প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী থেকে বঞ্চিত শিল্পীরা

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির আর্ট গ্যালারি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে বক্তব্য দেন গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী

৫০ বছর ধরে গীতিকবি, সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পীরা প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। জীবনের শেষ দিকে এসে দুরবস্থায় পড়েন। অবহেলার শিকার হন। শিল্পীরা যখন গান লেখেন, সুর করেন, কণ্ঠ দেন; তখন সেটা আর ওই শিল্পীর থাকে না। গানটা হয়ে যায় লেবেল কোম্পানির। গানটা রেডিও, টেলিভিশন, ইউটিউবসহ নানা জায়গায় বাজে। অন্যান্য দেশে এর মাধ্যমে শিল্পীরা সম্মানী পান। কিন্তু এ দেশে সেটি হয় না।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘সংগীতের জাতীয় উৎসব ও সম্মেলন ২০২২’ আয়োজন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসে দেশের গুণী শিল্পীরা এসব হতাশার কথাই শোনালেন। চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির আর্ট গ্যালারি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ’ নামের সংগঠন। আজ শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সংগীতের এই জাতীয় উৎসবের উদ্বোধন হবে। গতকাল সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, নকীব খান, অর্থ ও দপ্তর সচিব আসিফ ইকবাল, সাংস্কৃতিক সচিব বাপ্পা মজুমদার, প্রচার ও প্রকাশনা সচিব জুলফিকার রাসেল, নির্বাহী সদস্য কবির বকুল ও জয় শাহরিয়ার। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংগঠনের তথ্যপ্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সচিব হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল।

শুরুতে বক্তব্য দেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। তিনি বলেন, শিল্পীদের বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়া নানা সময়ে প্রস্তাবনা আকারে সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। তাই দাবি আকারে এসব চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরা হচ্ছে। আর এ কারণেই সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। এ দেশে শিল্পীরা অবহেলার শিকার হন। শিল্পী নৈতিক ও আর্থিক প্রাপ্য যথাযথভাবে পান না। রেডিওতে যখন কোনো গান বাজানো হয়, তখন শিল্পীর নাম বলা হয়, সুরকারের নাম বলা হয় না, লেখকের নামও বলা হয় না। কিন্তু এটি বলতে হবে।’ চট্টগ্রামের শিল্পীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, একতাবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। একতাবদ্ধ হয়ে শিল্পীদের দাবি-দাওয়া আদায় করে নিতে হবে।
শিল্পী নকীব খান জানান, সংগীতের সার্বিক মান উন্নয়ন, সম্মান ও সম্মানীর জন্য একসঙ্গে লড়াই করার প্রত্যয় নিয়েই সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে। মূলত গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ, মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটি বাংলাদেশ ও সিঙ্গার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ—এ তিন সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে সংগীত ঐক্য তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির আর্ট গ্যালারি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ’ নামের সংগঠন

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চট্টগ্রামে শুক্রবার উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সংগীত পরিবেশন করবে কুমার বিশ্বজিৎ, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল, জয় শাহরিয়ার, রেনেসাঁ, দলছুট ও সোলস। এ ছাড়া চট্টগ্রামের গুণী শিল্পীদের পরিবেশনাও থাকবে। অন্যদিকে ২৪ জুন সিলেটের কবি নজরুল মিলনায়তনে ও আগামী ১ জুলাই বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীতের জাতীয় উৎসব হবে। তবে মূল অনুষ্ঠান হবে ঢাকা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে, ১৬ জুলাই। সেখানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে শিল্পীরা উপস্থিত হবেন।

‘সম্মানী বাড়াতে হবে’

সম্মেলনে গীতিকবি, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীদের তৈরি করা বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন বাপ্পা মজুমদার। এসব প্রস্তাব মূলত সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, কপিরাইট অফিসসহ সরকারি নানা দপ্তরের কাছে পেশ করার জন্য তৈরি করা হয়। এর মধ্যে আছে গীতিকবি, সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পীদের সংগঠনের জন্য পৃথক অফিস বরাদ্দ, সংগীত ক্লাবের জন্য স্থান বরাদ্দ ও নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া। এ ছাড়া আছে দেশের সংগীতে বিশেষ অবদানের কথা বিবেচনা করে তিন সংগঠনের সুপারিশক্রমে প্রতিবছর সংগীতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ঘোষণা করা ও প্রচলনের সুবিধার্থে ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া, সরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলে গীতিকবি, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীদের সম্মানী বৃদ্ধি করা, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতিবছর শুধু সংগীতের সব শাখার গুণী ব্যক্তিদের জন্য জাতীয় পদক ও পুরস্কার চালু, সংগীতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করা, সংগীতের জন্য পূর্ণাঙ্গ মিলনায়তন তৈরি করা, বাংলা সংগীতের জন্য আলাদা ক্যাটালগ তৈরি করা প্রভৃতি।