তিনি দারুণ, আধুনিক ও কাব্যিক: শম্পা রেজা
‘আমায় ডেকো না ফেরানো যাবে না’, ‘রুপালি গিটার’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে’, এমন অসাধারণ সব গানের গীতিকবি গত মঙ্গলবার রাতে অনন্তের পথে পাড়ি দেন। গতকাল বুধবার তাঁকে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
গুণী এই গীতিকবির বেশ কিছু গান গেয়েছেন অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী শম্পা রেজা। গতকাল বুধবার যোগাযোগ করা হয় শম্পা রেজার সঙ্গে। স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, কাওসার ভাই (কাওসার আহমেদ চৌধুরী) ও লাকী ভাইকে (লাকী আখান্দ্) সেই ১০ বছর বয়স থেকে চিনি। আমাদের ওল্ড ডিওএইচএসের বাসায় আড্ডার ছলে তো আমরা কত মজার মজার গান বানিয়েছি। ইট ওয়াজ মিউজিক লাইফ, যেটা বলে আরকি। আমাদের এমন আড্ডা হতো, একটা পরিবারের মতো হয়ে যাই। তাই তো স্বাভাবিকভাবে লাকী ভাই ও কাওসার ভাই আমার মামণিকে মামণি ডাকতেন, বাবাকে বাবু ডাকতেন—আমরা যে রকম ডাকতাম। অন্য রকম একটা ব্যাপার ছিল আমাদের।
শম্পা রেজা একটা সময় নিয়মিত গান করতেন। খুব অল্প বয়সে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা গান গেয়েছেন তিনি। স্মৃতিচারণা করে শম্পা রেজা আরও বলেন, ‘কাওসার ভাই আমার প্রচণ্ড প্রিয় একজন মানুষ। খুব ছোট্টবেলা থেকে আমি তাঁর ব্যাপারে কিউরিয়াস ছিলাম। তাঁর ভাবনা-চিন্তা, ভাষার ভঙ্গি, গান রচনা তো বাদই দিলাম—তিনি যে কী ভালো ছবি আঁকতেন। এখনো ডায়েরি খুঁজলে পেলে কাওসার ভাইয়ের ছবি পাব।
তিনি বলেন, ‘১২-১৩ বছর বয়সে তাঁর লেখা প্রথম গান গাই। ‘ওই চোখ তুলনাবিহীন’ গানটি গাওয়ার অনেক পরে জানতে পারি, এটি আমাকে নিয়ে লেখা হয়। ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘আমায় ডেকো না’, এই গানগুলোর জন্মও আমার সামনেই। কাওসার ভাই যখন এসব লিখেছেন, তখন আমার বোঝার মতো বয়স ছিল না। আমি শুধু তাঁদের গান শুনে পাগল হতাম। আমার বাসায় বসে যে আমাকে নিয়ে লিখছেন, টেরই পেতাম না। আমাদের ওল্ড ডিওএইচএসের বাসার ছাদে কত আড্ডা। খুবই অসাধারণ সৃষ্টিশীল মানুষ তাঁরা। আমার সৌভাগ্য যে তাঁদের সঙ্গেই আমি বড় হয়েছি। আমাদের এই সম্পর্ক সংগীতের সম্পর্ক, সেই সম্পর্ক সব সময় ছিল।’
শেষ কবে কথা হয়েছিল, জানতে চাইলে শম্পা রেজা বলেন, ‘বছর চারকে আগে কাওসার ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। এরপর তাঁর ছেলে প্রতীকের কাছ থেকে বাবার খোঁজখবর নিতাম।’
আমার পুরো জীবনে কাওসার ভাইয়ের লেখা পাঁচ-ছয়টি গান গেয়েছি। গীতিকবি হিসেবে তিনি তো দারুণ। এত আধুনিক। এত কাব্যিক। তাঁর লেখা ‘ওগো বসন্ত বান্ধবী মোর’ গানটি তো আমার এত প্রিয়, এত প্রিয়, বলে বোঝাতে পারব না। ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানটিও আমিই গেয়েছিলাম, বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি লাইভ অনুষ্ঠানে। ১৯৭৬-৭৭ সালে। আমার আজ একটা কথাই মনে হয়, আগে আমাদের সাংস্কৃতিক জগৎটা অনেক আধুনিক ছিল। যত দিন গেছে, আমরা সবাই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি, জানার আগ্রহের চেয়ে নিজেদের জাহির করার প্রবণতা জেঁকে বসে। আমরা ভুলে গেছি, আমাদের কবিতা পড়তে হবে, গল্প-উপন্যাস ও দেশ-বিদেশের ভালো লেখা পড়তে হবে। চমৎকার চলচ্চিত্র দেখতে হবে, গান শুনতে হবে, পেইন্টিং দেখতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে সাংঘাতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।