একদিন বাড়ির বউ, তারপর মা হয়েছেন তাঁরা। তারও আগে ছিলেন বিনোদন অঙ্গনের প্রিয় মুখ, প্রিয় স্বর। সংসার আর পেশাজীবন—দুই মাঠেই ছক্কা হাঁকানো সেই নারীদের একজন কনকচাঁপা, দেশের গানের আকাশের জ্বলজ্বলে তারা তিনি।
বাংলা সিনেমার গানে কনকচাঁপা একটা অধ্যায়ের নাম। ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’, ‘তুমি আমার এমনই একজন’, ‘অনেক সাধনার পরে আমি’, ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’... কনকচাঁপার গলা থেকে বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখে সয়লাব হয়ে যাওয়া এসব গানের তালিকা দীর্ঘ।
কনকচাঁপার শিল্পীজীবন আর সংসারজীবন চলেছে হাতে হাত ধরে। ১৯৮৪ সালে তাঁর বিয়ে হয়েছে, সে বছর থেকেই তাঁর শিল্পীজীবন শুরু। বলা হয়, প্রতিটি সফল পুরুষের পেছনে নাকি একজন নারী থাকেন। এদিকে কনকচাঁপা তাঁর সফল ক্যারিয়ারের কৃতিত্ব দিলেন তাঁর জীবনসঙ্গী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক মইনুল ইসলাম খানকে। অবশ্য দুই পরিবারকেও দিলেন। তাঁরা তিন বোন। তাঁর বাবা কখনো তাঁকে ‘মেয়ে’ হিসেবে কিছুই শেখাননি। তিন মেয়েকে বড় করেছেন কেবলই মানুষ পরিচয়ে। বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে এসেও অব্যাহত সেই ধারা।
স্বামীর জন্য এক বাক্যে বললেন, ‘আমার স্বামী তার জীবনটা উৎসর্গ করেছে আমাকে শিল্পী হিসেবে গড়তে।’ এরপর আর কোনো কথা থাকে না। দুই সন্তানের মা হয়েও ব্যক্তিজীবন আর পেশাজীবনে সাফল্যের ধারা ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখার রহস্য জানতে চাইলে এই শিল্পী দিলেন হোমওয়ার্ক তত্ত্ব। বললেন, ‘প্রতিদিনের হোমওয়ার্ক প্রতিদিন করলে কিন্তু টিচারের মারও খেতে হয় না। পরীক্ষার আগের রাতে রাত জেগে পড়তেও হয় না। আমি কখনোই কোনো কাজ জমা রাখি না। যখনকার কাজ তখন করি।’
বিয়ের পর তারকাদের ‘স্টারডম’, ‘চাহিদা’ কমে যায়, এই তত্ত্বের সঙ্গে মোটেই একমত নন কনকচাঁপা। ‘কাজের মান কমলে দাম কমবে। বিয়ের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী?’ প্রশ্নের উত্তরে উল্টো প্রশ্ন করলেন এই শিল্পী। ‘সংসারে একেক কাজে একেকজনের নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়। কোনো কাজে হয়তো তাঁর স্বামী তাঁকে গাইড করেন। আবার রান্নাঘরে চলে তাঁর রাজত্ব। এটা ‘বসিং’ নয় বরং জরুরি’—বলেও যোগ করেন এই শিল্পী। বিয়ের পর ৩৬টি ক্যালেন্ডার বদলেছে কনকচাঁপা ও মইনুল সংসারে। তবে কনকচাঁপা মনে করেন, এই সময়ে দাঁড়িয়ে তাঁরা শুরুর দিনগুলোর চেয়ে একে অপরকে আরও বেশি করে ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন।