চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি
ক্যানসারের কাছে হেরে প্রাণ হারানো ছোট্ট এক মেয়ের নাম শিফা। তার ও তার ভাইয়ের সংগ্রামের গল্প নিয়ে গান বেঁধেছেন প্রীতম হাসান। গানের কথা লিখেছেন রাকিব হাসান। ৯ সেপ্টেম্বর গানচিলের ইউটিউব চ্যানেলে ওঠা গানটি মুক্তির দুই দিন পরও আছে বাংলাদেশ অংশের ‘ট্রেন্ডিং’ তালিকায়। গানের সাফল্যের সূত্র ধরেই কথা হলো প্রীতমের সঙ্গে।
প্রশ্ন :
‘ভেঙে পোড়ো না এভাবে’ গানটি থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
অনেকের কাছ থেকে অনেক অনুপ্রেরণাদায়ক সাড়া পাচ্ছি। তাহসান ভাই, জন কবির ভাইসহ ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই গানটি ফেসবুকে শেয়ার করায় তাঁদের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। এটা আমার জন্য এক বিশেষ প্রাপ্তি। গানটি শুনে সবাই শিফার (যার জীবনের গল্প অবলম্বনে গানটি তৈরি) জন্য প্রার্থনা করছে, তাকে মনে করছে, এই ফিডব্যাকগুলো পেয়ে ভালো লাগছে।
প্রশ্ন :
গানের কথা, সুর, ভিডিও—সব নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। সবার আগে কোন পরিকল্পনা থেকে গানটির কাজ শুরু হয়—গল্প, সুর, নাকি গানের কথা?
গানের সুর অনেক আগে থেকেই আমার কাছে তৈরি ছিল। ক্যানসারের সঙ্গে শিফা, তার ভাই সৌরভ আর তাদের পরিবারের গল্প যখন শুনি, তখন গানের কথাগুলো সেই গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে লেখা হয়। পাঁচবার পুরো গান ভেঙে আবার লিখতে হয়েছে। শেষ দফায় আমরা গানে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে অনেক বড় অনুপ্রেরণা পেয়েছি কবি জসীমউদ্দীনের ‘কবর’ কবিতা থেকে।
প্রশ্ন :
যে গল্পটা ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, সেটা খুঁজে পেলেন কীভাবে?
মূল গল্পটা শিফার ভাই সৌরভের কাছ থেকে শোনা। কিন্তু মিউজিক ভিডিওর জন্য কিছু অংশ আমাদের নিজেদের মতো করে লিখতে হয়েছে। আমি নিজে মিউজিক ভিডিওর জন্য পুরো গল্পটা লিখে ভিডিওর নির্দেশক ভাস্কর জনি ও একে পরাগ ভাইকে দিই। তারপর তাঁরা ও পুরো ভিডিও টিম দারুণভাবে গল্পটিকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন।
প্রশ্ন :
যার পরিবারের গল্পটা গানে তুলে ধরেছেন, তাদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল গান শুনে ও দেখে?
পুরো পরিবার গানটি শুনেছে ও দেখেছে। শিফার পরিবার, বিশেষ করে ওর ভাই ভীষণ খুশি। সৌরভের জন্য এই গান তাঁর একটা মুক্তির পথ। শিফার লড়াইয়ের গল্পটা আগে হয়তো ১০০ জন জানত। এখন এই গানের মধ্য দিয়ে তাঁর বোনকে দেশের অন্তত ১০ হাজার জন চিনবে, মনে রাখবে, শিফার জন্য দোয়া করবে। এটুকুতে শিফার পরিবার আনন্দিত। তাঁরা শুধু সবার কাছে শিফার জন্য দোয়া চান।
প্রশ্ন :
এই গান মুক্তির পর পাওয়া সবচেয়ে স্মরণীয় প্রতিক্রিয়া কার ছিল?
গানটি তৈরির পর আমি যখন এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গানচিলের প্রধান আসিফ ইকবাল ভাইকে শোনাই, আমি তখনকার মুহূর্তের কথা বলব। তিনি ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন, চোখ ভিজে গিয়েছিল তাঁর। এমনকি গানের ভিডিও তৈরির সময় আমরা সম্পাদনার টেবিলে বসে নিজেদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। শিফার যে ভিডিওগুলো ওর ভাই সৌরভ আমাদের দিয়েছিল, সেগুলো যতবার দেখেছি, ততবার আমাদের পুরো টিম আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিল। আমরা ভিডিওটা তৈরির কথা সৌরভকে জানিয়েই শুরু করেছিলাম। কিন্তু ওকে ভিডিওটা দেখিয়েছি একেবারে শেষে, সব কাজ শেষ হওয়ার পর। পুরো ভিডিও দেখে সৌরভের যে অভিব্যক্তি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
প্রশ্ন :
আপনার জীবনে ভেঙে পড়ার মুহূর্তের গল্প শুনতে চাই।
মূলত বাবার (প্রয়াত সংগীতশিল্পী খালিদ হাসান মিলু) চলে যাওয়ার পরের সময়টা ছিল আমাদের জীবনের ভেঙে পড়ার মুহূর্ত। বাবা চলে যাওয়ার পর আমাদের অনেক ধরনের জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। অনেক অন্ধকার সময় পার করতে হয়েছে। সেই ভেঙে পড়ার মুহূর্ত থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটাই আসলে মনে রাখার মতো। আমি মনে করি, আজকের এই ‘ভেঙে পোড়ো না এভাবে’ গানের পেছনে এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পের একটা অবদান আছে।
প্রশ্ন :
‘আসো মামা হে’, ‘বিয়াইন সাব’, ‘খোকা’, ‘আমি আমার মতো’, ‘ভেঙে পোড়ো না এভাবে’—আপনার প্রতিটি গানই সাড়া ফেলছে। নতুন গান করতে গেলে আগের গানের সাফল্য কি আপনার ওপর চাপ তৈরি করে? সেই চাপ কীভাবে কাজে লাগান?
অনেক চাপ বোধ করি। কারণ, একটা গানের পেছনে, গানের ভিডিওর পেছনে অনেক বিনিয়োগ করা লাগে। সেই বিনিয়োগ তুলে আনার দায়িত্ব থাকে আমাদের ওপর। এই করোনার সময়ে তো চাপ আরও বেশি ছিল। যদিও আসিফ ইকবাল ভাই ‘ভেঙে পোড়ো না এভাবে’ গানের জন্য অনেক সাপোর্ট দিয়ে গেছেন। কিন্তু নিজের আগের গানের সাফল্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার জন্য বাজেটের পাশাপাশি অনেক পরিকল্পনা, নতুন চিন্তা আর অনেক সময় লাগে।
প্রশ্ন :
এরপর কী নিয়ে কাজ করছেন?
১৫টার মতো গান আছে হাতে। এখন সময় বুঝে, কোন গানকে কীভাবে উপস্থাপন করা যায়, সেটার পরিকল্পনা করে এগোতে চাই। কিছু গান নিজের চ্যানেল থেকে প্রকাশ করতে চাই, কিছু চাই গানচিল থেকে ছাড়তে, অন্য কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চাইলে তাদেরও দিতে পারি। তবে অবশ্যই গানের উপস্থাপন, কথায় বৈচিত্র্য, ভিন্নতা আর অভিনবত্ব রেখে তবেই তা প্রকাশ করব, এর আগে না।