স্টুডিওতে শুরু হয়েছে টুকটাক রেকর্ডিং

বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য গান, টেলিভিশন আর ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য নাটক-সিনেমার ডাবিং, বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল প্রস্তুতের তাগিদে বেশি দিন বন্ধ রাখা যায়নি সংগীতের এই কারখানাগুলোকে। ইতিমধ্যে খুলে গেছে বন্ধ থাকা বাকি স্টুডিওগুলো। বড় পরিসরে না হলেও টুকটাক কাজ শুরু হয়েছে সেসব জায়গায়।

খুলতে শুরু করেছে ঢাকার স্টুডিওগুলোকোলাজ: আমিনুল ইসলাম

‘আমরা তো স্টুডিওতেই। আপনি কই?’ নিকেতনে নিজেদের স্টুডিও থেকে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন চিরকুট ব্যান্ডের ভোকাল শারমিন সুলতানা সুমী। এভাবে আড়মোড়া ভাঙতে শুরু করেছে স্টুডিওগুলো। লকডাউনে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সর্বত্র। সে সময় নানামাত্রিক সতর্কতা, জীবাণুনাশক স্প্রে, স্যানিটাইজার প্রস্তুত রাখা হতো গানের রেকর্ডিং স্টুডিওগুলোতে। লকডাউনের কিছুদিন পরই সেই ভীতি কেটে গেছে সেসব জায়গায় যাতায়াতকারী বেশির ভাগ শিল্পীর। বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য গান, টেলিভিশন আর ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য নাটক-সিনেমার ডাবিং, বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল প্রস্তুতের তাগিদে বেশি দিন বন্ধ রাখা যায়নি সংগীতের এই কারখানাগুলোকে। ইতিমধ্যে খুলে গেছে বন্ধ থাকা বাকি স্টুডিওগুলো। বড় পরিসরে না হলেও টুকটাক কাজ শুরু হয়েছে সেসব জায়গায়।

চিরকুট
ফেসবুক থেকে

সংগীত প্রস্তুতে একসময় ঢাকার স্টুডিওগুলো ছিল ভীষণ ব্যস্ত। কালে কালে বহু স্টুডিও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন শিল্পী ও সংগীত পরিচালকদের ঘরে ঘরে বসেছে হোম স্টুডিও। নিজেদের গান তৈরির পাশাপাশি অন্য শিল্পী ও সংগীত প্রযোজকদের কাজও করছেন তাঁরা। এখনো চালু রয়েছে বেশ কিছু বাণিজ্যিক স্টুডিও। কেবল গানের রেকর্ডিং করেই টিকে থাকতে পারছে না সেগুলো।

নিকেতনের ক্রাউন ডিজিটাল ল্যাব গান রেকর্ডিংয়ের পাশাপাশি নাটকও প্রযোজনা করে। ঈদুল আজহায় বেরিয়েছে তাদের প্রযোজনায় নির্মিত বেশ কিছু নাটক। এমনকি এখনো বিভিন্ন চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে সেগুলো। সেসবের মধ্যে রয়েছে চড়া তালুকদার, বনে ভোজন, ব্রিটিশ বুদ্ধি, হ্যাকড লাভ স্টোরি। স্টুডিওটির ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিব আহমেদ জানান হঠাৎ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা শঙ্কিত তাঁরা। আবারও হয়তো কিছুদিনের জন্য তাঁদের স্টুডিও বন্ধ রাখতে হবে। এরই মধ্যে বেশ কজন শিল্পীর নতুন গান রেকর্ডিং করে ফেলেছেন তাঁরা।

জিঙ্গেল, ডাবিং ও গানের রেকর্ডিং হয় ইকিউ মিউজিক স্টেশনে। নিয়মিত কাজ থাকায় লকডাউনের পর বেশি দিন ‘লক’ করে রাখা হয়নি স্টুডিওটি। তবে করোনার কারণে আগের মতো কাজের চাপ সেখানে নেই। স্টুডিওর প্রধান নির্বাহী ও সংগীত পরিচালক রিপন খান জানান, করোনার কারণে স্টুডিওতে কাজ কিছুটা কম। তবে নিয়মিত কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কাজ বাড়তে শুরু করবে বলে আশা করছি।’

ফোকাস মাল্টিমিডিয়া
সংগৃহীত

ইউটিউবভিত্তিক নানা প্রযোজনার রেকর্ডিং চলছে ফোকাস মাল্টিমিডিয়ায়। এ ছাড়া চলচ্চিত্র ও নাটকের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে এখানে। যদিও কাজের পরিসর নিয়ে ততটা সন্তুষ্ট নন প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা। মূলত সিনেমার কাজ নিয়ে একসময় ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাত স্টুডিওটি। স্টুডিওর মহাব্যবস্থাপক আব্দুল সাত্তার বলেন, ‘ভাড়া ও অন্যান্য হিসাব মিলিয়ে মাসে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। ইউটিউবের কাজ দিয়ে সেই খরচ ওঠে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যদি সিনেমার কাজ শুরু হয়, তখন হয়তো আবারও চাঙা হবে স্টুডিও।’

স্টুডিও ব্যবসা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই। অনেকেই মনে করেন, স্টুডিও ব্যবসা আগের মতো আর কখনোই চাঙা হবে না। কারণ, এখন ঘরে ঘরে স্টুডিও, আর বিদেশে বসেও অনেকে স্টুডিও রেকর্ডিংয়ের কাজ করছেন। স্টুডিও বাজনার প্রধান দিলশাদ হোসেন বলেন, ‘বহু স্টুডিও বন্ধ হয়ে গেছে, ধীরে ধীরে বাকিগুলোও হবে। দেশে স্টুডিও ব্যবসা আর আগের মতো হবে না।’

হতাশা ও আশাবাদের পাশাপাশি কমবেশি কাজ নিয়ে তবু স্টুডিও চালিয়ে নিচ্ছেন পরিচালকেরা। করোনার থাবা পড়েছে এ ব্যবসার ওপরও। তবু কাজ চালিয়ে যাচ্ছে হানড্রেড মাইলস, তান রেকর্ডিং স্টুডিও, প্রমিক্স স্টুডিও, স্টুডিও গান, ভেলোসিটি, অধ্যায় মিউজিক, বাটার কমিউনিকেশনসসহ ঢাকার বেশ কিছু স্টুডিও।