গীতিকার ও সংগীত সংগ্রাহক খাইরুল আলম মারা গেছেন
গীতিকার ও সংগীত সংগ্রাহক খাইরুল আলম মারা গেছেন। তিনি বাদল নামে পরিচিত ছিলেন। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে গত শনিবার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। এই গীতিকবির বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার বড়হাটি গ্রামে। তাঁর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ‘চন্দ্রবতী কথা’ সিনেমার পরিচালক এন কে রাশেদ চৌধুরী।
রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘তিনি দীর্ঘদিন ধরে লোকগান, মুর্শিদি গান, রামায়ণ গানের এক বিশাল সংগ্রাহক ছিলেন। এসব গানের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সহায়তা করতেন তিনি। বংশপরম্পরায় গায়কদের মধ্যে এসব গান যেন টিকিয়ে রাখা যায়, সেই চেষ্টা করেছেন। এ ছাড়া স্থানীয় লোকগানের শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। আমি অনেক দিন ধরে শুনে আসছিলাম “ডুরি ছিঁড়ে না” শিরোনামে একটি গান। আমার “চন্দ্রাবতী” সিনেমার কথা সিনেমায় ব্যবহার করেছি। আমি মনে করেছিলাম গানটি সংগৃহীত হবে। পরে জানতে পারলাম গানটি খায়রুল আলম ভাইয়ের। এমন অনেক গান তাঁর লেখা ছিল।’
হাওরের বুকে বেড়ে ওঠা এই গীতিকবির শৈশবে অসুস্থতা ধরে পড়ে। পরে দুই পা হারান তিনি। তারপরও দমে যাননি। সব সময় সংগীত নিয়ে থেকেছেন। বাঁশি বাজাতেন। সময় পেলেই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শিল্পীদের জড়ো করে গান করতেন।
এ ছাড়া ‘চন্দ্রাবতীর পালা’, ‘চাঁদ সওদাগর’, মনসামঙ্গলপালার অনেক গানের সুর ও উপস্থাপনা কেমন হবে, সেগুলোর সঠিকভাবে তাঁর জানা ছিল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এগুলো নিয়ে কাজ করেছেন। এই গানের চর্চা করতেন। তাঁর মৃত্যুতে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল বলে জানান, এন কে রাশেদ চৌধুরী।
রাশেদ চৌধুরী জানান, তাঁর সিনেমার জন্য যখন নানা তথ্য সংগ্রহ করছিলেন, তখন অনেক কিছুই বইতে লেখা থাকলেও সেগুলোর সুর–সংগীত কেমন হবে, তা জানতে হিমশিম খেতে হয় তাঁদের। পরে খায়রুল আলমের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।
রাশেদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘তাঁর জন্যই আমাদের সিনেমাটা করা অনেকটা সম্ভব হয়েছে। তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখায় জানতে পারলাম গ্রামের অভ্যন্তর থেকে তাঁর সংগ্রহে ছিল “চন্দ্রাবতী”র লেখা পালাগানের সুর ও তাঁর লেখা বারোমাসি গান, প্রায় অবিকৃত আদলে। তাঁর কাছ থেকেই গানগুলোর উপস্থাপনার ধরনটা আমাদের পাওয়া। তাঁর হাত ধরেই আমরা খুঁজে পাই খোকন বয়াতি, শংকরসহ অনেক স্থানীয় শিল্পীদের। যাঁরা সিনেমায় গান করেছেন, অভিনয় করেছেন। স্বশিক্ষিত এই পণ্ডিত যেন নিজেই এক লোকশিল্প জাদুঘর। তাঁদের ভারসার জায়গা ছিলেন খাইরুল ভাই। যিনি সব সময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে লালন করতেন।’