সন্‌জীদা খাতুনের এক জীবন

বর্ণাঢ্য জীবন তাঁর। তরুণ বয়স থেকেই যুক্ত হয়েছেন আন্দোলন-সংগ্রামে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ছিল অগ্রগণ্য ভূমিকা। ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁকে সবাই চেনেন, কিন্তু এ ছাড়া শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু এড়িয়ে সংগঠক, সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে তাঁর অবদান অসামান্য। সন্‌জীদা খাতুনের বর্ণাঢ্য জীবনের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম নিয়ে এই আয়োজন

সন্‌জীদা খাতুন। খালেদ সরকার

জন্ম: ৪ এপ্রিল ১৯৩৩।
পরিবার: বাবা জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন, মা সাজেদা খাতুন।
পারিবারিক নাম: বাবা কাজী মোতাহার হোসেন সন্‌জীদা খাতুনকে ছোটবেলায় আদর করে তোনালি (সোনালি) বলে ডাকতেন।
গানের গুরু: প্রথম গানের গুরু ছিলেন সোহরাব হোসেন। রবীন্দ্রসংগীত শিখেছেন হুসনে বানু খানমের কাছে। এরপর তিনি শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেনদের মতো বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীদের কাছে তালিম নেন।
প্রথমবার মঞ্চে: ঘরোয়া আসরের বাইরে প্রথমবার মঞ্চে গান করেছেন নারায়ণগঞ্জের এক অনুষ্ঠানে। গানটি লিখেছিলেন পল্লিগীতির শিল্পী হাসান আলী খাঁ।
পড়াশোনা: কামরুন্নেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।

পেশা: অধ্যাপনা। ইডেন কলেজ, কারমাইকেল কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা শেষে অবসরে যান।
আন্দোলন: শৈশবে শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে যোগ দিয়েছিলেন ব্রতচারী আন্দোলনে। কাজ করেছেন মুকুল ফৌজেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই ছিলেন সক্রিয়।
ছায়ানট প্রতিষ্ঠা: ১৯৬১ সালে পাকিস্তানি শাসকদের বাধা উপেক্ষা করে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন এবং তার সূত্র ধরে পরে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট গঠনে অনেকের সঙ্গে সন্‌জীদা খাতুন ছিলেন নেতৃস্থানে।

সহশিল্পীদের সঙ্গে রমনার বটমূলে গাইছেন সন্‌জীদা খাতুন। ছবি: সংগৃহীত

রমনার বটমূলে বর্ষবরণ: ১৯৬৭ সালের ১৫ এপ্রিল, রমনার বটমূলে ছায়ানট প্রথম আয়োজন করেছিল নববর্ষের প্রথম অনুষ্ঠানের। এরপর (১৯৭১ সাল বাদ দিয়ে) ছায়ানট রমনার বটমূলে এই নববর্ষের বড় অনুষ্ঠান সফলভাবে করে চলেছে। ২০০১ সালে নববর্ষের প্রভাতের এই অনুষ্ঠানে বড় রকমের জঙ্গি হামলা হলেও ছায়ানট বা সন্‌জীদা খাতুন এই অনুষ্ঠান থেকে সরে আসেননি। করোনার কারণে দুই বছর কেবল ভার্চ্যুয়ালি বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মার্চে রংপুর থেকে প্রথমে ঢাকায়, পরে সাভারের জিরাব গ্রাম থেকে আবার ঢাকা হয়ে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতের আগরতলা রাজ্যে পৌঁছান সন্‌জীদা খাতুন ও তাঁর সাংস্কৃতিক সহযোদ্ধারা। সেখানে কিছুদিন থেকে ৫ মে কলকাতায় প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে প্রবাসে সাংস্কৃতিক যুদ্ধ শুরু করেন তিনি।
বই: গবেষণা, সাহিত্য সমালোচনা, সমাজ-সংস্কৃতি, আত্মজীবনী মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা ২০–এর অধিক।
পুরস্কার: একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার। পশ্চিমবঙ্গ থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম, টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য, ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কার।

দাম্পত্য সঙ্গী: ওয়াহিদুল হক।
ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে পরিচয়: ভাইয়ের সূত্র ধরে ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল সন্‌জীদা খাতুনের। ওয়াহিদুলের বোন নারগিসকে গান শেখাতেন সন্‌জীদা। অতীত দিনের স্মৃতি বইয়ে সন্‌জীদা খাতুন লিখেছেন, ‘পরে আমি যখন বিনা নোটিসে পিত্রালয় ছেড়ে ওয়াহিদুলের মায়ের কাছে গিয়ে উঠেছিলাম, তখন আকস্মিক বিয়ের মালার ফুল ওই নারগিসই তুলে এনেছিল সিভিল এভিয়েশনের কোয়াটারস সংলগ্ন মাঠে মাঠে ঘুরে। ভাঁটফুল।’
সন্তান:  অপালা ফরহাদ নভেদ, পার্থ তানভীর নভেদ ও রুচিরা তাবাসসুম নভেদ।
মৃত্যু: ২৫ মার্চ, ২০২৫।

আরও পড়ুন