২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

এবারের উৎসবে মন ভালো নেই কুমার বিশ্বজিতের

কুমার বিশ্বজিৎ
সংগৃহীত

করোনার আতঙ্কে জনজীবন বেহাল। তাই এবার দুর্গাপূজায় তারকাদের উচ্ছ্বাসে কিছুটা ভাটা পড়েছে। বিগত বছরের মতো নয়, এ বছর পূজার আনন্দ কিছুটা হলেও রংহীন। কেউ উদযাপন করবেন স্বল্প পরিসরে। কারও সময় কাটবে বাসায়। আর সুযোগ পেলে কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢুঁ মারবেন পূজামণ্ডপে।

সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের মনটা বেশিই খারাপ। করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আটকে আছেন এই সংগীতশিল্পীর স্ত্রী। ছেলে নিবিড়কে নিয়ে তিনি আছেন ঢাকায়। গত বছরের শেষ দিকে মাকে হারান তিনি। অনেক জনপ্রিয় বাংলা গানের এ শিল্পী বলেন, ‘ভাবলেই বুকটা আটকে আসে, মা নেই। মা ছাড়া পৃথিবী ভাবতেও পারিনি আগে। এই সময়ে যাঁদের প্রিয়জন চলে গেছেন, তাঁদের আত্মার প্রতি আমার শ্রদ্ধা।’
করোনার মধ্যে কাছের আত্মীয়দের মৃত্যুর খবরও তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এবারের পূজায় খুব একটা আনন্দ নেই কুমার বিশ্বজিতের মনে। তিনি বলেন, ‘বাসায় থাকব। নতুন জামাকাপড় পরব। মা নেই পৃথিবীতে, অর্ধাঙ্গিনী নেই দেশে, সবাই মিলেমিশে আনন্দ করতে না পারলে আনন্দই হয় না।’

কুমার বিশ্বজিতের দুর্গাপূজার স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে গ্রামের বাড়ি। এ শিল্পীর শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। শৈশবে গ্রামের বাড়িতে পূজার উদ্‌যাপন ছিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ঠাসা।

স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ

এখনো পূজার ঢাকের বাদ্য অনেক বেশি মিস করেন এই সংগীতশিল্পী। কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘আমার ছোটবেলা কেটেছে সীতাকুণ্ডে। তখন আমাদের এলাকায় হাটহাজারী থেকে একজন ঢাকবাদক আসতেন। তাঁর বাদ্য শুনে কোথায় যেন হারিয়ে যেতাম। কী সুন্দর বাজাতেন! এমনও হতো, ওই ঢাকবাদকের সঙ্গেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতাম। তাঁর সঙ্গেই খাওয়াদাওয়া করতাম। এখনো ঢাক দেখলে আমার বুক কেঁপে ওঠে।’
স্মৃতিচারণায় উঠে এল শৈশবের কথা। তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়েন। সেই বছরের দুর্গাপূজার সময়ের কথা মনে করলেন। সেবার মা-বাবার সঙ্গে গিয়েছিলেন কলকাতায়। বড় শহর। চারদিকে মানুষ আর মানুষ। সেদিন মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ হারিয়ে যান তিনি। অনেক কান্নাকাটি আর খোঁজাখুঁজির পর পেয়েছিলেন মাকে। তারপর থেকে পূজা উপলক্ষে দূরে কোথাও আর যাননি তিনি।

অনেক দিন ধরে খুব বেড়াতে ইচ্ছে করছে তাঁর। পাহাড়, নদী বা লেকের পাড়ে যেতে ইচ্ছা করছে কুমার বিশ্বজিতের। করোনা পেরোলে যাবেন, খোলা জায়গায় গিয়ে বুক ভরে শ্বাস নেবেন। তবে আপাতত সীমিত পরিসরে গান নিয়ে নিজের মতো ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

মা শোভা রাণী দের সঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ। ছবি: সংগৃহীত

এই দীর্ঘ ‍সংগীতজীবনে তিনি বাংলাদেশের শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন অনেক জনপ্রিয় গান। প্রকাশিত হয়েছে অনেক অ্যালবাম। তাঁর প্রকাশিত সেসব গান থেকে বেশ কিছু গান নতুন করে এই প্রজন্মের শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরতে চান তিনি। এই গানগুলোতে কম্পোজিশন, গায়কি থেকে শুরু করে নানা রকম পরিবর্তন থাকছে। এই সংগীতশিল্পী মনে করেন, করোনাকালে গানের যে সংকট চলছে, সেই সংকট কাটাতে এই গানগুলো কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে।

ইতিমধ্যে ৪৮টি গান রিমেক করার জন্য বাছাই করেছেন তিনি। এই সংখ্যা পর্যায়ক্রমে আরও বাড়বে। গানগুলো নতুন আঙ্গিকে তৈরি করা প্রসঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘অনেক ভালো গানের ভিড়ে হয়তো কিছু গান সেভাবে শ্রোতাদের সামনে আসেনি বা সাড়া ফেলেনি।

অথচ গানের কথা যেমন সমৃদ্ধ, সুরও শ্রুতিমধুর। নতুন করে ‘গতকাল ছিল তোমার জন্মদিন’, ‘তুমি ভুল করে এসেছিলে কি না জানি না’, ‘তুমি আনন্দ আশ্রম আমার মনে’, ‘দস্যু যেমন মুখোশ পরে’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘ও ডাক্তার’, ‘তুমি যদি বলো পদ্মা মেঘনা’, ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’, ‘তুমি রোজ বিকেলে’, ‘চতুর দোলাতে চড়ে ওই বধূ যায়’, ‘নির্বাসনে যাব না’, ‘চন্দনা গো’ প্রভৃতি গান পর্যায়ক্রমে নতুন আঙ্গিকে তৈরি হচ্ছে।

নিজের পুরোনো গান নতুন করে আনছেন কুমার বিশ্বজিৎ
কোলাজ

তাঁর ইচ্ছা একসঙ্গে পাঁচটি করে গানের কাজ শেষ করে মুক্তি দেবেন। আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে একটি অনলাইন চ্যানেলে গানগুলো পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হবে। এসব গানের মধ্যে বেশির ভাগই গীতিকবি লিটন অধিকারী রিন্টুর লেখা। আছে গোলাম মোস্তফা, সালাউদ্দিন সজল প্রমুখের লেখা গান। পুরোনো এই গানগুলোর বেশির ভাগেরই নেই মিউজিক ভিডিও। তিনি জানান, স্বল্প পরিসরে গানগুলোর ভিডিও তৈরির পরিকল্পনা আছে।