এবার আমি অবসর নিতে চাই
প্রথমবার ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছেন কলকাতার অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। তাঁর অভিনীত ‘জেকে ১৯৭১’ সিনেমাটির বাংলাদেশ প্রিমিয়ার হয়েছে গতকাল শনিবার। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ফাখরুল আরেফীন খান। উৎসবে অংশগ্রহণ, দীর্ঘ ক্যারিয়ারসহ নানা বিষয়ে ‘বিনোদন’-এর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
প্রশ্ন :
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবার সিনেমাটি দর্শকদের সঙ্গে দেখলেন, অনুভূতি কেমন?
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা শরণার্থী হয়েছিলেন, তাঁদের বাচ্চারা যখন না খেতে পেরে মরছিল, সেই অবস্থা দেখে ফরাসি এই ভদ্রলোক ২০ টন ওষুধ দিয়ে বাংলাদেশের শিশুদের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। এটাই গল্পে আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে। তাই ছবিটি বাংলাদেশের দর্শকদের সঙ্গে প্রথমবার দেখার অনুভূতি অন্য রকম।
প্রশ্ন :
সিনেমায় আপনাকে দেখা গেছে পাকিস্তানি পাইলট হিসেবে, বাংলাদেশের দর্শকেরা চরিত্রটি কীভাবে নেবেন, এটা কি কখনো মনে হয়েছিল?
কে কী বলবে, এটা কখনো মনে হয়নি। আমাকে একটি কাজ দেওয়া হয়েছিল, করেছি। বিচার আপনাদের দেশের দর্শকেরা করবেন। আমি নিজের কাজ কীভাবে বিচার করব।
প্রশ্ন :
অনেকবার ঢাকায় এসেছেন। কলকাতা আর ঢাকার মধ্যে কী ধরনের পার্থক্য দেখেন?
ঢাকাতে বাঙালি বেশি। বাংলার চর্চা, সংস্কৃতিটাও বেশি। ঢাকা শহর বাঙালিত্বকে ধারণ করে। আমাদের কলকাতায় অবাঙালি বেশি। ভারতের সব ভাষার লোক সেখানে। সেখানে নানা সংস্কৃতির মিশ্রণ হয়ে গেছে। তবে সেখানেও বাঙালিয়ানা আছে। কলকাতা মানে তো শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়—মুর্শিদাবাদ, দার্জিলিং, শিলং, শিলিগুড়ি—আরও অনেক জায়গায় বাঙালিয়ানা এখনো আছে।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশের সিনেমা দেখেন?
বাংলাদেশে ভালো ভালো ফিল্ম হচ্ছে, যেগুলো ওটিটিতে আসছে।
প্রশ্ন :
‘গন্ডি’র পর আবার ‘জেকে ১৯৭১’ সিনেমায় কাজ করলেন, সামনে বাংলাদেশি কোনো সিনেমায় নাম লেখাচ্ছেন?
আপাতত আমি কোনো সিনেমাতেই নাম লেখাচ্ছি না। আমি সিনেমা থেকে বিদায় নিচ্ছি। এখন অবসরের সময়। সবাইকে আমি না করে দিচ্ছি। অনেক অফার এসেছে। অভিনয় করছি না।
প্রশ্ন :
শিল্পী তো কাজের মধ্য দিয়েই নিজেকে খুঁজে পান, আপনি কেন বিদায় নিচ্ছেন?
আমি নিজের মতো করে বাকি সময় কাটাতে চাই। এই সময়ে পছন্দের খাবার খাব, ঘুমাব, বই পড়ব, টেলিভিশন, ওটিটি দেখব, খেলা দেখব—আপাতত এই পরিকল্পনা।
প্রশ্ন :
কিন্তু শিল্পী তো কাজের মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকতে চান...
আমি শিল্পী, আপনাকে কে বলল? আমাকে জোর করে শিল্পী করা হয়েছিল। আমি একজন মিস্ত্রি, আগাগোড়া মিস্ত্রি ছিলাম। আমার কাজ ছিল হাতুড়ি, স্ক্রুড্রাইভার, মাল্টিমিটার, সোলডারিং আয়রন এগুলো নিয়ে। সেখান থেকে জোর করে শিল্পী বানানো হয়েছিল। আমি শিল্পী নই।
প্রশ্ন :
কোনো অভিমান থেকে এই বিদায়?
কোনো অভিমান নেই। বুড়ো হয়ে গেছি। কোভিডে আক্রান্ত হয়েছি। আমি অসুস্থ। এবার আমি অবসর নিতে চাই।
প্রশ্ন :
আপনার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী?
সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করতে পারা।