এখনো অনুসরণ করছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী।
অভিনেত্রীর বড় মেয়ে কম বয়সেই প্রয়াত হয়েছেন, সেই আঘাত কীভাবে সামলেছেন? প্রশ্নের উত্তরে অভিনেত্রী বলেন, ‘যদি আধ্যাত্মিক পথে থাকো, কিছু এসে-যাবে না। দুঃখকে আমি কখনো বড় করতে চাই না। নিজের আনন্দ, সুখ যদি কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারো, তাহলে সেটি করো। মানুষ বলবে “পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়।” আমার বড় মেয়ে পায়েলের মৃত্যুবার্ষিকী গেল কিছুদিন আগে। পায়েল খুব অল্প বয়সে চলে গেল; কিন্তু বেঁচে থাকলে আরও ভুগতে হতো ওকে। আমি এভাবেই নিজেকে বুঝিয়েছি। বাবা তো বলতেন, মৃত্যু একটা আশীর্বাদ। জীবন-মৃত্যু মেনে নিয়েই নিজেকে ভালো রাখতেই হবে।’
মৌসুমী চট্টপাধ্যায়ের সাজগোজ করা মেয়েদের খুব পছন্দ। তাঁর মতে, সাজলে হাসিখুশি লাগে। ব্যক্তিত্ব, শিষ্টাচার চোখে পড়লেও ভালো লাগে। তাঁদের জমানায় বিনোদ খান্না, ধর্মেন্দ্র উঠে চেয়ার এগিয়ে দিতেন। মৌসুমীর ভাষ্য, ‘এখনকার অভিনেতারা কি হিট দিয়েছে কি দেয়নি, কি হাবভাব, চকলেট খাচ্ছে আর পা দোলাচ্ছে। তাদের ঘিরে আছে আবার বাউন্সারও। আমাকেও বডিগার্ডের কথা বলা হয়েছিল। তবে আমার যা দেহ, তা রক্ষায় দেহরক্ষীর প্রয়োজন নেই।’
রিল বা শর্টস ভিডিও তৈরিকারীদের পছন্দ নয় মৌসুমীর; বরং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো সহজ মানুষের উদাহরণ টেনে বললেন, ‘তাঁর মতো মানুষ হয় না। ওই সাদা হাফহাতা শার্ট আর ধুতি। কেন জানি না মানুষ এগুলো শেখে না।’
অনেক নায়কের সঙ্গে কাজ করেছেন মৌসুমী। ধর্মেন্দ্র থেকে জিতেন্দ্র কিংবা বিনোদ খান্না বা অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্নার সঙ্গে স্মৃতি আছে।
‘এ ক্ষেত্রে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে যখন কাজ করি, তখন সে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শুরুর দিকে দেখতাম, সেটে শটের বাইরে চুপচাপ একলা বসে আছে। আমার কেশসজ্জা শিল্পীর সঙ্গে বসে খাবার খাচ্ছে। খুব কষ্ট করে বড় হয়েছে, কিন্তু বড় হয়ে যে ভালো হয়েছে, তা নয়। অতিরিক্ত জিনিস পেলে ঠিক থাকে না মানুষ। এটা আমার কথা নয়। বড়রা বলে গিয়েছেন। পুরাণেও তা-ই আছে। আতিশয্য এসে গেলে কারও উপকার করার কথা ভাবতেই পারে না মানুষ।’ বললেন অভিনেত্রী।
কিন্তু শাহরুখ খানের কথা বলেননি মৌসুমী। এই প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘শাহরুখকে আমি ততটা ভালো করে চিনি না। তবে আমির খান যেমন বলেছিল, ও আমার অনুরাগী। সাইফ আলী খানের সঙ্গে কাজ করেছি। তবে আমাদের মধ্যে একজন নায়ক ছিলেন, যে ভীষণ অহংকারী, রাজেশ খান্না। এত পেয়েছে, মাথার ঠিক থাকবে কীভাবে!’
জীবনে কোনো আক্ষেপ নেই মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের। অভিনেত্রীর মতে, ‘দুঃখটা আসলে তোমার হাতে, যতক্ষণ ধরে রাখবে রাখো, হাতে ব্যথা হবে তারপর। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করো, আমি যেন নিজেকে আনন্দে রাখতে পারি। আমি আজ আছি, কাল নেই। নিজেরা ভালো করে কাজ করো।’
জীবনে প্রেম এসেছে? প্রশ্নের জবাবে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি তো সব সময় প্রেম করি। আমার বর, আমি দুজনেই খুব রোমান্টিক মানুষ। আমার স্বামী তো বিয়ের পরেও প্রচুর প্রেম করেছে। আমি তো প্রেম করার সময় পাইনি। তবে ফ্লার্ট করেছি প্রচুর। শাবানা আজমি আমাকে বলেছে, ছয় বছর হোক কি ষাট বছর, মৌসুমী সবার সঙ্গে ফ্লার্ট করে যাবে।’
জীবন নিয়ে অভিনেত্রীর অনুভূতি তিনি জানেন না। বলেন, ‘এই কয় দিন আগে গোসলখানায় পড়ে গিয়ে যা কেলেঙ্কারি! এভাবে বলতে পারব না বাকি জীবনটাকে কীভাবে দেখি!’