মাহতিমের গানে গানে ‘রবিযাপন’ কতটা জমল
‘বসন্তের মাতাল সমীরণে’র কথা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে/ বসন্তের এই মাতাল সমীরণে’। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর এই আহ্বানেই শ্রোতারা যেন সমবেত হন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট (কেআইবি) মিলনায়তনে। মাহতিম শাকিবের মিউজিক্যাল অডিও ড্রামা ‘রবিযাপন’ উপভোগের অপেক্ষায় মিলনায়তন পূর্ণ ছিল বিভিন্ন বয়সী শ্রোতায়। ‘রবিযাপন’–এ ‘চোখের বালি’ থেকে সংলাপ পাঠের পাশাপাশি রবীন্দ্রসংগীতের পরিবেশনা উপভোগ করেছেন দর্শকেরা।
মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট, বই, শোপিসে সুসজ্জিত একটি শেলফ (তাক) ও একটি সোফা দিয়ে সাজানো মঞ্চ। ঘড়িতে সন্ধ্যা ৭টা ৫৯ মিনিট হতেই ঘোষণা এল, মঞ্চে প্রবেশ করছেন আনিকা প্রিয়ন্তী।
তাঁর পরনে শাড়ি, একেবারে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে বর্ণিত কোনো চরিত্রের মতো করেই সেজেছিলেন তিনি। সোফায় বসে প্রিয়ন্তী ‘চোখের বালি’ থেকে পাঠ করতে শুরু করেন। পাঠের বিরতিতে ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছিল গল্পের বিভিন্ন চরিত্রের সংলাপ। সংলাপ শেষেই গানের সুর ভেসে এল, ‘বিকশিত প্রীতি কুসুম হে’, মঞ্চে সাদা আলোর উপস্থিতি বাড়তেই দেখা গেল, গাইছেন মাহতিম শাকিব। তালি আর চিৎকারে এই গায়ককে স্বাগত জানান দর্শকেরা।
‘চোখের বালি’ পাঠে ও আবহে চরিত্রগুলোর সংলাপের পাশাপাশি মাহতিমের কণ্ঠে ‘তোমার খোলা হাওয়ায়’, ‘ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে’, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি রবে নীরবে’ গানগুলো দারুণ উপভোগ্য ছিল। বিশেষ করে ‘তুমি নীরবে রবে’ গানটিতে তুলসী ঘোষ যখন মাহতিম শাকিবের সঙ্গে কণ্ঠ দিলেন, তখন এক মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’ রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত এই গান দিয়ে আয়োজনের প্রথম পর্ব শেষ হয়।
মাহতিমের গানের সঙ্গে ‘চোখের বালি’ থেকে সংলাপ পাঠে শিল্পীরা উচ্চারণশৈলী দিয়ে চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তুললেও কিছু কিছু জায়গায় ছন্দপতন হয়েছে। আয়োজনকে পাস নম্বর দিলেও রবীন্দ্রনাথের শূন্যতা অনুভব করেছেন বলে জানিয়েছেন উপস্থিত দর্শকদের কেউ কেউ। পরিবার নিয়ে এদিন ‘রবিযাপন’–এ এসেছিলেন ৬০ বছর বয়সী শফিক ইমাম। আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে “রবিযাপন” হলেও মঞ্চসজ্জায় রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি না থাকায় একটা শূন্যতা অনুভব করেছি শেষ পর্যন্ত। কলাকুশলীদের সাজসজ্জায় রবীন্দ্রঘরানার উপস্থিতি থাকলে আয়োজন আরও প্রাণবন্ত হতো। তবে সব মিলিয়ে আয়োজন ভালো লেগেছে। ওরা যথেষ্ট চেষ্টা করেছে।’
আয়োজনের দ্বিতীয় পর্ব সাজানো ছিল মাহতিম শাকিবের একক পারফরম্যান্সে। ঘণ্টাখানেক সময়ে এক ডজনের বেশি গান পরিবেশন করেন তিনি। ‘হারিয়ে তোমাতে’ গান দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন মাহতিম, এরপর একে একে শোনান, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা’, ‘তুমি জানতেই পারো না তোমায়’।
দর্শকের অনুমতি নিয়ে হিন্দি গান ‘লাগ জা গালে’ পরিবেশন করেন মাহতিম। এরপর ‘ওই ঝিনুক ফোটা’, ‘তোমায় হৃদ মাঝারে’, ‘দেখেছি রূপসাগরে’, ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’, ‘আমি কোথায় পাব তারে’ গান শোনান এই গায়ক। সবশেষ দুই গান ‘তোমার আকাশ দুটি চোখে’, ‘বাড়ির পাশে মধুমতী’ মাধ্যমে আয়োজন শেষ করেন মাহতিম।
‘রবিযাপন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ভাইনাল ইভেন্টস।