লকডাউনের ঈদেও বেরিয়েছে একগুচ্ছ গান
ঈদ উপলক্ষে সব সময়ই আলাদা রকম ব্যস্ততা থাকে সংগীতাঙ্গনের মানুষদের। গানের সঙ্গে যুক্ত সবাই ঈদে নতুন গান উপহার দিতে চেষ্টা করেন শ্রোতাদের। করোনা মহামারির লকডাউনে সেই ব্যস্ততা কিছুটা কম ছিল। তবু ঈদের গান নিয়ে খুশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বলা চলে, বেশ সবর ছিল সংগীতাঙ্গন। তবে লকডাউনে একাধিক স্টুডিও বন্ধ থাকায় এবার মুক্তি পাওয়া গানের সংখ্যা তুলনামূলক কম। এর মধ্যেও ভক্ত-শ্রোতাদের জন্য নতুন গান গাইতে পেরে আনন্দিত শিল্পীরা।
ঈদুল ফিতরে নতুন গান প্রকাশ করেছেন ফাহমিদা নবী, আসিফ, সালমা, মিনার, কণা, ইমরান, আগুন, পড়শি, কোনালসহ অনেক শিল্পী। একক ও দ্বৈতকণ্ঠে আসিফের প্রকাশিত হয়েছে ১৪টি গান। সেগুলোর মধ্যে ‘নুনের ছিটা’, ‘মন শোনে না কথা’ গান দুটির জন্য বেশ প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি। তবে আসিফ বলেন, ‘সাড়া নিয়ে আমি ভাবি না। কারণ, একটা গান ভালো হলেও মানুষ এখন শুনছে না। কিন্তু একসময় ঠিকই গানটি খুঁজে নেবেন। অনেকেই ভিউ নিয়ে কথা বললেও আমার কাছে গানের শিল্পমানটা গুরুত্বপূর্ণ। শৈল্পিক দিকগুলো মাথায় নিয়েই আমি গান করি। আশা করি, গানগুলো আমার শ্রোতাদের কাছে আস্তে আস্তে পৌঁছাবে।’
অনেক দিন পর সাউন্ডটেক থেকে প্রকাশিত হয়েছে মিনারের গান। ‘কথাগুলো’ শিরোনামে গানটি নিয়ে ফেসবুকে এক শ্রোতা মন্তব্য করেছেন, ‘মিনার ভাইয়ের গানের কথা অসম্ভব সুন্দর। তার প্রতিটা টানেই যেন মায়া। তার গানের সুর যেন অনুভূতিতে নাড়া দিয়ে যায়।’
সালমার মুক্তি পেয়েছে সর্বাধিক নতুন গান। ৫টির বেশি চ্যানেলে ২৫টির মতো গান প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। এর মধ্যে ‘রাইতে চান’, ‘মায়া লাগে’, ‘পরদেশি’, ‘পিরিত বড় জ্বালা’, লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘কোনো কিছু বলো না’সহ বেশ কিছু গান প্রশংসিত হয়েছে। ঈদের গানগুলো নিয়ে সব সময়ই আশাবাদী থাকেন তিনি। একসঙ্গে এত গান প্রসঙ্গে সালমা বলেন, ‘আমার আগের ১০০ গানের মধ্যে ১০টি জনপ্রিয় গান রয়েছে। এখন গান বেশি গাইলেই এর মধ্যে কিছু গান শ্রোতারা পছন্দ করবেন। এক ঈদে ২৫টি গান মানেই যে ইমেজ খারাপ হবে, তেমনটা ভাবছি না। করোনায় আমাদের অঙ্গনে অনেকের কাজ নেই। সেই জায়গা থেকে ভাবছি, আমি কাজ করলে অনেকেই কিছুদিন চলতে পারবেন। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে পারিশ্রমিক কমিয়ে ঈদে গান করেছি। ’
ঈদে গান প্রকাশের প্রধান মাধ্যম এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। গানকে কেন্দ্র করে ঈগল, সাউন্ডটেক, জি সিরিজসহ বহু ইউটিউব চ্যানেল বাণিজ্যিকভাবে অর্থ লগ্নি করছে। এসব চ্যানেল প্রায় ৪০০ নতুন গান প্রকাশ করেছে ঈদে। জি সিরিজ থেকেই এসেছে শতাধিক। করোনার মধ্যে গানের শ্রোতা নিয়ে খুশি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হক ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘ঈদের গান নিয়ে সব সময় আমাদের আলাদা একটি পরিকল্পনা থাকে। এর মধ্যে করোনা চলছে। ঘরবন্দী মানুষ আমাদের গান শুনছে, এতেই আমরা খুশি। আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, সেটা পূরণ হবে। অডিও, মিউজিক ভিডিও এবং নাটকের অনেক গান নিয়েও আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি।’
এই ঈদে প্রকাশিত গানের সংখ্যা যদিও গত বছরের তুলনায় কম। ঈদে নিয়মিত গান প্রকাশ করেন কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। এবার তিনি কোনো গান প্রকাশ করেননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি গান করেছিলাম, কিন্তু রিলিজ দিইনি। করোনার মধ্যে ভিডিওটাও করতে পারিনি। সব মিলিয়ে মনে হয়েছে, করোনার এমন পরিস্থিতিতে মানুষ গান শোনার অবস্থায় নেই। মানুষের মন ভালো থাকলেই গান শুনবে। পরিস্থিতি যদি ভালো থাকে, তাহলে আগামী ঈদে রিলিজ দেব।’ কণ্ঠশিল্পী আগুন ও প্রতীক হাসান জানান, ঈদে একাধিক গানের প্রস্তুতি থাকলেও গানগুলো তাঁরা করেননি।
অনেক শিল্পীর ব্যস্ততা ছিল ঈদের নাটকের গান নিয়ে। মাহতিম শাকিব, কনা, কর্নিয়া, বেলাল খান, মার্শেলসহ অনেক কণ্ঠশিল্পী নাটকে গান করেছেন। এর মধ্যে ‘তাকে ভালোবাসা বলে’, ‘ভাই আমার দুনিয়া’, ‘প্রেম গল্প’, ‘মনের মত বাগান’সহ বেশ কয়েকটি গান প্রশংসিত হয়েছে। এদিকে ‘অন্য রকম খুন’, ‘কথা দে’সহ বেশ কিছু সংগীতচিত্র প্রকাশিত হয়েছে ঈদে। ‘অন্য রকম খুন’ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন জয় শাহরিয়ার। ঈদে তার আরও তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘একটি গানের সংগীতচিত্র আকারে প্রকাশ পেয়েছে। গানটি থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।’
এ ছাড়া বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে কণ্ঠশিল্পী সুজিত মোস্তফা, তানভীর হোসেন প্রবাল, কাজী শুভ, কোনাল, রন্টি দাস, ঐশী, ইমরান, কনা, আরমান আলিফ, কিশোর পলাশ, লায়লাসহ অনেক শিল্পীরই গান প্রকাশিত হয়েছে অনলাইনে।