তরুণদের কাছে সুবীর নন্দী
সুবীর কাকু ছিলেন শুদ্ধ সংগীতের মানুষ
সুবীর নন্দী ছিলেন প্রিয়াঙ্কা গোপের সংগীতজীবনের প্রেরণা। নজরুলসংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিতি ও সমাদর রয়েছে প্রিয়াঙ্কার। তিনি সংগীতকে এখনো বুঝতে চেষ্টা করেন প্রয়াত খ্যাতিমান গায়কের সৃষ্টি কালজয়ী গান ও জীবনবোধ দিয়ে। আজ সুবীর নন্দীর প্রয়াণের দ্বিতীয় বছর। প্রিয় এই সংগীতশিল্পীর অবদানকে নানাভাবে স্মরণ করলেন প্রিয়াঙ্কা।
সুবীর নন্দীর সঙ্গে অনেক আগে থেকে পরিচয় প্রিয়াঙ্কা গোপের। কেবল তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হওয়া নয়, পেয়েছেন প্রেরণা। প্রিয়াঙ্কা জানান, একজন নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সুবীর নন্দীর গান সেই অর্থে খুব একটা গাওয়া হয়নি। তবে তাঁর সুর করা বেশ কিছু গজল আছে, যেগুলো এখনো নানা উৎসবে গেয়ে থাকেন। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘সংগীতে আমার প্রেরণার অনেক বড় উৎস সুবীর কাকু (সুবীর নন্দী)। তিনি ছিলেন শুদ্ধ সংগীতের মানুষ। সংগীতের খুঁটিনাটি ছিল তাঁর জানা। প্রায় সব শাখার সমস্ত কিছু তাঁর শেখা এবং আয়ত্তে ছিল বলে সেই প্রভাবটা পড়ত গানে। এটাই আমাকে সবচেয়ে বড় উৎসাহ জোগাত। আমি বুঝে নিয়েছি, আমাকেও জেনে-বুঝে গান করতে হবে।’
সুবীর নন্দীর গাওয়া হাইবিট বা লো-সফট মেলোডি বা স্যাড, যেকোনো গানেই ক্ল্যাসিক একটা টোন সব সময় থাকত। সেসব গান শুনে এখনো নিয়মিত শেখার চেষ্টা করেন প্রিয়াঙ্কা গোপ। তিনি জানান, সুবীর নন্দী নজরুলসংগীত গাইতেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীতও গাইতে শুনেছেন তাঁর কণ্ঠে। সুবীর নন্দী তাঁকে বলতেন, আধুনিক গানে চলে আসার পর নজরুলসংগীতে খুব একটা সময় পাওয়া যায় না। তখন আধুনিক গানের গায়ক হিসেবেই তাঁকে অনুরোধের গান করতে হতো। সুবীর নন্দী তাঁকে বলতেন, সংগীতের বিভিন্ন শাখায় কিছুটা হলেও বিচরণ করতে। প্রিয়াঙ্কা গোপ বলেন, ‘সর্বোপরি কাকু ছিলেন সংগীত জানেওয়ালা একজন মানুষ। বেঙ্গল থেকে যখন আমার গানের সিডি বের হতো বা পয়লা বৈশাখে আমার কিছু গানের অনুষ্ঠানে কাকুকে পেয়েছি উপস্থাপক হিসেবে। এখানেও তিনি জেনেশুনে আসতেন। এই স্ট্যাডিটা এখন কাউকে করতে দেখি না। একজন শিল্পীকে উপস্থাপনার সময় তাঁকে নিয়ে কিছু কথা বলা, গান পরিবেশনের আগে ও পরে একজন শিল্পীকে কীভাবে উৎসাহ দিতে হয়, সেটা তিনি জানতেন। সুবীর কাকুর উপস্থাপনাও মুগ্ধ হয়ে শুনতে ইচ্ছে করত।’
বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী দীর্ঘ ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিলেন তিনি। সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে তাঁকে দেওয়া হয় একুশে পদক। এই সংগীতশিল্পীর যাপিত জীবনটাকেই অনুপ্রেরণা মনে করেন প্রিয়াঙ্কা গোপ। তিনি বলেন, ‘কাকুর জীবনটাকে জানা প্রতিটি সংগীতশিল্পীর জন্য একটা শিক্ষা। তাঁর সংগীত, জীবনবোধ থেকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা পাই। সর্বক্ষেত্রে সফল এই মানুষটার কাছ থেকেই সংগীতকে বুঝে এই পেশায় আসার শক্তি পেয়েছি।’