ওস্তাদ জাকির হোসেন আর নেই

২০১৫ সালে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে ওস্তাদ জাকির হোসেনফাইল ছবি: প্রথম আলো

কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

আজ সোমবার জাকির হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।

জাকির হোসেন দীর্ঘদিন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন বলে তাঁর ব্যবস্থাপক নির্মলা বাচানী এর আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। তিনি পিটিআইকে বলেন, ফুসফুসজনিত অসুস্থতার জন্য দুই সপ্তাহ আগে জাকির হোসেনকে সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

প্রথম আলো ও ট্রান্সকম গ্রুপের আয়োজনে ‘ওস্তাদ জাকির হোসেন সন্ধ্যা’য় জাকির হোসেনের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন লতিফুর রহমান। পাশে মতিউর রহমান। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১। ফাইল ছবি

এর আগে গতকাল রোববার রাতে জাকির হোসেনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শোক জানান। টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, এনডিটিভিসহ আরও বেশ কিছু ভারতীয় গণমাধ্যমও খবরটি প্রচার করে। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শোক প্রকাশের কথাও জানানো হয়।

জাকির হোসেন
ছবি: এক্স

পরে আমির আউলিয়া নামের একজন এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, তিনি জাকির হোসেনের ভাতিজা। জাকির হোসেন মারা যাননি। চাচার শারীরিক সুস্থতার জন্য তাঁরা সবার কাছে দোয়া চান।

আরও পড়ুন

এর পরপর ওস্তাদ জাকির হোসেনের বোন খুরশিদ আউলিয়া পিটিআইকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমার ভাই গুরুতর অসুস্থ। আমরা ভারত ও বিশ্বব্যাপী তাঁর সব ভক্ত-অনুরাগীর প্রতি তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া করতে অনুরোধ করছি।’

ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতের একজন পুরোধা হিসেবে বিবেচনা করা হয় জাকির হোসেনকে। কিংবদন্তি তবলাবাদক আল্লারাখার প্রথম সন্তান জাকির হোসেনের জন্ম ১৯৫১ সালে ভারতের মুম্বাই শহরে। ৩ বছর বয়স থেকে বাবার কাছে তবলায় তাঁর হাতেখড়ি। ১২ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে প্রথম কনসার্ট। সেই থেকে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ভারতজুড়ে। তিনি তাঁর বাদ্যশৈলীর মধ্য দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমের সংগীতজগৎকে খুব কাছাকাছি আনতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেন জাকির হোসেন। ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। শুরু হয় তাঁর আন্তর্জাতিক সংগীতাঙ্গনে বিচরণ। ১৯৭৩ সালে জর্জ হ্যারিসনের লিভিং ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড অ্যালবামে অংশগ্রহণ তাঁকে এনে দেয় এক বিরাট স্বীকৃতি। তার পর থেকেই বহু খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী যেমন জন ম্যাকলাফলিন, মিকি হার্ট, বিল ল্যাসওয়েল, ভ্যান মরিসন, জো হেন্ডারসনসহ আরও অনেকের সঙ্গে তবলা পরিবেশন করেন তিনি।

সংগীতে তাঁর কর্মজীবনের সিংহভাগজুড়ে রয়েছে ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীত। তবলায় তিনি সংগত করেছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, শিব কুমার শর্মা বা কত্থক নৃত্যশিল্পী বিরজু মহারাজকে। ১৯৯২ সালে জাকির হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন ‘মোমেন্ট রেকর্ড’৷ এর মাধ্যমে তিনি সংগীতানুরাগীদের উপহার দিয়েছেন ভারতের ধ্রুপদি সংগীতের খ্যাতিমান সেরা সংগীতশিল্পীসহ সমকালীন বিশ্বসংগীত। ২০০৬ সালে ‘মোমেন্ট রেকর্ড’–এর মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যালবাম ‘গোল্ডেন স্ট্রিং অব দ্য সরোদ’ গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, গ্র্যামি ছাড়াও আরও বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জাকির হোসেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’–এর অন্যতম সদস্য ছিলেন ওস্তাদ জাকির হোসেনের বাবা আল্লারাখা খান। স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওস্তাদ আল্লারাখাকে সম্মাননা জানাতে ২০১১ সালে প্রথম আলো ও ট্রান্সকম গ্রুপ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় আসেন জাকির হোসেন।